খতমে নবুওতের আকীদা সংরক্ষণে সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে: তাহাফফুজে খতমে নবুওত লন্ডন

গত ৫ নভেম্বর রবিবার লন্ডনে “খতমে নবুওত প্রশিক্ষণ কর্মশালা” শিরোনামে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এক অসাধারণ সম্মেলন। সর্বদলীয় দ্বিনী নেতৃত্বের সমন্বয়ে গঠিত “মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওত লন্ডন” কর্তৃক আয়োজিত এ গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সুশৃংখল ভাবে বিকাল ছয়টা থেকে একাধারে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। সময়োপযোগী এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান সহ কয়েকটি দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উলামায়ে কেরাম ও সকল পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ও বৃহদায়তন হলে যুগসচেতন নবীপ্রেমিক দের উপচেপড়া ভিড় ছিল বিশেষভাবে উপভোগ্য। নবী প্রেমের নযরানা, ভন্ড নবুওতের দাবিদারদের অপতৎপরতা রুখে দাঁড়ানোর উদ্দীপনা এবং নতুন উদ্যমে খতমে নবুওতের আকীদা সংরক্ষণে আরো বেশী কাজ করার জন্য প্রাণচাঞ্চল্যের একটা ছাপ প্রোগ্রামে অংশ নিতে আসা সকল উপস্থিতির মধ্যে সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত ছিলো। প্রোগ্রামে উপস্থাপিত আলোচনা ও বক্তব্যসমূহ
অপরিকল্পিত গতানুগতিকতার পরিবর্তে নির্ধারিত বিষয়ভিত্তিক, প্রশিক্ষণমূলক এবং পাওয়ারপয়েন্ট দ্বারা সজ্জিত হওয়ায় উপস্থিত সবাই প্রামাণ্য দলীলের সাবলীল উপস্থাপনা দ্বারা মুগ্ধ হয়েছেন অনেক বেশি।


নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভক্তি ও ভালোবাসার আবেগ উচ্ছ্বাস এবং মিথ্যাও ভন্ড নবুওতের দাবিদারদের অপতৎপরতা আইনানুগ পদ্ধতিতে রুখে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে অনুষ্ঠিত
গুরুত্বপূর্ণ এপ্রশিক্ষণ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত লন্ডন এর সভাপতি মাওলানা গোলাম কিবরিয়া। সঞ্চালনায় ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ ও প্রচার সম্পাদক মাওলানা আবদুল বাসিত। স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে লন্ডন তথা বৃটেনে খতমে নবুওত সংরক্ষণ ও ঈমান বিধ্বংসী দাজ্জালী ফিতনার হেকমত পূর্ণ মোকাবেলার অপরিসীম গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা পেশ করেন তাহাফফুজে খতমে নবুওত লন্ডন এর সেক্রেটারী জেনারেল মুফতি আবদুল মুনতাকিম।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ভারত থেকে আগত মাদানী পরিবারের সুর্য সন্তান, আওলাদে রাসূল মাওলানা মুফতি আফফান মনসূরপূরী, গাজা- ফিলিস্তিনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দিক নির্দেশনা মূলক আলোচনা উপস্থাপন করেন আলখায়ের ফাউন্ডেশন ও ইকরা টিভি গ্রুপের চেয়ারম্যান মাওলানা ইমাম কাসিম রশীদ আহমদ। খতমে নবুওতের সর্ববাদী সম্মত আকীদা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক গবেষণামূলক বিষয়াদি সম্পর্কে অত্যন্ত তথ্যবহুল আলোচনা পেশ করেন শায়খুল হাদীস মাওলানা মুফতি আবদুর রহমান মনোহরপূরী, বিখ্যাত স্কলার মুফতি আবদুর রাহমান মাঙ্গেরা, মাওলানা ইমদাদুর রাহমান আল মাদানী,
খতমে নবুওত একাডেমী লন্ডনের পরিচালক মাওলানা সূহেল বাওয়া, বিশিষ্ট লেখক গবেষক মাওলানা মাহফুজ আহমদ, মাওলানা আবদুল বাসিত ও মাওলানা শিব্বীর আহমদ প্রমুখ। সভায় বিশেষ আলোচক হিসেবে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন লুটন থেকে আগত বিশিষ্ট আলেম মাওলানা মুফতি খালেদ মাহমুদ, তাহাফফুজে খতমে নবুওত লন্ডন এর অন্যতম উপদেষ্টা মাওলানা আবদুল কাদির সালেহ, মাওলানা ডক্টর শুয়াইব আহমদ, মাওলানা সৈয়দ আশরাফ আলী, সারে মুসলিম সেন্টারের ইমাম ও খতীব মাওলানা আবদুররব, তাহাফফুজে খতমে নবুওত লন্ডন এর সহ-সভাপতি মাওলানা সাদিকুর রহমান, মাওলানা ফয়েজ আহমদ ও মুফতি মাওসূফ আহমদ প্রমুখ। সংগঠনের উপদেষ্টা, কাউন্সিল অফ মস্ক লন্ডন এর চেয়ারম্যান মাওলানা হাফিজ শামছুল হকের উপদেশ ও দীর্ঘ মোনাজাতের মাধ্যমে সফল এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি হয়। মোনাজাতের মধ্যে মজলুম ফিলিস্তিনীদের জন্য কায়মনোবাক্যে আল্লাহর সমীপে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়।


