ইসলামী জিন্দেগীর উপর আমল করা এবং ইসলামী জীবন গড়ার দ্বারা আল্লাহ সফলতা দান করবেন

আজ বাদ ফজর আম’বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে ২০২৩ সালের ইজতেমা শুরু হয়। উর্দুতে বয়ান বয়ান করেন হযরত মাওলান  জিয়াউল হক সাহেব (পাকিস্তানি)। তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার উপর চলা, ইসলামী জিন্দেগীর উপর আমল করা এবং ইসলামী জীবন গড়ার  দ্বারা আল্লাহ সফলতা দান করবেন এ বিষয়ে আলোচনা পেশ করেন। হযরতের বয়ান কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।

হযরত বলেন ولا تموتن الا وانتم مسلمون

ইসলাম ছাড়া অন্য কোন অবস্থার ওপর যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়।

ইসলামী জীবন ব্যবস্থা শিখতে হবে এবং ইসলামী জীবন ব্যবস্থার উপর চলতে হবে। ইসলামী জীবন ব্যবস্থার উপর চলা প্রত্যেক মুসলমানের উপর জরুরী। 

ইসলামী জিন্দেগি ইসলামী জীবন ব্যবস্থা কাকে বলে? মানুষের গোটা জীবনের সমস্ত আমল, ইসলামের উপরে চালানো কে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা বলে।

যেহেতু আমাদেরকে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর উম্মত বানিয়েছেন। এই জন্যই ইসলামী জিন্দেগী যেন পুরো পৃথিবীর মানুষের কাছে জিন্দা হয়ে যায়, বাস্তবে চলে আসে, সেই ব্যাপারে বেশি বেশি মেহনত করা। এইটা এই উম্মতের জিম্মাদারী।

আর প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জিম্মাদারি হচ্ছে ঐ জিন্দেগি ঐ মেহনতের মধ্যে মজবুতি করা। এবং সর্বদাই এই মেহনতের মধ্যে থাকা।

আর ইসলামী জিন্দেগির উপর আল্লাহতালা ওয়াদা করেছেন। দুনিয়াতে ওয়াদা করেছেন আখেরাতেও ওয়াদা করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা উভয় জাহানে সফলতার ওয়াদা করেছেন। আর এই ইসলামী জিন্দেগি গ্রহণ করার কারণে সে কখনোই নাকাম হবে না। সে কখনোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ছাড়া অন্য যে জীবন ব্যবস্থা আছে সেটাতে সফলতা পাবে কামিয়াবি হবে এটা কখনোই সম্ভব না । কারণ ইসলামী জীবন ব্যবস্থার উপর আল্লাহ তাআলার সফলতা কামিয়াবি ওয়াদা আছে।

আল্লাহ তাআলা পূর্বে অনেক ঘটনা কুরআনে কারীমে বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন কওমের ঘটনা বর্ণনা করেছেন ইসলাম ছাড়া ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ছাড়া কেউ সফলতা অর্জন করেছে এরকম ঘটনা কেউ দেখাতে পারবে না।

আবার ইসলামী জীবন ব্যবস্থার উপর চলে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করে কেউ কামিয়াবী হয় নাই সফলতা অর্জন করতে পারে নাই এমন ঘটনাও কেউ দেখাতে পারবে না ।

সুতরাং যত ধরনের নাকামি ক্ষতি খারাপ অবস্থা ইত্যাদি আসে এগুলো মানুষের দ্বীনহীন জিন্দেগি অতিবাহিত করার কারণে আসে। এইজন্য জিন্দেগির মধ্যে নিজের জীবনের মধ্যে যেকোনো ধরনের ক্ষতি আসে তৎক্ষণিকভাবে আমাদের জন্য জরুরি হলো আমার জিন্দেগীর মধ্যে দ্বীনী লাইনের যে কমতি আছে সেদিকে লক্ষ্য রাখা কারণ সমস্যা মানুষের জীবনের মধ্যে আসে দ্বীনের লাইনে কমজোরি থাকার কারণে।

জনাবে মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়তের পরে মক্কা মুকাররামার মধ্যে দাওয়াত দেওয়া শুরু করলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাওয়াত যেটা ছিল সেটা হল, হে লোক সকল তোমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ো তোমরা সফলকাম হয়ে যাবে। সফলতা পেয়ে যাবে। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর সাথে সফলতাকে জুড়াইছে সফলতাকে সম্পৃক্ত করেছেন। অতএব এই কালেমাকে জবানে স্বীকার করার সাথে অন্তরেও একথার বিশ্বাস রাখা যে, এই কালেমার উপর আমার উভয়জাহানের শান্তি এবং সফলতা জড়িত।

আবু তালেব রাসুল (সাঃ) এর চাচা ।

আবু তালেব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম কে ডাকলেন হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাশরিফ নিয়ে আসলেন। আর আবু তালেবের কাছে কুরাইশের বড় বড় নেতারা উপস্থিত ছিল।

