খানকায়ে মাদানিয়ায় ৩ দিনের জোড় অনুষ্ঠিত

৪ই ডিসেম্বর রোজ রবিবার বাদ ফজর আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে খানকায়ে মাদানিয়ার উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিন ব্যাপী ৬ষ্ঠ বার্ষিক ইসলাহি ও তালিমি জোড়।

৩০শে নভেম্বর বুধবার দিবাগত রাত থেকে অত্র খানকাহর মুতাওয়াল্লী ফিদায়ে মিল্লাত সাইয়্যিদ আস’আদ মাদানী রহ. এর বিশিষ্ট খলিফা মুফতি আনোয়ার মাহমুদের সভাপতিত্বে ও মুফতি মুস্তাকিম বিল্লাহর সঞ্চালনায় খানকায়ে মাদানিয়া প্রাঙ্গণে শুরু হয় ইসলাহি জোড়ের কার্যক্রম। জোড়ে অংশ গ্রহণের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য সালেকিন জামাতবদ্ধ ভাবে তিন দিন থাকার জন্য আগমন করেন। এছাড়াও স্থানীয় মানুষদের আগমনে জোড় ছিল প্রাণবন্ত। প্রত্যেক নামাজের পর মাসনুন সূরা পাঠ সহ বাদ ফজর ও বাদ মাগরিব শায়খের নিজস্ব তত্বাবধানে ছয় তাসবিহর জিকিরের আমল সম্পাদিত হয় এবং সময়ে সময়ে তিনি চার তরিকার উপর সালেকিনদের বাইয়াত নেন। সালেকিনদের এই মহতী আয়োজনে নামাজ, তেলাওয়াত, জিকির ও তাসবিহ তাহলিলের প্রশিক্ষণ সহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে তালিম দেওয়া হয়।

চতুর্থ দিন ফজরের পর অত্র খানকাহর মুতাওয়াল্লী মুফতি আনোয়ার মাহমুদ হাফি. এর ইসলাহি বয়ানের পর বাদ ইশরাক আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় এবারের ইসলাহি ও তালিমি জোড়।

সভাপতির বক্তব্যে মুফতি আনোয়ার মাহমুদ বলেন—”আল্লাহ ওয়ালাদের জীবনের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন তারা জীবনের সমস্ত ব্যস্ততাকে দূরে ঠেলে একটা সময় একমাত্র আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরি করার জন্য বরাদ্দ করেছেন। মানুষ যখন দৈনিক এই মেহনত আধা ঘন্টা, এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা করে করবে—তখন চব্বিশ ঘন্টা আল্লাহর সাথে অন্তরের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠবে। এমন গভীর সম্পর্ক অনুভব হবে যে, ঘুমের মধ্যেও তার কলবের সম্পর্ক আল্লাহ তা’আলার সাথে থাকবে। আর এটা অর্জন হওয়ার প্রথম শর্ত কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশিত পথে শরীয়ত মোতাবেক চলা।” 

তিনি আরও বলেন—”প্রতিটি মানুষকে আল্লাহ তায়ালা জন্মগতভাবে যে যোগ্যতা দান করেছেন তা কাজে লাগাতে হবে। আফসোস! স্বর্ণ-রৌপ্যের খনির ন্যায় প্রতিটা মানুষের মাঝে আল্লাহ তাআলা যোগ্যতার খনি দিয়েছেন। কেউ তার যোগ্যতাকে কুস্তি খেলায় কাজে লাগিয়ে বনে যায় বিরাট খেলোয়াড়, তার যোগ্যতা প্রদর্শিত হয় খেলার মধ্যে। এমনিভাবে প্রত্যেকেই তার যোগ্যতাকে কোনো না কোনো কাজে ব্যয় করছে। কিন্তু যারা তাদের যোগ্যতাকে সংরক্ষণ করে, এই যোগ্যতাকে আসল কাজে অর্থাৎ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের কাজে লাগিয়েছে, তাদেরকে আল্লাহ এই সম্পর্কের কারণে অনেক দিক দিয়ে তারাক্কি দান করেছেন।

রাসূল সাসল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

সোনা-রূপার খনির ন্যায় মানবজাতিও খনিবিশেষ। 

স্বর্ণ-রৌপ্যের খনি থেকে যেমন উপাদান বের করতে চেষ্টা করতে হয়, তেমনি মানুষের মধ্যে থাকা যোগ্যতার খনি বের করার জন্যও চেষ্টা প্রয়োজন। যদি খনি বের না করা হয় তবে এই খনি থেকে কী লাভ! লাভ তো তখনই হবে যখন তা উত্তোলন করা হবে। আল্লাহ তাআলা মানুষের মধ্যে যে যোগ্যতাগুলো দান করেছেন, সেগুলির বিকাশ ঘটাতে হবে। কেউ ভালো ভাবে তা কাজে লাগায়, কেউ খারাপ ভাবে কাজে লাগায়। কেউ আবার হারামের রাস্তায় অনেক উপরে চলে যায়।”

এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন—ফিদায়ে মিল্লাত সাইয়্যিদ আস’আদ মাদানী রহ. এর বিশিষ্ট খলিফা মুফতি হাফিজুদ্দীন, গফরগাঁও ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান সালমানি, শায়খে ইমামবাড়ি আব্দুল মুমিন রহ. এর প্রধান খলিফা মুফতি মাহবুবুল্লাহ, জামিয়া ইসলামিয়া মাজহারুল উলুমের মুহতামিম মাওলানা লোকমান মাযহারী, মুফতি নুরুল্লাহ রহ. এর সুযোগ্য সাহেবজাদা মুফতি সিবগাতুল্লাহ নূর, শায়খে ইমামবাড়ি রহ. এর বিশিষ্ট খলিফা মুফতি ইকবাল মাহমুদ, জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ, মুফতি রেজওয়ানুর রহমান, মুফতি মোহাম্মদ আলী, মুফতি বায়জিদ মাহমুদ, মুফতি ইউসুফ জামিল ও মাওলানা তাওহিদুল ইসলাম প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম।