ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া কে এই জাকারিয়া জুবাইদি?

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে তৃতীয় দফায় মুক্তিপ্রাপ্ত হাই-প্রোফাইল ফিলিস্তিনিদের একজন হলেন জাকারিয়া জুবাইদি।

ফাতাহ আন্দোলনের সিনিয়র নেতা এবং পশ্চিম তীরের সশস্ত্র শাখা আল-আকসা শহীদ ব্রিগেডের কমান্ডার জুবাইদি বৃহস্পতিবার পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ শহরে ১০৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর সাথে মুক্তি পেয়েছেন।

হামাস এবং তাদের মিত্র ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ পাঁচ থাই নাগরিকের সাথে তিনজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। তাদের রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মুক্তির পর জুবাইদি বলেন, “আজ আমি গাজাকে ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাকে মুক্ত করেছে এবং আমাকে আমার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে এনেছে। আমাকে বিচ্ছিন্ন, নির্যাতন ও মারধর করা হয়েছিল এবং বারবার অপমানিত করা হয়েছিল। সমস্ত (ফিলিস্তিনি) বন্দীর অবস্থা একই রকম।”

তিনি ইসরায়েলি কারাগারগুলিকে হত্যা এবং প্রতিদিনের নির্যাতনের কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

জুবাইদি আরও “গাজার এখন পুনর্গঠন প্রয়োজন এবং ফিলিস্তিনি জনগণের সকল স্তরকে একত্রিত হয়ে এটি সম্পন্ন করতে হবে এবং আমাদের জনগণকে নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে হবে,”

জুবাইদি ১৯৭৬ সালে অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তর অংশে জেনিন শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় ইন্তিফাদার (২০০০-২০০৫) সময় তিনি আল-আকসা শহীদ ব্রিগেডের সামরিক কমান্ডার হন। সশস্ত্র প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেন।

২০০২ সালে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ক্যাম্পে হামলা চালানোর সময় তিনি তার মা সামিরা এবং তার ভাই তাহাকে হারান।

দখলদার তেল আবিব সরকার জুবাইদিকে ক্রমাগত তাড়া করত।

২০০৭ সালের ১৫ জুলাই ইসরায়েল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণের বিনিময়ে আল-আকসা শহীদ ব্রিগেডের বেশ কয়েকজন সদস্যকে সাধারণ ক্ষমা প্রদান করে। যার মধ্যে তিনিও ছিলেন।

সাধারণ ক্ষমার পর জুবাইদি বিয়ে করেন এবং তার দুটি সন্তান হয়। তিনি থিয়েটার শিল্পের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং জেনিনের ফ্রিডম থিয়েটারের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি শিল্পের একজন বিশিষ্ট সমর্থক হয়ে ওঠেন।

তিনি অনেক আন্তর্জাতিক কর্মী এবং ফিলিস্তিনি অধিকারের সমর্থকদের সাথে দেখা করেন।

কিন্তু চার বছর পরে ২৯ ডিসেম্বর ২০১১, ইসরায়েল তার সাধারণ ক্ষমা প্রত্যাহার করে। যদিও জুবাইদি জোর দিয়ে বলেছিলেন, তিনি এর শর্তাবলী লঙ্ঘন করেননি।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) তাকে ছয় মাস ধরে কোনও অভিযোগ ছাড়াই আটক করে এবং পরে “প্রতিরক্ষামূলক হেফাজতে” পেনসিলভেনিয়া কারাগারে রাখে।

২০১৮ সালে তিনি বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তাকে এবং তার আইনজীবী তারিক বারগাউটকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ইসরায়েলি শাসনের বিরুদ্ধে “নতুন উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড” এবং সশস্ত্র প্রতিরোধে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।

অবশেষে জুবাইদি কারাগারের ভেতরে থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, তিনি ইসরায়েলি-অধিকৃত অঞ্চলের উত্তর সেক্টরের গিলবোয়া সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কারাগার থেকে আরও ৫ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর সাথে তাদের কক্ষ থেকে একটি সুড়ঙ্গ খনন করে পালিয়ে যান।

ইসরায়েলি বাহিনী কয়েকদিন পর ছয়জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে আবারও আটক করে। কিন্তু অপারেশন ফ্রিডম টানেল নামে পরিচিত এই সাহসী পালানো ফিলিস্তিনি এবং মুসলিম জাতিগুলির মধ্যে কিংবদন্তি হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হযন।

সূত্র: প্রেস টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *