আকিকা ও নামকরণ

জন্মের সপ্তম দিনে আবদুল মুত্তালিব তাঁর আকিকা করেন। সাথে সাথে সমস্ত কুরাইশকে সাধারণ দাওয়াত দেন এবং তাঁর জন্য মুহাম্মদ নামটি নির্বাচন করেন। কুরাইশগণ বললো, হে আবুল হারিস (আবুল হারিস ছিল তাঁর উপনাম)! এ নামটি আপনি কিভাবে নির্বাচন করলেন, যে নাম আপনার পূর্বপুরুষ কিংবা আপনার সম্প্রদায়ের কেউ কোনদিন রাখেনি ? আবদুল মুত্তালিব বললেন, এ নাম আমি এজন্যে রেখেছি যে, যাতে আল্লাহর সমস্ত সৃষ্ট জীব এ নবজাতকের প্রশংসা করে।

আবদুল মুত্তালিব নবী (সা)-এর জন্মের পূর্বে একটি স্বপ্ন দেখেন যা তাঁর এ নাম রাখার কারণ ছিল। তিনি দেখেন, তাঁর পিঠ থেকে একটি শিকল বের হয়েছে – যার একটি মাথা আসমানে, একটি মাথা যমীনে, একটি মাথা পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত এবং একটি মাথা পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। কিছুক্ষণের মধ্যে ঐ শিকলটি একটি বৃক্ষে পরিণত হয় । যার প্রতিটি পাতা সূর্যের আলোর চেয়ে সত্তর গুণ বেশি আলোকোদ্ভাসিত ছিল। পূর্ব ও পশ্চিমের জনগণ ঐ বৃক্ষের ডালের সাথে জড়িয়ে ছিল। কুরাইশের কিছু লোকও কিছু কিছু ডাল আকড়ে ধরে ছিল আর কুরাইশের কিছু লোক বৃক্ষটি কাটার ইচ্ছা করছিল। তারা যখন এ উদ্দেশ্যে বৃক্ষের নিকটবর্তী হচ্ছিল, তখন খুবই সুন্দর সুঠাম এক যুবক এসে তাদের সরিয়ে দিচ্ছিল।

স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারগণ এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করেন যে, আপনার বংশে এমন এক ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করবেন, পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত সমস্ত মানুষ তাঁর অনুসরণ করবে এবং আসমান ও যমীনের অধিবাসীরা তাঁর প্রশংসা-স্তুতি জ্ঞাপন করবে। এ কারণে আবদুল মুত্তালিব তাঁর নাম ‘মুহাম্মদ’ রাখেন। এ স্বপ্নের কারণে আবদুল মুত্তালিবের মনে তাঁর নাম মুহাম্মদ রাখার আগ্রহ জাগে। অপরদিকে নবীজীর মাতাকে সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে এটা বলা হয়েছিল যে, তুমি সৃষ্টির সেরা, উত্তম চরিত্রের অধিকারী জাতির নেতাকে গর্ভে ধারণ করেছ, তাঁর নাম রাখবে ‘মুহাম্মদ’। অপর এক রিওয়ায়াতে ‘আহমদ’ বলা হয়েছে।

উপনাম

রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সবচেয়ে বড়, প্রসিদ্ধ ও প্রচারিত উপনাম ছিল আবুল কাসিম, যা তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র কাসিম-এর নামানুসারে। দ্বিতীয় উপাধি আবূ ইবরাহীম। হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, যখন মারিয়া কিবতিয়া (রা)-এর গর্ভ থেকে ইবরাহীম জন্মালেন, তখন জিবরাঈল (আ) রাসূল (সা)-এর খেদমতে হাযির হয়ে বলেন السلام عليك يا ابا ابراهیم ইবরাহীমের পিতা! আপনার প্রতি সালাম।

খাতনা

খাতনার ব্যাপারে তিনটি বক্তব্য রয়েছে। 

প্রথমটি হলো, হুযূর (সা) খাতনাকৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। হাকিম বলেন, তাঁর খাতনাকৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণের ব্যাপারে অনেক মুতাওয়াতির হাদীস রয়েছে।

দ্বিতীয় বক্তব্য হলো, তার জন্মের পর সপ্তম দিনে দাদা আবদুল মুত্তালিব আরবের প্রথা অনুযায়ী তাঁর খাতনা করান। হযরত ইবরাহীম (আ) ও হযরত ইসমাঈল (আ)-এর সুন্নত হিসেবে তারা নবজাতকের জন্মের সপ্তম দিনে খাতনা করাতেন।

তৃতীয় বক্তব্য হলো, দুধমাতা হযরত হালিমার আশ্রয়ে আসার পর তাঁর খাতনা করানো হয়েছে; তবে এটা দুর্বল বক্তব্য; প্রসিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য বক্তব্য হলো প্রথম দু’টি। আর এ দু’ বক্তব্যের মধ্যে সমন্বয়ও সম্ভব এভাবে যে, হুযূর (সা) খাতনাকৃত 

অবস্থায়ই জন্মগ্রহণ করেছিলেন, আবদুল মুত্তালিব তাঁর জন্মের সপ্তম দিনে এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন।

সূত্র: সীরাতুল মুস্তফা সা.

সংকলনে: আহমাদ আল গাজী