ইসরায়েলের এক ধনকুবেরের মালিকানাধীন একটি জাহাজ জব্দ করেছে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী। এতে ১৭ জন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে গত শনিবার হরমুজ প্রণালীর কাছে কন্টেইনার জাহাজটি জব্দ করা হয়। খবর এনডিটিভির।
ভারতীয় একটি সূত্র এনডিটিভিকে জানায়, ‘এমএসসি অ্যারিজ নামের একটি কার্গো জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইরান। আমরা জানতে পেরেছি যে, জাহাজটিতে ১৭ জন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। আমরা তেহরান ও দিল্লিতে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ইরানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, যাতে ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা ও দ্রুত মুক্তি নিশ্চিত করা যায়। ’
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, সিরিয়ার বিমান হামলায় দুই জেনারেলসহ সাত সদস্যকে হারানো এলিট ফোর্স ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জাহাজটি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা বলছে, ‘জাহাজটিকে এখন আমাদের দেশের জলসীমার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ’
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, পর্তুগালের পতাকাবাহী এমএসসি অ্যারিজ জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি বন্দর থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল বলে জানা গেছে। জাহাজটি জোডিয়াক ম্যারিটাইম নামক প্রতিষ্ঠানের এমএসসি অ্যারিস। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইসরায়েলি ধনকুবের ইয়াল ওফার।
বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) হাতে আসা জাহাজের ডেকের একটি ফুটেজে দেখা যায়, সেনারা হেলিকপ্টার থেকে জাহাজে নেমে আসছেন।
হেলিকপ্টারটি সোভিয়েতের নকশা করা এমআইএল এমআই-১৭ বলে মনে করা হচ্ছে, যা আইআরজিসি’র নৌবাহিনী পরিচালনা করে থাকে।
যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস (ইউকেএমটিও) জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ থেকে ৯২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি নৌপথ থেকে ‘আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ’ জাহাজটি জব্দ করেছে।
জাহাজটি জব্দের পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করার পথ বেছে নিলে ইরানকে পরিণতি ভোগ করতে হবে। ’
ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘ইরান হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। তাদের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক শুধু ইসরায়েল, গাজা, লেবানন ও সিরিয়ার জনগণকেই হুমকি দিচ্ছে না; ইরানের শাসকগোষ্ঠী ইউক্রেন এবং এর বাইরেও যুদ্ধের ইন্ধন জোগাচ্ছে… ইসরায়েল সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ইরানের আরও আগ্রাসন থেকে ইসরায়েলকে রক্ষার জন্য আমরা প্রস্তুতি বাড়িয়েছি। আমরাও জবাব দিতে প্রস্তুত। ’
প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরের শেষের দিকে ভারত মহাসাগরে ড্রোন হামলায় ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট আরেকটি কন্টেইনার জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর জন্য ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র।
জাহাজটিতে ২৫ জন নাবিক রয়েছেন। তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে এবং জাহাজের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।
তবে ইসরাইলি কোম্পানি জোডিয়াক মেরিটাইম এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এমএসসি অ্যারিস দুবাই থেকে হরমুজ প্রণালীর দিকে যাচ্ছিল। জাহাজটি তার ট্র্যাকিং ডেটা বন্ধ করে দিয়েছিল। যা এই অঞ্চল দিয়ে চলাচলকারী ইসরায়েল-অনুমোদিত জাহাজগুলোর জন্য স্বাভাবিক বিষয়।