উপনির্বাচন প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

ছয়টি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। আজ বুধবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।এরপর আর কেউ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা উত্থাপন করার সুযোগ পাবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাত্র কয়েক দিন আগে ছয়টি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। একটিতে জাতীয় পার্টি জিতেছে। একটিতে বিএনপির একজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন, তারপর তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হয়ে আজ সংসদে এসেছেন। তা ছাড়া একটা আমরা দিয়েছিলাম রাশেদ খান মেননকে। সেখানে জাতীয় পার্টি জিতে এসেছে। হাসানুল হক ইনুকে দিয়েছি বগুড়ায়; সেটা জিতে এসেছে। বগুড়া ও চাঁপাইয়ে দুই সিট নৌকা মার্কা জয়লাভ করেছে।’

উল্লেখ্য, বিএনপির এমপিদের পদত্যাগ করা ছয়টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে পদত্যাগ করা বিএনপির এমপি উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হন।

রংপুর মেয়র ইলেকশন নিয়ে কেউ অভিযোগ করতে পারেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে ইলেকশনে কিন্তু জাতীয় পার্টি জয়লাভ করেছে, আওয়ামী লীগ হেরে গেছে। কাজেই নির্বাচন যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুষ্ঠু হয়, অবাধ নিরপেক্ষ হয়—সেটাই কিন্তু এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি, এরপরে আর কেউ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা উত্থাপন করার সুযোগ পাবে না। কারণ, ক্ষমতায় থাকলেও মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আমরাই সংগ্রাম করেছি। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে সরকার পদ্মা সেতু করেছে। এটা চ্যালেঞ্জ ছিল। এই একটা সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে। যারা আগে মনে করত বাংলাদেশ কোনো দিন ওঠে দাঁড়াতে পারবে না, পঁচাত্তরের পর যারা এসেছিল তাঁদের সে প্রচেষ্টাই ছিল। আজকে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে। আমরা যে পারি, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’

সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা চালু করা হচ্ছে বলেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এখন দলিলপর্চা ঘরে বসে নিতে পারে। যেকোনো বিল ঘরে বসে দিতে পারে। দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।

পরিবেশদূষণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছোট এই ঢাকায় অসংখ্য মানুষ ও প্রচুর গাড়ি চলাচল করে। যার জন্য বায়ু ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা যারা ঢাকাকে খারাপ বলি, যারা বলি ঢাকা বসবাসের উপযোগী নয়—তারা তো ঢাকাতেই বাস করে। ঢাকা থেকে তো তারা বাইরে যায় না। তারপরও ঢাকায় থাকতে হবে। আমরা গালিও দেব, আবার থাকব—এটা কেমন কথা? এটা হয় না। ঢাকার বাইরে পরিবেশ অনেক পরিশুদ্ধ।’

তারপরও আমাদের প্রচেষ্টার অন্ত নাই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ঢাকার অনেক খাল ও ঝিল ছিল। যা আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া নষ্ট করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু হৃদয় আছে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় সহায়তার জন্য বাংলাদেশ থেকে মেডিকেল টিম, ওষুধ, শুকনা খাবার পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশ সাধ্যমতো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।’
 
রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ভাষণটাই বোধ হয় তাঁর শেষ ভাষণ। কারণ, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী কেউ পরপর দুবারের বেশি রাষ্ট্রপতি থাকতে পারেন না।’ রাষ্ট্রপতি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি শুরু করেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি অত্যন্ত প্রাণবন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর সময়ে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছেন এবং ভাষণ দিয়ে গেছেন।’ স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার হিসেবেও তিনি সংসদকে প্রাণবন্ত রেখেছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে সফল ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।