হানিফুল্লাহ আরমান: বছর ঘুরে আবারও আমাদের সামনে উদিত হতে যাচ্ছে মাহে রমজানের আলো ঝলমলে বাঁকা চাঁদ। মুসলিম উম্মাহর জীবনে প্রতিবছর রমজান আসে রহমত, বরকত ও নাজাতের সুবাতাস নিয়ে। বিপর্যয় ও মুসিবতের এই কঠিন সময়েও যথারীতি রমজান আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। পেরেশানির এই দুর্দিনে রমজান আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহর এক অপার নেয়ামত। মুসলিম উম্মাহর জীবনে রমজান অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। কারণ এই মাসেই মুমিন তার পুরো বছরের পুঁজি সংগ্রহ করে অতীতের সমস্ত গুনাহ থেকে তওবা করে; নতুন জীবন শুরু করার শপথ গ্রহণ করে। তাই খুব সতর্কতার সাথে এই মাস কাটাতে না পারলে— রমজানের কাংঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করা যাবে না।
রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমা ও সৌভাগ্য অর্জনে কিছু বিষয় অনুসরণ করা যেতে পারে।
হক আদায় করে রোজা রাখা
রমজানের মূল ফরজই হলো রোজা। মহান আল্লাহ বলেন— ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে রোজা পালন করে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত : ১৮৫)। হাদিসে এসেছে— হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাপ, মিথ্যা কথা, অন্যায় কাজ ও মূর্খতাসুলভ কাজ ত্যাগ করতে না পারবে, তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লাহ তায়ালার কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারি: ৫/২২৫১)।
পাপ, মিথ্যা কথা, অন্যায় কাজ ও মূর্খতাসুলভ কাজ ত্যাগ করে এভাবে রোজা রাখলেই তা হবে হক আদায় করে রোজা রাখা। অনেক সময় রোজা রেখেও আড্ডায় বসে আমরা অন্যের গিবত করি। এটিও পরিহার করতে হবে। আমরা যেমন মাদককে না বলি, ঠিক তেমনিভাবে রমজানে দিনের বেলায় খাবারকে ‘না’ বলতে হবে ।তেমনিভাবে গিবত, পরনিন্দা, সুদ, ঘুষ, সন্ত্রাসসহ সব গুনাহের কাজকেও ‘না’ বলে গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার প্রশিক্ষণ হিসেবে রোজাকে গ্রহণ করাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, পানাহার বর্জনের নাম সিয়াম নয়; সিয়াম হলো অনর্থক ও অশ্লীল কথা এবং কাজ বর্জন করা। (বায়হাকি: ৪/২৭০)। অর্থাৎ রোজার মাধ্যমে পবিত্র কোরআনে নিষিদ্ধ জিনিসগুলো ছেড়ে দেয়ার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। নিজেকে বিরত রাখতে হবে সব ধরণের মিথ্যা ও পাপাচার থেকে। তাহলেই আমাদের রোজার হক আদায় হবে।
কোরআন খতম ও তিলাওয়াত
পবিত্র রমজানে প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়, আর মুমিনদের জন্য এ মাস তো সোনায় সোহাগা। তাই কোরআন নাজিলের মাস রমজানে যথাসাধ্য বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত। কারণ রোজা ও কোরআন বান্দাদের জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে সুপারিশ করবে। মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে…।’ (মুসনাদে আহমাদ : হাদিস ৬৬২৬)। অনেক সময় খেলাধুলা, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় আমাদের সময় কেটে যায়, এ সময়টুকু আমরা যিকির, তাসবিহ ও তিলাওয়াতে কাজে লাগাতে পারি। রাস্তায় জ্যামে পড়েছি কিংবা ট্রাফিক সিগন্যালে আটকা পড়েছি— এ সময়টুকু আমরা কুরআন শরীফ পাঠে কাজে লাগাতে পারি।
বেশি বেশি দান করা
রমজানে নবীজি (সা.), সাহাবায়ে কেরাম এবং পূর্ববর্তী বুজুর্গরা বেশি বেশি দান করতেন। প্রখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : ‘মহানবী (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তাঁর বদান্যতা আরো বেড়ে যেত।’ (মুসলিম : হাদিস ৩২০৮)। দান-সদকা রমজানে ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য নিঃসন্দেহে অন্যতম শর্ত।আমরা সামান্য কিছু টাকা জমা করে হলেও আমাদের অভাবী প্রতিবেশীর ঘরে সামান্য ইফতার সামগ্রী দিয়ে আসতে পারি। একজন অভাবী মানুষ সারাদিন রোজা রেখে যখন আমাদের দেয়া ইফতার দিয়ে ইফতার করে আনন্দিত হবে— তখন সে আনন্দটা শুধু তার ঘরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। সে আনন্দ আল্লাহ তায়ালার আরশে পৌঁছে যাবে। আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়ে ইফতারদাতাকে সে রোজাদারের রোজার সওয়াবের সমান সওয়াব দান করে ধন্য করবেন।
ইতিকাফের প্রস্তুতি নেওয়া
হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল কদর পাওয়ার বড় একটি মাধ্যম হলো ইতিকাফ করা। নবীজি (সা.) ইতিকাফ করতেন। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘মহানবী (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।’ (মুসলিম : হাদিস ১১৭১)। আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে লাইলাতুল কদর পেতে রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফের প্রস্তুতি এখন থেকেই নেয়া উচিত। এ ছাড়াও যারা অতিশয় বৃদ্ধ, তারা সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ,এবং হাদিসে বর্ণিত দুয়া ও দুরুদ পড়ে সময় কাটাতে পারে।