নবী (আ)গণ নবী হওয়ার পূর্বেই কুফর, শিরক এবং সব ধরনের অশ্লীল, অসত্য ও অবাঞ্ছনীয় কথা ও কাজ থেকে পাক-পবিত্র থাকেন। শুরু থেকেই এ মহাত্মাগণের পবিত্র কলব তাওহীদ, আল্লাহভীতি, আল্লাহপ্রেম ও আধ্যাত্মিকতায় ভরপুর থাকে। এটা কি করে সম্ভব যে সমস্ত মহান ব্যক্তিত্ব অচিরেই কুফর ও শিরক নিশ্চিহ্ন করা এবং সমস্ত অশ্লীল ও অসত্য থেকে উদ্ধারপ্রাপ্তি এবং মানুষকে কল্যাণের প্রতি দাওয়াত দেয়ার বিরাট দায়িত্ব নিয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত হতে যাচ্ছেন, হতে যাচ্ছেন তাঁর পছন্দনীয় প্রিয় বান্দা, তাদের পক্ষে এসবে জড়ানো আদৌ স্বাভাবিক নয়। তাই খোদ মহানবী (সা)-এর পক্ষেও (নাউযুবিল্লাহ্) মহান নবুয়াতের সৌভাগ্য, সম্মান ও মর্যাদালাভের পূর্ববর্তী সময়ে কুফর ও শিরকের নাপাকীতে জড়িত হওয়া এবং অশ্লীল ও অসত্যের নোংরামীতে আচ্ছন্ন হওয়া কি করে সম্ভব? নিশ্চয়ইই এটা অবাস্তব এবং তাঁর জন্যে অসম্ভব। নবী (আ)গণ নবূয়াত ও রিসালত লাভের পূর্বে যদিও নবী-রাসূল অভিধায় আখ্যায়িত হন না, তাঁরা অবশ্যই উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন আউলিয়া এবং আরিফ’ মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন। এ মর্যাদার লোকেরা আল্লাহ সম্পর্কীয় জ্ঞানে অজ্ঞ থাকেন না, আর না তাঁরা আল্লাহর কোন গুণ সম্পর্কে অবাস্তব বিভ্রান্তির শিকার হন; তেমনি কোন শোবা-সন্দেহও তাঁদের স্পর্শ করে না।
সার কথা এই যে, মহান নবী (আ)গণের পবিত্র আত্মা শুরু থেকেই সর্বপ্রকার কুফর, শিরক এবং সব ধরনের অশ্লীল ও অসত্য থেকে পাক-পবিত্র হয়ে থাকে। শুরু থেকেই তা থাকে সরল সুপথে প্রতিষ্ঠিত আবিলতা। প্রকৃতিগতভাবেই তাঁরা সর্বপ্রকার অন্যায় ও খারাবীকে ঘৃণ্য ও অপসন্দনীয় মনে করেন।
যেহেতু নবুয়াত ও রিসালাতের মর্যাদা তার জন্য নির্দিষ্ট হয়েই ছিল, এজন্য আল্লাহ তা’আলা শুরু থেকেই তাঁর পবিত্র কলবকে ঐ সমস্ত বস্তুর প্রতি বিদ্বিষ্ট ও নিস্পৃহ করে রেখেছেন, যে সমস্ত বন্ধু নবুয়াত ও রিসালাতের মর্যাদার পরিপন্থি ও বিরোধী ছিল। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা’আলা তাঁকে যৌবন ও বার্ধক্য দান করেন। নবূয়াতের সময় যখন আসন্ন হলো, তখন সত্য ও সৎ স্বপ্ন তাঁকে দেখা দিতে শুরু করলো। ‘নবী’ শব্দটি ‘নাবা’ থেকে গৃহীত। আরবী অভিধানে ‘নাবা’ ঐ খবরকে বলা হয়, যা মর্যাদাপূর্ণ এবং সম্পূর্ণ সত্য ও ঘটনার যথার্থ বর্ণনা হয়ে থাকে। সাধারণ খবরকে ‘নাবা’ বলা হয় না। আর নবীকে এজন্যে নবী বলা হয় যে, ওহীর দ্বারা অদৃশ্য খবর, যা নেহায়েত মর্যাদাপূর্ণ, সম্পূর্ণ সত্য ও বাস্তব-ভিত্তিক, কখনো যা মিথ্যা হয় না, নবীকে ওহী দ্বারা এমন খবরই দেয়া হয়ে থাকে।
“মহানবী (সা)-এর প্রতি সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে ওহীর সূচনা হয়। তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন, তা প্রভাতের রশ্মির মত স্পষ্ট প্রতিভাত হতো।”
ইবন জামরাহ বলেন, সত্য স্বপ্নের সাথে প্রভাত রশ্মির উপমা এজন্যে দেয়া হয়েছে যে, ঐ সময় পর্যন্ত নবূয়াতের সূর্য উদিত হয়নি। যেভাবে প্রভাতের রশ্মি সূর্যোদয়ের পূর্বাভাস, অনুরূপভাবে সত্য স্বপ্ন নবৃয়াত ও রিসালতের সূর্যোদয়ের পূর্বাভাস ছিল।
সুবহে সাদিকরূপী সত্য স্বপ্ন এ সুসংবাদ দিচ্ছিল যে, অচিরেই নবুয়াতের সূর্য উদিত হতে যাচ্ছে। আর এভাবে প্রভাতরশ্মি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে, শেষ পর্যন্ত নবূয়াতের সূর্য ফারান পর্বতের চূড়ায় উদিত হয়। যিনি অন্তর চোখে দেখতে সক্ষম ছিলেন। যেমন হযরত আবূ বকর (রা), তিনি এগিয়ে আসেন এবং নবূয়াতের সূর্যের রশ্মি দ্বারা উপকৃত হন। আর যে চামচিকা সদৃশ্য অন্ধ ছিল, যেমন আবূ জাহল, নবূয়াতের সূর্য উদিত হতেই সে চামচিকার ন্যায় চক্ষু বন্ধ করে এবং নবূয়াত ও রিসালতের বিশ্বময় ব্যাপ্ত সূর্যরশ্মি থেকে আলোক গ্রহণে ব্যর্থ হয়।
ফারান পর্বতের চূড়া থেকে রিসালাতের সূর্যোদয়
এমনকি যখন তাঁর বয়স চল্লিশ বছরে পৌঁছল, নিয়মানুযায়ী একদিন তিনি হেরা গুহায় এলেন। ঘটনাক্রমে এক ফিরিশতা গুহার ভিতরে এলেন এবং তাঁকে সালাম দিলেন। এরপর বললেন, ।। পড়ন। তিনি বললেন, আমি পড়তে জানি না। [নবী (সা) বলেন] এতে ঐ ফিরিশতা আমাকে কঠিনভাবে আলিঙ্গন করলেন যে, আমার কষ্টের কোন অন্ত ছিল না। এরপর ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, । পড়ুন । আমি পুনরায় জবাব দিলাম । আমি পড়তে জানি না।
সূত্র: সীরাতুল মুস্তফা সা.
সংকলনে: আহমাদ আল গাজী