গাজায় রমজানের অপেক্ষা করছে না কেউ, এমনিতেই সবাই উপোস!

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা শহরের উত্তর-পূর্বে আল-সাহাবা মার্কেটের পশ্চিম দিকে একটি দেয়ালে লেখা রয়েছে যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ সত্ত্বেও রমজান করিমের শুভেচ্ছা। এটি দেখে রমজান থেকে আর মাত্র কয়েকদিন দূরে থাকার কথা মনে করিয়ে দেওয়া হলেও গাজাবাসী রোজা রাখতে শুরু করেছেন অনেক আগে থেকেই। চরম খাদ্য সংকটের কারণে তাদের কাছে এর কোনো বিকল্পও নেই। খবর আল আখবারিয়া।
গাজার স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, আগের বছরগুলোতে রমজানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাস্তায় ব্যাপক সাজসজ্জা করা হতো। বড় বড় লণ্ঠন দিয়ে রাস্তাগুলোকে আলো ঝলমলে করে ফেলা হতো। বাজারগুলোর বিভিন্ন দোকান পনির, মিষ্টি, খেজুর, শুকনো ফল, কামার আল-দিন, ক্যারোব জুস, লিকোরিসে পরিপূর্ণ থাকত।

এই বছরের পরিস্থিতি পুরোটাই ভিন্ন। ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন শত শত লোক মারা যাচ্ছে। আহত হচ্ছে অথচ চিকিৎসা নেই। ক্ষুধার্ত কিন্তু খাবার নেই। ফলে রোজা আসার আগে থেকেই তারা রোজা রাখতে শুরু করেছে।

হাজী উম্মে আয়মান নামের গাজার এক নারী বরং বিস্মিত কণ্ঠে বলেন, কেউ যদি সারাদিনে খাওয়ার জন্য কেবল একটি লেবু বা একটি রুটির এক-চতুর্থাংশ পায়, তাহলে সামর্থ্য থাকলে তার কি রোজা রাখা উচিত নয়?

তিনি বলেন, পুরো বাজার ঘুরে আপনি মটরশুটির একটি ক্যান বা পনিরের টুকরো পাবেন না। স্থানীয়ভাবে তৈরি এক কেজি মিষ্টির দাম ৭০ শেকেলে পৌঁছেছে। যা-ও পাওয়া যাচ্ছে, তাও খুব সীমিত। আমরা কেউ জানি না আমরা কী দিয়ে সেহরি করব এবং কী দিয়ে রোজা ভাঙব। আল্লাহ এই অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি দিন।

আল-সাহাবা বাজারের একজন ব্যবসায়ী হাজী আবদেল-আতি হামাদ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এক বছরে পুরো পরিস্থিতি কীভাবে পাল্টে গেল। আমি আমার দোকানে পনির, খেজুর, মিষ্টি এবং বাদাম রাখার জায়গা খুঁজে পাইনি। আজ, কিছুই নেই। এখন এক কেজি চালের দাম ১২০ শেকেল বা ৩৫ ডলার। ১০ জনের পরিবারের জন্য দিনে ১০০ ডলারের চাল দরকার, এটি কোনো গোশত ছাড়া কেবল ভাতের হিসেব। স্বাদ কিন্তু আগের মতোই।

হাজী আতি হামাদ আরও বলেন, গাজার লোকেরা খাবার তৈরিতে বেশ সৃজনশীল। তারা পারিবারিক সমাবেশ পছন্দ করে। মিলে মিশে খেতে ভালবাসে। পবিত্র রমজান মাসের সবচেয়ে মধুর বিষয় হলো ইফতার ও সেহরির জন্য জমায়েত হওয়া। এবার তার কিছুই হবে না।

ছয় সন্তানের মা মরিয়ম মাহমুদ এখন তার সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন। ছয়জনের তিনজন রাফাহতে রয়েছে, দুইজন উত্তর গাজায় আছেন এবং একজনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মরিয়ম বলেন, রমজানে সন্তানদের সঙ্গে এক প্লেটে খেতে না পারলে খাওয়ার কোনো স্বাদই নেই। আল্লাহর কাছে দুআ করছি, তিনি যেন আবার আমাদের এক করে দেন।