আমদানির ক্ষেত্রে সংকট

আগামী বছর বিশ্বে খাবারের সংকট সৃষ্টি হতে পারে এবং পণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের দুর্ভোগ বাড়তে পারে। বহুদেশ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে; কিছু দেশ নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ অবস্থায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিবছর সরকার দেশের কৃষি খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ ভর্তুকি দিয়ে থাকে। এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা দরকার। ডলার সংকটের কারণে সার আমদানি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের জোগান নেই, সেহেতু আগামী দিনে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা অনুমান করাও কঠিন। আগামী দিনে এমন পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হতে পারে, যখন পর্যাপ্ত অর্থের বিনিময়ে সময়মতো খাদ্য আমদানি করা সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিকল্প নেই। ধানসহ খাদ্যশস্যের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে এ বছর বিদেশ থেকে সার আমদানি করতে হবে ৫৮ লাখ ২৫ হাজার টন। এজন্য প্রয়োজন হবে ৫১৯ কোটি মার্কিন ডলার, দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা। ডলার সংকটে সার আমদানিতে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি এরই মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন এবং বেসরকারি উদ্যোক্তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে চিঠি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। মনে রাখতে হবে, সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের সংকট কাটাতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়বে।

দেশে চাহিদা পূরণ করতে কয়েক বছর ধরে সার আমদানি করতে হচ্ছে। একসময় নিজেদের চাহিদা পূরণ করে সার রপ্তানি করা হতো। বর্তমানে যান্ত্রিক ত্রুটি এবং গ্যাস স্বল্পতার কারণে দেশের বিভিন্ন সার কারখানা মাসের পর মাস বন্ধ থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যান্ত্রিক ত্রুটি সারানোর পাশাপাশি নতুন কারখানা স্থাপন করা হলে সার আমদানির দরকার হতো না। ২০২১ সালের জুনের তুলনায় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিশ্ববাজারে সারের মূল্য বেড়েছে প্রায় ১০০ শতাংশ। কাজেই সারের ক্ষেত্রেও আমদানিনির্ভরতা পরিহার করা জরুরি। এখন উৎপাদন খরচ তুলতেই কৃষকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ কৃষি খাতের বিপুল অঙ্কের ভর্তুকির সুফলভোগী কৃষক হন না। দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে ভর্তুকির অর্থের বড় অংশ চলে যায় সিন্ডিকেটের পকেটে। প্রয়োজন বিবেচনা করে কৃত্রিম সংকটের সময়ে বেশি দামেই কৃষক সার সংগ্রহ করেন। বেশি দামে বিক্রির কারণে সংশ্লিষ্ট ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? কৃষকের কাছে সার সহজলভ্য করতে সরকার বিপুল অঙ্কের অর্থ ভর্তুকি দিলেও কৃত্রিম সংকটে সারের জন্য দিশেহারা হয়ে পড়েন কৃষক-এটি বারবার আলোচনায় এলেও সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা আর জানা যায় না। বস্তুত শর্ষের ভেতরে ভূত তাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে সারের জন্য হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে কাক্সিক্ষত সুফল মিলবে কি না, এ বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। বোরো ধানের আবাদি জমিতে আর কিছুদিন পরই সারের প্রয়োজন হবে। দেশের বহু এলাকার প্রধান ফসল বোরো ধান। কাজেই কৃষক যাতে সময়মতো সঠিক দামে সার পেতে পারেন, সেজন্য কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।