পয়গাম ডেস্ক : আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২
তুষারঝড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তুষারঝড় সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির মন্টানা অঙ্গরাজ্যের অবস্থা এতটাই হিমশীতল যে, বাতাসে গরম পানি ছুড়লে মুহূর্তেই সেটা তুষারে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। একটি টুইট ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি বাতাসে গরম পানি ছুড়ছেন। আর মুহূর্তেই সেটা তুষারে পরিণত হচ্ছে। খবর রয়টার্স ও বিবিসির।
যুক্তরাষ্ট্রে বড়দিনের ছুটি শুরু হওয়ার আগে ব্যাপক ও তীব্র শীতকালীন ঝড়ে তুষার মুষ্টির কবলে পড়েছে প্রায় ২০ কোটি মানুষ, ইতোমধ্যেই অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ের কারণে শুক্রবার ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে। বিবিসি জানিয়েছে, সাউথ ডাকোটায় ভারি তুষারপাতের কারণে আটকা পড়া আমেরিকার স্থানীয় নৃগোষ্ঠীর কিছু বাসিন্দা জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার পর জামাকাপড়ে আগুন ধরিয়ে নিজেদের উষ্ণ রাখার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে। ঝড়ের তাণ্ডব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে কানাডার অন্টারিও ও কুইবেক প্রদেশে, এখানে লাখ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। দেশটির বাকি অধিকাংশ অংশে, ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে নিউফান্ডল্যান্ড পর্যন্ত, চরম শৈত্য প্রবাহ ও শীতকালীন ঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার বায়ুমণ্ডলের চাপ দ্রুত কমে গিয়ে ঝড়টি ‘বোম্ব সাইক্লোনের’ রূপ নেয়, এতে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তে তুষার ঝড়ের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া বিভাগ (এনডব্লিউএস) জানিয়েছে, টেক্সাস থেকে মেইন পর্যন্ত ছড়ানো বিশাল এই ঝড়টির বিস্তৃতি ৩২০০ কিলোমিটার, এটির শুক্রবারের মানচিত্র ‘এ পর্যন্ত শীতকালীন আবহাওয়া সতর্কতা ও পরামর্শের সবচেয়ে বড় একটি বিস্তৃতি চিত্রিত করেছ’। উত্তর আমেরিকাজুড়ে তুষারঝড় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিশাল অংশজুড়ে তাপমাত্রা মারাত্মকভাবে কমেছে। মন্টানা অঙ্গরাজ্যের এলক পার্কে তাপমাত্রা মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। মিশিগানের হেল শহর কয়েক ইঞ্চি তুষারে ঢাকা পড়েছে। শুক্রবার রাতে সেখানে তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে কনকনে ঠান্ডা আর তীব্র তুষারপাতে নাকাল যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এবার আরো বড় বিপদের মুখে পড়ছে। খ্রিষ্টীয় ধর্মোৎসব বড়দিনের আগেই ভয়ংকর তুষারঝড় বোম্ব সাইক্লোনের মুখে পড়ছে শীতপ্রধান দেশ দুটি।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের (এনডব্লিউএস) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার সকালের মধ্যেই বোম্ব সাইক্লোন আছড়ে পড়বে দেশে। এর দুদিন আগেই একই হুঁশিয়ারি দেন কানাডার আবহাওয়াবিদরাও। তাপমাত্রা খুব দ্রুত নামতে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মাত্র পাঁচ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে অনাবৃত ত্বকে ফ্রস্টবাইট হতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাধারণত রক্ত প্রবাহ কমে গেলে, প্রায়শই নাক, গাল বা হাত পায়ের আঙুলে ফ্রস্টবাইট হতে পারে। শরীরে উষ্ণ রক্ত প্রবাহের অভাবে ত্বকের টিস্যু জমে গিয়ে ফেটে যেতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে অঙ্গহানি পর্যন্ত হতে পারে। প্রতি বছরই এই সময় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় তাণ্ডব চালায় এই বরফের ঘূর্ণিঝড়। তছনছ করে দেয় বিস্তীর্ণ এলাকা। এখনই তাপমাত্রার পারদ নেমে গেছে হিমাঙ্কের ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে। কনকনে ঠান্ডায় তুমুল ঝড়ো হাওয়ায় বিধ্বস্ত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বরফ জমেছে রাস্তাঘাটে। যান চলাচল বিপর্যস্ত। বাতিল করা হয়েছে চার হাজারের বেশি ফ্লাইট। শীতকালীন এই ঝড়ের প্রভাবে দেশটিতে গড় তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে মাইনাস ৪০ থেকে ৫৬ ডিগ্রি সেলিয়াসে। আগামী কয়েক দিন দেশটির বেশির ভাগ অংশে বিপজ্জনক ঠান্ডা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। বিবিসি, রয়টার্স।