আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নিয়ে দুই পরিকল্পনায় এগোচ্ছে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। রোববারই তিনশ আসনে দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন হয়ে গেছে।

নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে দোলাচল চলছে। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না-এমন ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তবে আওয়ামী লীগ বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ ধরেই পরিকল্পনা সাজিয়েছে। আবার বিকল্প পরিকল্পনাও রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকদের মাথায়।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের চাওয়া নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হোক। সেক্ষেত্রে কাস্টিং ভোট বেশি দেখানো এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকসহ মহলের কাছে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক প্রমাণ করাই টার্গেট তাদের।

জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের জোটের পরিধি বাড়তে পারে এবং সেক্ষেত্রে দলীয় বা জোটের মনোনয়নও ভিন্নতর হবে।

বিএনপি এলে জোট-মহাজোট গঠন করে শক্তিশালী প্রার্থীদের রেখে দুর্বল প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখা হবে।

আর শেষ পর্যন্ত বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা নির্বাচনে না এলে বিগত নির্বাচনগুলোর মতো জোট-মহাজোটের পথে না গিয়ে সবাইকে এককভাবে নির্বাচনে নামাতে চায় আওয়ামী লীগ। এতে যেমন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, তেমনই জনপ্রিয় নেতারাই নিজ নিজ আসন থেকে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন।

দলীয় সূত্র বলছে, এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্নসহ শারীরিকভাবে অসুস্থ ও প্রবীণ বেশকিছু সংসদ-সদস্যকে। তাদের স্থানে জায়গা পেয়েছেন ক্লিন ইমেজ, জনগণের কাছে জনপ্রিয় এবং এলাকায় পরিচিত নতুন প্রার্থীরা। যদিও কারা বাদ পড়ছেন, তা নিয়ে অবশ্য কেউ মুখ খোলেননি। কারণ হিসাবে দলটির নেতারা বলছেন, বাদ দেওয়ার পরও অনেক সময় তাকেই প্রার্থী করা হয়, আবার ঘোষিত প্রার্থীকে বাদ দেওয়ার নজির আওয়ামী লীগের আছে। এ কারণে এবার কঠোর গোপনীয়তা রাখা হচ্ছে।

এছাড়া বিএনপি নির্বাচনে না এলে কোনো আসনে যেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত না হয় সেদিকে নজর রাখছে দলটি।

যেমনটি ফুটে উঠেছে রোববার সকালে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সামনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তৃতায়। তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কেউ বিনা ভোটে (প্রতিদ্বন্দ্বিতায়) নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।

দ্বাদশ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার তাগিদ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাশ করে আসতে পারবেন না। অন্য দলের প্রার্থী না থাকলে প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে।

সূত্রমতে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা অন্যান্য দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকেও সহযোগী ও উৎসাহ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী জানান, দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যে কোনো নেতা বা যে কোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবে বলে নির্দেশনা দিয়েছেন সরকার প্রধান।

আরেক প্রার্থী জানান, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে প্রয়োজনে ডামি প্রার্থী রাখতে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। একইসঙ্গে নির্বাচনের সময় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতেও নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

নৌকার মনোনয়ন বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নতুন ও পুরোনো মিলিয়েই আমরা এবার মনোনয়ন দিচ্ছি। যেখানে পুরোনোরা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে নতুন করে আমাদের ভাবতে হবে। যাদের জনপ্রিয়তা আছে, তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা যায়, ৩০০ আসনেই দলের একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলেও সবাই যে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন তা নয়। জোট-মহাজোটের হিসাবের অঙ্কে সমঝোতা হলে যেসব আসন শরিক ও মিত্রদের ছেড়ে দেওয়া হবে, সেসব আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

এ কারণেই চূড়ান্ত প্রার্থীদের মাঝে দলের প্রধান শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত নৌকা প্রতীক বরাদ্দের চিঠির সঙ্গে দলীয় মনোনীত সব প্রার্থীর কাছ থেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের একটি করে চিঠিও নেওয়া হতে পারে। যাতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কোনো প্রার্থীই বিদ্রোহ করে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারেন।

জানা যায়, বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করেছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সবশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৯টি আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। এছাড়া ১৪ দলীয় জোট শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি ৫, জাসদ (ইনু) ৩, জাতীয় পার্টি (জেপি) ২, জাসদ (আম্বিয়া) ১ এবং তরিকত ফেডারেশনকে দুটি আসন দিয়েছিল। আসন ভাগাভাগিতে যুক্তফ্রন্ট পেয়েছিল ৩টি। তবে এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট ও শরিকদের আসন সমঝোতার বিষয়টি এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি।