চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ কোনো আনন্দদায়ক বিষয় নয়, বরং এর মাধ্যমে মানব সম্প্রদায়কে ভয়াবহ কেয়ামতের কথা স্মরণ করানো হয়। ইসলাম বলে চন্দ্র-সূর্যের আলো নিষ্প্রভ হওয়া মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার অসীম কুদরতের খেলা, যা তিনি মানুষকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে করে থাকেন। যাতে তারা আল্লাহর দরবারে যাবতীয় পাপরাশি থেকে তওবা করে ফিরে আসে।
এ বিষয়ে প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘চন্দ্র-সূর্য আল্লাহ তাআলার ২টি বিরাট নিদর্শন।কারো জন্ম বা মৃত্যুতে তার আলো নিষ্প্রভ হয় না। বরং আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে মানুষকে ভীতি প্রদর্শন ও সতর্ক করেন। সুতরাং চন্দ্র-সূর্য আলোহীন হয়ে পড়লে তোমরা নামাজে দাঁড়িয়ে যাও এবং দয়াময় আল্লাহকে কায়মনোবাক্যে ডাক, যতক্ষণ না সে অবস্থার পরিবর্তন হয়’। (সহিহ বুখারি)
চন্দ্রগ্রহণ
চাঁদ এবং পৃথিবী নিজ নিজ কক্ষপথে চলার সময় সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ যখন একই সরলরেখায় আসে এবং সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে পৃথিবীর অবস্থান হয় তখন পৃথিবীর ছায়া গিয়ে পড়ে চাঁদের ওপর। পৃথিবী থেকে দেখলে কিছু সময়ের জন্য আংশিক অদৃশ্য হয়ে যায় চাঁদ। এই ঘটনাকেই চন্দ্রগ্রহণ বলা হয়।
কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে চন্দ্র-সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে এবং ২টিকে একত্রিত করা হবে। তাই চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ কোনো আনন্দদায়ক বিষয় নয়, বরং এর মাধ্যমে মানব সম্প্রদায়কে ভয়াবহ কেয়ামতের কথা স্মরণ করানো হয়। যাতে তারা গাফিলতি ত্যাগ করে আখেরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল (সা.) এর জামানায় একবার সূর্যগ্রহণ হলো। গ্রহণ শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে রাসূল (সা.) দ্রুত মসজিদের দিকে ধাবিত হলেন এবং সবাইকে মসজিদে আসতে আহ্বান জানালেন। তিনি নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ করলেন যে এই জামাতে আগে কখনো এমন করেননি। অতঃপর রুকুতে গেলেন এবং রুকু এত দীর্ঘ করলেন যা আগে কখনো করেননি। অতঃপর দাঁড়ালেন কিন্তু সিজদায় গেলেন না এবং দ্বিতীয় রাকায়াতেও কেরাত দীর্ঘ করলেন। অতঃপর আবার তিনি রুকুতে গেলেন এবং তা পূর্বের চেয়ে আরো দীর্ঘ করলেন। রুকূ সমাপ্ত হলে দাঁড়ালেন, এরপর সিজদায় গেলেন এবং তা এত দীর্ঘ করলেন যে, আগে কখনো এমনটা করেননি। অতঃপর সিজদা থেকে দাঁড়িয়ে প্রথম ২ রাকাআতের ন্যায় দ্বিতীয়বারও ঠিক একইভাবে নামাজ আদায় করলেন। ততক্ষণে সূর্যগ্রহণ শেষ হয়ে গিয়েছে। নামাজ সমাপ্ত হলে তিনি আল্লাহর হামদ (প্রশংসা) পেশ করে খুৎবা প্রদান করলেন। বললেন, সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর অগণিত নিদর্শন সমূহের মধ্যে ২টি নিদর্শন, কারোর মৃত্যু কিংবা জন্মগ্রহণের ফলে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয় না। অতএব, যখনই তোমরা চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষ করবে তখনই আল্লাহকে ডাকবে, তার বড়ত্ব ও মহত্ব প্রকাশ করবে এবং নামাজে রত হবে। (বুখারি: ১০৪৪, মুসলিম: ৯০১–আরবি সংস্করণ)
চন্দ্রগ্রহণ বা খুসুফের নামাজের নিয়ম সময়
কুসুফ ও খুসুফ শুরু হওয়া থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত এ নামাজের সময়। মুসল্লি তার নামাজ পূর্ণ করে নেবে যদিও কুসুফ ও খুসুফ অতিক্রান্ত হয়ে যায়। আর যদি নামাজ পড়ে শেষ করা হয়, কিন্তু কুসুফ ও খুসুফ বলবৎ থাকে তাহলে আবার নামাজ আদায়ের প্রয়োজন নেই। বরং দোয়া ও ইস্তিগফারে লিপ্ত থাকলেই চলবে।
চন্দ্রগ্রহণের নামাজ সুন্নত। কেননা প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা যখন চন্দ্র-সূর্যের আলো নিষ্প্রভ হতে দেখবে তখন নামাজ আদায় কর। (বুখারি ও মুসলিম)
এমনিভাবে প্রত্যেক ভীতিকর অবস্থাতে যেমন- প্রবল বাতাস প্রবাহকালে, অতিবৃষ্টি, গাঢ় অন্ধকার ইত্যাদি সময়ে নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। চন্দ্র গ্রহণের নামাজ কারো কারো মতে, সূর্য গ্রহণের নামাজের অনুরূপ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, যেহেতু এ নামাজ রাত্রিকালীন তাই ঘরে একাকী আদায় করা উত্তম। (বাদায়েউস সানায়ে)
অন্যান্য নফল নামাজের মতো ২ বা ৪ রাকাত নামাজ দীর্ঘ কেরাত, রুকু ও সেজদার মাধ্যমে আদায় করবে এবং নামাজ শেষে কায়মনোবাক্যে দোয়া ও ইস্তেগফার পড়বে। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, ‘নবী (সা.) সূর্য গ্রহণের নামাজ শেষে বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এসব নিদর্শন পাঠিয়ে মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করেন। সুতরাং তখন তোমরা দোয়া, ইস্তেগফার এবং জিকির-আজকারে রত থাক’। (বোখারি ও মুসলিম)।