খানকায়ে মাদানিয়ার ৭ম বার্ষিক ইসলাহি ও তালিমি জোড় অনুষ্ঠিত

২৬ শে নভেম্বর রোজ রবিবার বাদ ফজর আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে খানকায়ে মাদানিয়ার উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিন ব্যাপী ৭ম বার্ষিক ইসলাহি ও তালিমি জোড়।

২৩ শে নভেম্বর বুধবার দিবাগত রাত থেকে অত্র খানকাহর মুতাওয়াল্লী ফিদায়ে মিল্লাত সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী রহ. -এর বিশিষ্ট খলিফা মুফতি আনোয়ার মাহমুদের সভাপতিত্বে ও মুফতি বায়জিদ মাহমুদের সঞ্চালনায় খানকায়ে মাদানিয়া প্রাঙ্গণে শুরু হয় ৩ দিনের ইসলাহি জোড়ের কার্যক্রম। জোড়ে অংশ গ্রহণের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য সালেকিন জামাতবদ্ধ ভাবে তিন দিন থাকার জন্য আগমন করেন। এছাড়াও স্থানীয় মানুষদের আগমনে জোড় হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। ৩ দিনের কর্মসূচিতে তাহাজ্জুদের পর ১২ তসবিহ জিকিরের আমলের মাধ্যমে দৈনন্দিন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রত্যেক নামাজের পর মাসনুন সূরা পাঠ সহ বাদ ফজর ও বাদ মাগরিব শায়খের নিজস্ব তত্বাবধানে ছয় তাসবিহর জিকিরের আমল সম্পাদিত হয় এবং সময়ে সময়ে তিনি চার তরিকার উপর সালেকিনদের বাইয়াত নেন। সালেকিনদের এই মহতী আয়োজনে নামাজ, তেলাওয়াতের মাশক, জিকির ও তাসবিহ তাহলিলের প্রশিক্ষণ সহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে তালিম দেওয়া হয়।

চতুর্থ দিন ২৬ শে নভেম্বর ফজরের পর খানকার মুতাওয়াল্লী মুফতি আনোয়ার মাহমুদ দা.বা. -এর ইসলাহি বয়ানের পর বাদ ইশরাক আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্তি হয় এবারের ইসলাহি ও তালিমি জোড়।
এ জোড়ে খানকায়ে মাদানিয়ার তত্ত্বাবধানে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মুফতি আনোয়ার মাহমুদ দা.বা. অনূদিত ও সংকলিত “মালফুজাতে হজরত মাদানি”। একজন সালিকের জন্য তরিকতের পথে চলতে গিয়ে যে সমস্যাগুলো আসে, সেগুলোর প্রেক্ষিতে শাইখের নির্দেশনা কী, এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা রয়েছে বইটিতে। এই বইয়ে সংকলিত হয়েছে উপমহাদেশের বিখ্যাত বুজুর্গ, শাইখুল আরব ওয়াল আজম, সাইয়িদ হুসাইন আহমাদ মাদানি রহ.- এর মালফুজাত।

সমাপনী নসিহতে মুফতি আনোয়ার মাহমুদ বলেন,
“মুসলমানরা আজ ফেৎনায় জর্জরিত। ঈমান ধ্বংসের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বিধর্মীরা ওঁৎ পেতে বসে আছে। এই ফেৎনা থেকে বেঁচে দ্বীনের উপর অটল অনড় থাকার জন্য আজ থেকে চৌদ্দশ বছর আগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কে অসিয়ত করে গেছেন যে— তাকওয়ার উপর থাকো, দ্বীনের উপর থাকো! এছাড়া আর কোন রাস্তাও নেই। নাজাত ও দ্বীনের পথ একটাই সেটা হল—তাকওয়ার পথ। তাকওয়াই হল মানুষের মূল সম্পদ। তাকওয়ার প্রথম অর্থ হচ্ছে, ঈমান আনা (কুফর-শিরক থেকে বাঁচা), দ্বিতীয়ত সমস্ত কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচা। তৃতীয়ত, নিজের অন্তরকে একমাত্র আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করে রাখা। সবসময় অন্তরে আল্লাহর উপস্থিতি উপলব্ধি করা। এটার জন্যই সুলুকের এই বিভিন্ন স্তরের জিকির। শরীয়তের উপর আমল, ছয় তাসবিহের জিকির, বারো তাসবিহের জিকির, ইসমে জাতের জিকির, পাসআনফাসের জিকির, কলবের জিকির, মুরাকাবার জিকির ও মুশাহাদার জিকির। এই আমলগুলোর মাধ্যমে আস্তে আস্তে বান্দা আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছায়। অন্তরের মধ্যে এই হালতটা আনার জন্য সালেকের মেহনত করতে হয়। আর এই মেহনতের নামই হলো সুলুক ও তাসাউফ।
কাজেই আমরা এখানে এই তিন দিন যে নেজামের মধ্যে চলেছি—সে অবস্থায় সারা বছর চলার জন্য চেষ্টা করি। সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করি। আল্লাহকে মহব্বত করি। আল্লাহর জন্য সব করি। দুনিয়ার মধ্যে মন না লাগিয়ে পরকালের দিকে আমাদেরকে মনোযোগ হওয়া উচিত।”
আখেরি মুনাজাতে বিশ্বের সকল মুসলমানদের জন্য দোয়া করা হয় এবং বিশেষকরে ইহুদি দখলদারদের নিয়ন্ত্রিত মসজিদুল আকসা ও নির্যাতিত গাজাবাসীর জন্য দোয়া করা হয়।

এছাড়া আরও ইসলাহি নসিহত পেশ করেন—ফিদায়ে মিল্লাত সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী রহ. এর বিশিষ্ট খলিফা মুফতি হাফিজুদ্দীন, জামিয়া হোসাইনিয়া দুগাছিয়ার মুহতামিম মাওলানা মাহমুদুল হাসান সালমানি, শায়খে ইমামবাড়ি আব্দুল মুমিন রহ. এর অন্যতম খলিফা মুফতি মাহবুবুল্লাহ, মুফতি ইকবাল মাহমুদ, খানকায়ে মুহিব্বিয়া মাদানিয়ার মুতাওয়াল্লি মুফতি মোহাম্মদ আলী, দারুল হুদা মহিউস সুন্নাহ পুখুরিয়ার মুহতামিম মুফতি হেমায়েতুল ইসলাম, জামিয়া এমদাদিয়া কিশোরগঞ্জের মুহাদ্দিস, মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ, মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামির মুহাদ্দিস মুফতি ইউসুফ জামিল প্রমুখ এবং আরো দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম উপস্থিত হোন।