
জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ বলেছেন, গাজা উপত্যকায় সামরিক আগ্রাসন অব্যাহত রাখার মাধ্যমে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করার ফলে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে ইসরায়েল। দেশটিকে এর পরিণাম ভোগ করতে হবে। সোমবার বিশেষজ্ঞরা এক বিবৃতির মাধ্যমে এই কথা বলেছেন।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘আমরা ইসরায়েলকে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছি, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু এবং ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য একটি সার্বজনীন এবং বাধ্যতামূলক নিয়ম রয়েছে। যারা সরাসরি শত্রুতায় অংশ নিচ্ছে না তাদের ওপর কোনোভাবেই হাময়াল করা যাবে না।’
তারা আরও বলেছেন, ‘এই নিয়মগুলো মেনে চলার পরিবর্তে ইসরায়েল বারবার প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বসবাস করা বেসামরিক নাগরিকদের সর্বোচ্চ দুর্ভোগের জন্য দায়ী।’
বিশেষজ্ঞরা ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের একটি তালিকা তুলে ধরেছেন। তারা বলেছেন, ‘ইসরায়েলি সরকার মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা, নির্যাতন, যৌন সহিংসতা, জোরপূর্বক স্থানান্তর, বেসামরিক নাগরিক এবং লক্ষ্যবস্তুর ওপর নির্বিচারে হামলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস, অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার, মানবাধিকারকর্মী, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মানবিক সহায়তা প্রদানের ওপর নির্বিচারে বিধিনিষেধ, সম্মিলিত শাস্তি। এগুলো সবই যুদ্ধাপরাধ।’
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অধীনে সমগ্র বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই ধরনের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক আইনে তাদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে তাদের ধ্বংসের লক্ষ্যে কাজ করা গণহত্যা।’
উত্তর গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘ইসরায়েল একটি দখলদার শক্তি হিসাবে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে। ইসরায়েলি বাহিনী বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্র, কামাল আদওয়ান হাসপাতাল এবং এর আশেপাশের এলাকায় নির্বিচারে হামলা করেছে। গত তিন মাস ধরে উত্তর গাজায় অবরোধ করে রাখার ফলে বেসামরিক জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।’
তারা আরও বলেছেন, ‘এই অবরোধ, উচ্ছেদ আদেশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইনের আরও লঙ্ঘন করা হচ্ছে দেখে আমরা উদ্বিগ্ন। আমাদের মনে হচ্ছে গাজাকে পুরোপুরি দখলের উদ্দেশ্যে স্থানীয় জনগণকে স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা করেছে ইসরায়েল।’
এদিকে ইসরায়েলিদের আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে স্বাধীন ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্তের অনুমতি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি