ইসরায়েল দূতাবাসের অবনমন চায় দক্ষিণ আফ্রিকা

অধিকৃত ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অব্যাহত অপব্যবহারের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্টে গতকাল বুধবার ইসরায়েলে দেশটির দূতাবাসের অবনমনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিষয়টিকে অসম্মানজনক বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল। খবর মিডলইস্টমনিটর।

দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্টে ন্যাশনাল ফ্রিডম পার্টি (এনএফপি) ইসরায়েলের দূতাবাস বিষয়ক প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। প্রস্তাবে ইসরায়েলে দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাসকে লিয়াঁজো অফিসের মর্যাদায় নামিয়ে আনার কথা বলা হয়। পার্লামেন্টের ২০৮ জন সদস্য এই সিদ্ধান্তে সম্মতি জানান। প্রত্যাখ্যান করেন ৯৪ জন।

প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর এনএফপি এক বিবৃতিতে জানায়, আমরা আনন্দিত যে ইসরায়েলে দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাসকে ডাউনগ্রেড করার খসড়া প্রস্তাব সংসদে পাস হয়েছে। অনেকে যুক্তি দেবে, এর ফলে সংঘাতে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমাদের কাজ করার ক্ষমতা সংকুচিত হবে। কিন্তু আমাদের দল বিশ্বাস করে, নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মুখে নিরপেক্ষতা কোনো বিকল্প নয়।

এনএফপি এ সময় নেলসন ম্যান্ডেলার বিখ্যাত লাইনটি উদ্ধৃত করে, যাতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা অসম্পূর্ণ। এনএফপি জানায়, নিশ্চয়ই পার্লামেন্টের এ সিদ্ধান্তে নেলসন ম্যান্ডেলা গর্বিত হবেন।

ভোটের পর দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ফ্রিডম পার্টি এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি আমাদের দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত এবং ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি আমাদের অটল অঙ্গীকারের একটি প্রদর্শন। এনএফপির সদস্য আহমেদ মুনজুর শাইক এমাম বলেন, ‘আজ আমরা ফিলিস্তিনিদের জন্য সেই স্বাধীনতা অর্জনের আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম। এই রেজুলেশনটি পাস করার মাধ্যমে, আমরা বিশ্বকে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠাচ্ছি, ইসরায়েলের কাছ থেকে জবাবদিহিতা দাবি করার ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকা একটি আশার আলো এবং একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে থেকে গেল। কারণ এই সিদ্ধান্তটি একটি সাহসী পদক্ষেপ যা ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি দেশ হিসেবে আমাদের অঙ্গীকার প্রদর্শন করে।

দলটি দাবি করে, ইসরায়েল রাষ্ট্রটি ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি, হত্যা ও পঙ্গুত্বের মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি ক্ষমতায় তার দখল বজায় রাখার জন্য, এটি ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্ণবৈষম্য প্রতিষ্ঠা করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক হিসেবে আমরা বর্ণবাদের প্রতিষ্ঠাতাদের পাশে দাঁড়াতে অস্বীকার করি।

বিগত ২৭ বছর ধরে ফিলিস্তিনি ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। প্রিটোরিয়া প্রায়শই ফিলিস্তিনিদের জন্য সমর্থন ব্যক্ত করে এবং ইসরায়েলি সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে বিশ্ব মঞ্চে নিন্দা জানায়।

এদিকে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে আনায় দক্ষিণ আফ্রিকার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল। বুধবারের এই ভোটকে অসম্মানজনক আখ্যা দিয়ে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের অবনমনের আহ্বান জানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্টে গৃহীত প্রতীকী প্রস্তাবটি লজ্জাজনক ও অসম্মানজনক।

আফ্রিকা ও আরবের বিভিন্ন দেশ যখন ইসরায়েল রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক জোরদার ও গভীর করছে, তখন এমন একটি পদক্ষেপের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার নিজের এবং তার অবস্থানের ক্ষতি করছে।