আবু তালেব রাসুল (সাঃ)কে বললেন দেখো আমার কাছে কুরাইশের বড় বড় নেতারা আসছে তারা তোমার কাছে কিছু অঙ্গীকার দিতে চায়। নেতার আবু তালেবকে বললেন দেখো আবু তালেব তোমার ভাতিজার সাথে আমাদের চরম বিরোধ আমরা চাই এই বিরোধ নিরসন হোক। তোমার ভাতিজা তার কথা থেকে কিছু নিচে নামুক,আর আমরাও আমাদের কথা থেকে কিছু নিচে নামি। এই দুইয়ের মাঝে আমাদের মাঝখানে যে দ্বন্দ্ব সেটাও কিছুটা কমে যাক।

রসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আমি তো শুধু একটি কথার উপর দাওয়াত দেই। আমি যে কালেমার উপর দাওয়াত দেই সেটা যদি তোমরা গ্রহণ করো তাহলে তোমারা সফলতা পেয়ে যাবে। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এই কালেমার উপর ফজিলত বয়ান করলেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন আমি যে কালেমার উপর তাদের দাওয়াত দিচ্ছি সেই কালেমা যদি তারা গ্রহণ করে তাহলে গোটা আরব তাদের অধীনে হয়ে যাবে। আরব অনারব যারা আছে তারা তাদেরকে ট্যাক্স দিয়ে তাড়াও তাদের অধীনে হয়ে যাবে। এরকমই এক কালেমার মধ্যে আমি তাদেরকে দাওয়াত দিচ্ছি।

মুহতারাম দোস্ত,রাসুল (সাঃ) এর প্রথম উম্মতেরা সাহাবায়ে কেরামরা এই কালিমাকে গ্রহণ করেছেন সাহাবায়ে কেরামদের কাছে এই কালেমার থেকে মূল্যবান পৃথিবীর আর কোন কিছুই ছিল না। আল্লাহ তায়ালা ও তাদের সফলতার সুসংবাদ দিয়ে দিয়েছেন رضي الله عنهم ورضوا عنهযে আমিও তাদের উপর রাজি তারাও আমার উপর রাজি।

আর সাহাবায়ে কেরাম গণ‌ও কিভাবে এই কালেমা মানুষের জীবনে জিন্দা হয়ে যায় সেই ব্যাপারে প্রচুর মেহনত করেছেন। আর যখন মেহনত করার জন্য ময়দানে নেমেছেন তখন আল্লাহতালার পক্ষ থেকে তাদের জন্য সাহায্য নাজিল হয়েছে। আর যখন কোন জামাতের উপর আল্লাহ তায়ালার সাহায্য আসে তখন পৃথিবীর কেউ, কোন মাখলুক তাদের উপর বিজয় অর্জন করতে পারে না।

সুতরাং মুহতারাম দোস্ত বুজুর্গ মেহমান আমাদের উদ্দেশ্য করে বলেন ।

প্রথমে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা কি এটা শিখা। দ্বিতীয় হইতেছে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা কে গ্রহণ করা। তৃতীয় বিষয়টা হচ্ছে ইসলামের জীবন ব্যবস্থার উপর চললে যে আল্লাহতালা সফলতা দান করবেন এটাও অন্তরের মধ্যে বিশ্বাস রাখা।

মোট কথা হল ইসলামী জিন্দেগীর ইলম, ইসলামী জিন্দেগির আমল, ইসলামী জিন্দেগীর ওপর ইয়াকিন।আর এই তিনটা জিনিসই আমাদেরকে শিখতে হবে। আর এই তিনটা জিনিস যখন একসাথে হবে, এলেম আর এলেম অনুযায়ী আমল এবং ইয়াকিন তখন আল্লাহ তা’আলা আমলের শক্তিটাকে বাড়ায় দিবেন।

আর ইসলামি জিন্দেগি এটা এমন একটা জিন্দেগি যেটা আল্লাহতালা খুব পছন্দ করে আমাদেরকে দিয়েছেন। ورضيت لكم الاسلام دينا

সুতরাং আমরা ওই জীবন ব্যবস্থা কে গ্রহণ করব যা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে নিয়ে এসেছেন। এবং নবীজির সুন্নতের পরিপূর্ণ পাবন্দি করব। আর এই পরিপূর্ণ পাবন্দি করার দ্বারা আল্লাহ তাআলা বান্দার উপর সন্তুষ্টি হয়ে যাবেন। আল্লাহ তাআলা সফলতা দান করবেন, শান্তি নিরাপত্তা দান করবেন । না কামিয়াবী এবং ক্ষতিগ্রস্ত সবকিছু আল্লাহতালা দূর করে দিবেন।

কাজেই আমাদের সকলের মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনিত দ্বীনের উপর জীবন যাপন করতে হবে।

মেরে দোস্ত বুজুর্গ আল্লাহতালার হুকুম মানা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত তরিকায় জীবন যাপন করার পরে যদি আমার কাছে সম্পদ হুকুমত আসে এবং হুকুমত ওয়ালাদের সম্পর্ক আমার সাথে হতে থাকে তাহলে সেটা আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। এতোটুকু পর্যন্ত আশার খেত্রে প্রতিটি মানুষের জন্য এটা শিখা জরুরি যে আল্লাহর হুকুম বাদ দিয়ে নবীর সুন্নত বাদ দিয়ে যদি তা আমার কাছে আসে তাহলে এটা আমাকে সফলতা দিতে পারবে না এটা আমাকে ধ্বংস করে দিবে। সুতরাং মনে রাখতে হবে দুনিয়ার এ সমস্ত জিনিস আমাদের সফলতা দিতে পারবে না ।

