ইবিতে র‍্যাগিং বন্ধসহ যে ৬ নির্দেশনা দিলেন হাইকোর্ট

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) র‍্যাগিং বন্ধসহ ৬টি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট : বুধবার (১ মার্চ) বিচারপতি জেবিএম হাসান ও রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এদিকে ইবির আবাসিক হলের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে অমানুষিক নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় পাঁচ ছাত্রীকে বহিষ্কারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্টকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেন, সম্প্রতি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনৈতিক পরিচয় অপব্যবহার করছেন, যা তাদের রাজনৈতিক দলের ইমেজও নষ্ট করছেন।

এসব আদেশের পাশাপাশি হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে র‍্যাগিংসহ এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে ৬টি নির্দেশনা দিয়েছেন।

ছয় নির্দেশনা হলো:
১) সাময়িক বহিষ্কৃত পাঁচজন কোনো একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকতে পারবেন না।

২) ইবির হলগুলোর সিসিটিভি মনিটরিং বাড়াতে হবে। নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে তিন দিনের মধ্যে তার পছন্দমতো হলে আবাসিকতা দেওয়ার নির্দেশ।

৩) তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

৪) ৮ মে পরবর্তী আদেশ এবং এর মধ্যে আদেশগুলো পালন করে আদালতকে জানাতে হবে।

৫) এ ছাড়া পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যে ফোনে সেদিন রাতের ভিডিও ধারণ করা হয়েছে সেটি উদ্ধার করে ভিডিও মুছে ফেলতে হবে।

৬) এসপি পাবনা এবং এসপি কুষ্টিয়াকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে ভিকটিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ, একই সঙ্গে যারা সাক্ষী দিয়েছেন তাদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

উল্লেখ্য : নির্যাতনকারী বহিষ্কৃত ওই পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন: ইবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ছাত্রলীগ কর্মী ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের ইসরাত জাহান মীম, ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মি ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মোয়াবিয়া। অন্তরা ছাড়া সবাই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ৫ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।

প্রসঙ্গত, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করা হয় নবীন এক ছাত্রীকে। ভুক্তভোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা ওই ছাত্রীকে মারধর ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে রাখেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে বাড়ি চলে যান ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। পরে র‌্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দফতর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন অভিযুক্তরা। হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।