কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির গুলিতে ১ সেনাসদস্য নিহত, আহত ২ : আইএসপিআর

বান্দরবানের রুয়াংছড়ির দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির অতর্কিত গুলিবর্ষণে একজন সেনাসদস্য নিহত এবং দুইজন আহত হয়েছেন।
আজ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে।  
আইএসপিআর জানায়, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩ ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মা ও শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে যাওয়া দলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাসদস্যদের ওপর রোববার আনুমানিক বেলা ১টায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং দুই সেনা সদস্য আহত হয়। আহতরা বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।’
আইএসপিআর জানায়, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন বিগত ৩০ বছর যাবৎ অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার পিতার নাম মৃত শমসের আলী। তিনি রংপুর সদরের ঘাঘটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি ইতোপূর্বে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’-এর মত একটি জঙ্গী গোষ্ঠীকেও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পাহাড়ি এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকার সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বান্দরবানের থানচি সড়ক নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে। এ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম প্রতিহত করতে কেএনএ সন্ত্রাসী দলটি সড়ক নির্মাণ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত অসামরিক ঠিকাদার, মালামাল সরবরাহকারী এবং শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে ও কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ কাজ চলমান থাকায় কেএনএ গত ১১ মার্চ ১২ জন শ্রমিককে অপহরণ করে। এদের মধ্যে একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয় এবং চার জন শ্রমিক এখনও জিম্মি রয়েছ। কেএনএ বাকি ৭ শ্রমিককে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিলেও তাদের সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করার হুমকি দেয় এবং ১২ মার্চ সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর গুলিবর্ষণ করে।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের তিন উপজেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধের জন্য কেএনএ পরিবহন মালিক সমিতিকে হুমকি দিয়ে নোটিশ জারি করে। কেএনএ সদস্যদের বিবিধ সন্ত্রাসী কর্মকা- দ্বারা সৃষ্ট নিরাপত্তাজনিত কারণে গত রোববার ওই এলাকায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। এছাড়াও কেএনএ’র নির্যাতনে স্থানীয় বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। কেএনএ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি, মাদক চোরাচালান, অপহরণ ও নৃশংস হত্যাকান্ডের কারণে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড, বেসরকারি বিনিয়োগ ও পর্যটন শিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যার সূদুরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। কেএনএ’র এই অপতৎপরতা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে এবং সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিঘিœত করছে বলে আইএসপিআর জানায়।