দুনিয়ার এই আসবাবপত্র আল্লাহ তাআলার নিয়ামত। যার ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা সফলতা চাইবেন আল্লাহতালা তাকে সফলতা দিবেন যার ব্যাপারে চাইবেন না আল্লাহ তায়ালা তাকে সফলতা দিবেন না।

আর আল্লাহ তাআলা তাকে সফলতা দিবেন যার জিন্দেগির মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত আছে আল্লাহতালার হুকুমের পাবন্দি আছে ইয়াকিন আছে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার হুকুমের পাবন্দী করে ইসলামী জিন্দেগীর উপর চলতে চায় তার উপর বিভিন্ন অবস্থা তৈরি হয়। আর যদি আমি এভাবে চলতে পারি অর্থাৎ ইয়াকিনের সাথে আমল করতে পারি তাহলে আমার জীবনের মধ্যে যত ধরনের অবস্থা, বিপদ আপদ আসবে সবকিছুর উপর ধৈর্য ধারণ করে ইসলামী জিন্দেগীর উপর চলা আমার জন্য সহজ হয়ে যাবে।

হযরত বলেন আমল কাকে বলে?

আমল হলো মাথা থেকে নিয়ে পা পর্যন্ত শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এটার ব্যবহারকে আমল বলে । আর এই আমল করার আগে এই আমলটাকে শেখা জরুরী যে, আমলটা আমি কিভাবে করব। العلم قبل القول والعمل তাই কোন একটা আমল করার আগে সেই আমলটাকে কিভাবে করব সেটা ভালোভাবে শিখতে হবে।

আর আমার আমলটা যদি আল্লাহতালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য না হয় তাহলে সে আমলটা আমার জন্য ধ্বংসের কারণ হবে। فاعبد الله مخلصا له الدين

এইজন্য ঈমানের সাথে সুন্নতের সাথে এবাদত করতে হবে।

আর যখন ইবাদত ইখলাসের সাথে হবে আল্লাহতালা সন্তুষ্টির সাথে হবে তখন সে ইবাদতের আসর বা প্রভাব তা প্রকাশ পাবে। আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হবে।

এইজন্য প্রথম হলো কোন আমল করার আগে সেই আমলকে ইয়াকিনের সাথে করা। আর দ্বিতীয় ‌হ‌ইতেছে ওই আমল করার তরিকা কে শিখা। আর তৃতীয় হইতেছে ওই আমলটা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই করা।

আর আল্লাহতালা এই আমলের উপর দুনিয়ার জিন্দেগীটা ওয়াদা করেছেন যে এই আমলের দ্বারা আল্লাহতালা দুনিয়ার জীবনেও বরকত দান করবেন। এইজন্য আমল করার সময় আল্লাহ তাআলা যে সফলতা দিবেন সেই ইয়াকিন অন্তরের মধ্যে রাখা। আর আমল করার সময় দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালা যে সফলতা দিবেন সেই সফলতা পাওয়ার নিয়তে আমল না করা। 

আমল তো শুধু হবে আল্লাহ তায়ালার রাজি খুশি আল্লাহতালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে দুনিয়ার ধন সম্পদ দুনিয়ার রাজত্ব দুনিয়ার সুখ শান্তির জন্য নয়।

আর যখন আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমল করব তখন আল্লাহ তা’আলা এই আমলের জন্য যে ওয়াদা করেছেন সে ওয়াদা আল্লাহতালা অবশ্যই অবশ্যই পূর্ণ করবেন। আল্লাহ তাআলার ওয়াদা সত্য আল্লাহ তাআলার ওয়াদা, আল্লাহতালা অবশ্য‌ই পূর্ণ করবেন।

দুনিয়া এই যোগ্যতাই রাখে না যে আমরা এই দুনিয়াকে পাওয়ার জন্য আমল করি। আখেরাত চিরস্থায়ী ।

আখেরাতে কিভাবে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারি কিভাবে জান্নাতে যেতে পারি সেটাকে সামনে রেখে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনিত জিন্দেগি জীবন যাপন করার মাধ্যমে ইখলাস একীনের সাথে যদি আমল করতে পারি, তখন আল্লাহ তা’আলা এই আমলের উপর যে ওয়াদা করেছেন সে ওয়াদা আল্লাহতালা পূর্ণ করবেন। 

আল্লাহতালার আমল এমনভাবে করা যেন আল্লাহ তায়ালাকে দেখতেছি। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে অন্তরের মধ্যে কমপক্ষে এতোটুকু যেন বিশ্বাস থাকে যে আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখতেছেন। এবং এভাবে আমল করা যে, আমার এই আমলটা আল্লাহতালার কাছে পছন্দনীয় হয়ে যায়।

আর এভাবে যদি চলা যায় তাহলে আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দিবেন । আর এটাই মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় সফলতা।