আবার পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে সরকার: ফখরুল

বিএনপিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে সরকার আবার ‘গায়েবি’ মামলা ও গ্রেপ্তারের পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্র ঘোষিত পদযাত্রার কর্মসূচির ১ দিনেই ৮ জেলায় ৯৩৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ সোমবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

কথায় কথায় এই ‘মিথ্যা ও গায়েবি’ মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানিকে সরকার একটা প্রজেক্টের মতো নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, মামলায় নাম দিচ্ছে ১০০ জনের, কিন্তু অজ্ঞাতনামা আসামি করা হচ্ছে এক হাজার বা দেড় হাজার জন। গ্রেপ্তারের পর যখন কেউ জামিন নিয়ে বের হন, তখন তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করা হচ্ছে নতুন মামলায়।

এটাকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপিকে মাঠ ছাড়া করার চক্রান্ত বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ওই আশঙ্কাই করছি এবং এ কারণেই আবার গ্রেপ্তার শুরু করেছে। দেখুন পঞ্চগড়ের ঘটনা। পঞ্চগড়ের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ ঘটনা ঘটিয়ে ঠিক একইভাবে বিএনপির লোকজনদের আসামি করে গ্রেপ্তার করছে, বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের পুরোনো খেলা। নির্বাচনের পূর্বে তারা বিএনপিকে একেবারে মাঠ থেকে বের করে দিতে চায়।’

‘এবার আর সেটা সম্ভব হবে না’ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এবার জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে। বিএনপি রাস্তায় নেমেছে। এই আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে এবং নিঃসন্দেহে একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে পরাজয় বরণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব কারাগারে নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, মিথ্যা মামলায় নেতা-কর্মীদের জেলে নেওয়ার পর তাঁদের সঙ্গে চরম অমানবিক আচরণ করা হয়। যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানাবে বলে তাঁর মনে হয়েছে। এ সঙ্গে তিনি কারাবন্দী দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের কথা উল্লেখ করেন।

কারাবন্দী রিজভীকে নিয়ে উদ্বেগ
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, রুহুল কবির রিজভী বিভিন্ন মারাত্মক অসুখে শারীরিকভাবে অসুস্থ একজন মানুষ। তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুস ও হার্টের জটিলতায় ভুগছেন। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বুকে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ রিজভী আহমেদকে সব সময় লাঠির ওপর ভর করে চলতে হয়। অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেন না।

এমন এক পরিস্থিতিতে রুহুল কবির রিজভীকে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে প্রায় প্রতিদিনই প্রিজন ভ্যানে পুরান ঢাকার আদালতে আনা-নেওয়া হচ্ছে। এই প্রিজন ভ্যানগুলোয় বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি কিছু ধরে যে দাঁড়াবে, সে ব্যবস্থাও নেই। এ অবস্থায় অসুস্থ রুহুল কবির রিজভীকে চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনেই আদালতে আনা নেওয়া করানো হয়।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, যেকোনো বন্দীকে আদালতে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রবিধান ও জেল কোড বিধি অনুযায়ী আরামদায়ক পদ্ধতি ব্যবহার করার কথা। কিন্তু পুলিশ শাসকগোষ্ঠীর ইচ্ছায় তা অমান্য করে যাচ্ছে, যা চরম অমানবিকতা ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে রিজভী কিছুদিন ধরে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর উপযুক্ত সুচিকিৎসা প্রদানে সরকার এবং কারা কর্তৃপক্ষ অবহেলা করছে অভিযোগ করে গভীর উদ্বেগ জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম।

সম্প্রতি নিজের এবং দলের নেতা মির্জা আব্বাসের সঙ্গে কারাবন্দী হওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কারা বিধি অনুযায়ী তাঁরা দুজনই সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হিসেবে ডিভিশন পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু চার দিন তাঁদের ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কনডেম সেলে রাখা হয়। যেখানে তাঁদের ফ্লোরে শুতে হয়।

কারাগারগুলোয় এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক–বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী, সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, সহসভাপতি ইউসুফ বিন জলিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহীন, ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান, ভাটারা থানার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলী, গুলশান থানার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাহজাহান সরকারের রোষানলে পড়ে কারাবন্দী।

মির্জা ফখরুল বলেন,সরকার এখন বেপরোয়া ভূমিকায় মাঠে নেমেছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে চারদিকে ভীতির বিস্তার ঘটাচ্ছে, যাতে সরকারের বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ করারও সাহস না পায়। অজানা আশঙ্কা, আতঙ্ক আর ভয়ের এক বিষাদময় পরিবেশ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বর্তমান স্বৈরশাহী দেশে বিরোধী দলের অস্তিত্ব ধ্বংস করে নিজেদের দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে চায়। তবে জনগণ তাদের এই মনোবাঞ্ছা কোনো দিনই পূরণ হতে দেবে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, কামরুজ্জামান রতন, জয়নুল আবেদিন মেজবাহ, তাইফুল ইসলাম, সাঈদ সোহরাব ও তারিকুল আলম, প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।