সভায় বক্তাগণ তাঁদের স্বারগর্ভ, তথ্য সমৃদ্ধ ও দালীলিক আলোচনায় বলেন,
আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে যোগ্যতা, উপযোগিতাও প্রয়োজনের ভিত্তিতে কালক্রমে বিভিন্ন শরীয়ত দিয়েছেন। আর এর পূর্ণতা ও পরিসমাপ্তি বিধান করেছেন রাসূলে কারীম হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। দ্বীনের পূর্ণাঙ্গতা লাভের পর যেহেতু এতে কোনোরূপ সংযোজন ও বিয়োজনের প্রয়োজন বা অবকাশ নেই, তাই মানবজাতির জন্য নতুন শরীয়তেরও প্রয়োজন নেই। সুতরাং আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূল প্রেরণের ধারা শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে চিরকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা ইসলামের অন্যতম মৌলিক বিশ্বাস। এই বোধ- বিশ্বাসকেই পরিভাষায় “খতমে নবুওত” এর সর্ববাদী সম্মত আকীদা আখ্যায়িত করা হয়। মুমিন- মুসলমান হতে হলে এই বিশ্বাস বা আকীদা অন্তরে বদ্বমূল থাকা আবশ্যক। বিষয়টিকে
এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে বুঝিয়েছেন যে, ‘‘আমার ও নবীদের উদাহরণ এমন একটি প্রাসাদ, যা খুব সুন্দর করে নির্মাণ করা হয়েছে, তবে তাতে একটি ইটের জায়গা খালি রেখে দেওয়া হয়েছে। দর্শকবৃন্দ সে ঘর ঘুরে ফিরে দেখে, আর ঘরটির সুন্দর নির্মাণ সত্ত্বেও সেই একটি ইটের খালি জায়গা দেখে আশ্চর্য বোধ করে (যে, এতে একটি ইটের জায়গা কেন খালি রইল!) আমি সেই একটি ইটের খালি জায়গা পূর্ণ করেছি। আমার দ্বারা সেই প্রসাদের নির্মাণ পরিসমাপ্ত হয়েছে, আর আমার দ্বারা রাসূলদের সিলসিলা পরিসমাপ্ত করা হয়েছে।’’ অপর এক রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে, ‘‘আমি হলাম সেই খালি জায়গার পরিপূরক ইটখানি। আর আমি হলাম সর্বশেষ নবী।’’


এভাবে কুরআনের অসংখ্য আয়াত ও অজস্র হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ইসলামের অন্যতম মৌলিক আকীদা হলো, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানব জাতির হেদায়াতের জন্য প্রেরিত সর্বশেষ নবী। তাঁর পর আর কোনো নবী প্রেরিত হবেন না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সরল প্রাণ মুসলমানদের কে ঈমান হারা করার জন্য, অকাট্য বিধি বিধানে পরিবর্তন- পরিবর্ধনের মাধ্যমে ইসলামের আসল রূপ নষ্ট করে দেয়ার নীল নকশা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে যুগে যুগে ভন্ড নবুয়তের দাবিদারদের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে। ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে এসব ভন্ড নবুয়তের দাবিদারদের বিরুদ্ধে সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত এই উম্মাহ সর্বোচ্চ কোরবানির পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে আসছে। ছলচাতুরি, প্রতারণা ও দলিল বিকৃতির অন্তরালে ইসলামের যে সব দুশমনেরা খতমে নবুওতের সর্ববাদী সম্মত আকীদাকে বিনষ্ট করে দিতে ব্যস্ত, তাদের মুখোশ উন্মোচন ও দালীলিক খন্ডন সর্ব যুগে অত্যন্ত সফলভাবে করেছেন সমকালীন ইমাম ও উলামায়ে কেরাম। আজ বাংলাদেশ সহ দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে এই ধ্বংসাত্মক ফিতনা আহমদী মুসলিম ইত্যাদি লেভেল নিজেদের জন্য ব্যবহার করে ইসলামের মৌলিক অকাট্য আকীদা বিশ্বাসের উপর মারাত্মক কুঠার আঘাত হানতে ব্যস্ত। ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্মক এ ষড়যন্ত্রের যথাযথ মোকাবেলা ঈমান রক্ষার জন্য সময়ের সবচেয়ে বড় ঈমানী দাবি, সন্দেহ নেই। মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওত লন্ডন, মহানবী ও শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর সরাসরি ন্যাক্কারজনক হামলার সফল মোকাবেলা করে মুসলমানদের ঈমান রক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখতে চায়। এ চেষ্টা, দল মত নির্বিশেষে সকল মুসলমানের উপর একটা ফরজ দায়িত্ব। মহান এদায়িত্ব পালনে সকল কে মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওত লন্ডন এর ব্যানারে যুগোপযোগী নিয়মে কাজ করে যাওয়ার এবং প্রতিটি কর্মসূচিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য কর্মশালা থেকে বিশেষ ভাবে আহ্বান জানানো হয়।