![](https://poygam24.com/wp-content/uploads/2023/03/20230310_162047-1024x576.jpg)
নৈরাশ্যবাদীদের জীবনদৃষ্টি একপেশে। সবদিকে দৃষ্টি প্রসারিত করলে বোঝা যায়, হাজারো সমস্যার মধ্যেও জীবন ও জগৎ মানুষের জন্য সীমাহীন সম্ভাবনায় পূর্ণ। জীবনটাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা যেতে পারে। যে কোন ঘটনাই ভিন্ন-ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। সবকিছুই নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। সুন্দর ভাবনা, নিরপেক্ষ চিন্তা ও নিখাদ চেতনাই তৈরি করতে পারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।একটু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে একজন যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষের সফলতা আটকে যেতে পারে। আবার একটু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারনে কেউ কেউ সফলতার আলোয় উদ্ভাসিত হয়। আমরা মনে করি তাৎক্ষণিক চোখের দেখা সাফল্যই বুঝি সবচেয়ে বড়। কিন্ত এই চিন্তা শুদ্ধ নয়। জীবনকে দেখতে হবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে, নানা দৃষ্টিকোণ থেকে। তবেই জীবনের প্রতি ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে।
যদি এমন একটি গ্লাস থাকে যার অর্ধেকটা পানি দিয়ে ভর্তি আর অর্ধেকটা শূন্য তাহলে এটাকে দু’ভাবে মূল্যায়ন করা যাবে।
এক. ইতিবাচক মূল্যায়ন। অর্থাৎ বলা হবে যে, গ্লাসটি অর্ধেকটা পূর্ণ। গ্লাসটি খালী নয়। আর এ অর্ধগ্লাস পানি মানুষের জন্য উপকারী।
দুই. নেতিবাচক মূল্যায়ন। যেমন বলা হবে গ্লাসটির অর্ধেকই খালি, অপূর্ণাঙ্গ আর এ অর্ধগ্লাস পানি দিয়ে কি-ই বা হবে।
প্রতিটি ব্যক্তি, ঘটনা ও কর্ম মূল্যায়নকালে এভাবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দৃষ্টভঙ্গি আপন করে নেওয়া যায়। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে আলোচনার বিষয় হল, ইসলাম আমাদেরকে কোন ধরনের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আপন করতে উৎসাহ দেয়? ইতিবাচক মূল্যায়ন নাকি নেতিবাচক মূ্ল্যায়ন?
ইসলাম তার অনুসারীদের কাছ থেকে সর্বক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কামনা করে। এর উদাহরণ হিসেবে কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য দৃষ্টান্ত থেকে মাত্র কয়েকটি দৃষ্টান্ত নিম্নে তুলে ধরছি।
কুরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে—
“তিনিই সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর সকল কিছু তোমাদের কল্যাণের জন্য।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৯]
আল্লাহ তা‘আলার এ রকম বাণী রয়েছে কুরআনের বহু স্থানে। এ সকল আয়াত দিয়ে তিনি পৃথিবীর সকল সৃষ্টি সম্পর্কে মানুষকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার শিক্ষা দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে এত পছন্দ করেন যে, একটি নেতিবাচক বিষয়কে শুধু বাদ দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হন না; বরং তিনি সেটিকে সম্পূর্ণ উল্টিয়ে ইতিবাচকে পরিণত করে দেন।
আল্লাহ বলেন,
“তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৯]
দেখুন এ আয়াতে, যারা অসৎ ও কুকর্ম থেকে তাওবাহ করে ঈমান আনবে তাদের ক্ষমা করে দেওয়াটা একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি হিসাবে যথেষ্ট ছিল; কিন্তু তিনি ঈমান ও তাওবার কারণে পাপগুলোকে শুধু ক্ষমাই করে দেন না; বরং তা পূণ্যে রূপান্তরিত করে দেন। পাপগুলোকে তার জন্য উপকারী বস্তুতে পরিণত করে দেন।
সূরা আন-নূরে বর্ণিত বিষয়টির প্রতি খেয়াল করুন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার অপবাদের ঘটনা ঘটল। মুসলিম সমাজ এ নিয়ে বড় বিপদে পড়ে গেল। এমনকি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত চিন্তিত, ব্যথিত হলেন। এমন একটি অপবাদের ঘটনা না ঘটাই কাম্য ছিল; কিন্তু আল্লাহ বিপজ্জনক এ ঘটনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার নির্দেশ দিলেন।
তিনি বললেন,
“নিশ্চয় যারা এ অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। এটাকে তোমরা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ১১]
এ রকম শত শত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের শিক্ষা রয়েছে কুরআনের বহু আয়াতে।
এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস থেকে কিছু উদাহরণ নেয়া যাক —
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ঈমানদারের বিষয়টি আশচর্যজনক। তার সকল কাজই কল্যাণকর। ঈমানদার ছাড়া অন্য কোনো মানুষের এ সৌভাগ্য নেই। তার যদি আনন্দ বা সুখকর কোনো বিষয় অর্জিত হয়, তাহলে সে আল্লাহর শোকর করে, ফলে তার কল্যাণ হয়। আর যদি তাকে কোনো বিপদ-মুসীবত স্পর্শ করে, তাহলে সে ধৈর্য ধরে, এতেও তার কল্যাণ হয়।” (সহীহ মুসলিম)
তিনি আরো বলেছেন,
“যা কিছু ভালো, তা যত ছোটই হোক, তুমি কখনো তা অবমূল্যায়ন করো না।”
দেখুন কীভাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব বিষয়কে নিজের জন্য ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করার জন্য ঈমানদারদের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।
মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর রা. এর ঘটনা কে না জানে। তিনি প্রথমে রসূল সা. কে হত্যার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন নাঙা তরবারি নিয়ে। কিন্তু তাঁর সামনে গিয়ে হয়ে গেলেন তাঁর হুকুমের গোলাম। পালটে গেলো তাঁর প্রতিক্রিয়া।
কিসের কারণে তাঁর এই ভিন্ন প্রতিক্রিয়া? হত্যার উদ্দেশ্যে বের হওয়া ব্যক্তি নিজেকেই কোরবান হয়ে গেলেন সারা জীবনের জন্য। এর চেয়ে বড় পরিবর্তন আর কী পারে? এত শক্তি কিসে রয়েছে যে হাজার ঘৃণা ও রাগকে পানি করে দিলো মুহূর্তের মধ্যেই? পরিবর্তন করে দিল নিজ স্বত্বাকে।
হা! এই মহাশক্তিশালী বস্তুটি হলো একমাত্র মানুষকে দেওয়া আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত “দৃষ্টিভঙ্গি”। এর কারণেই মানুষ হয়েছে আশরাফুল মাখলূকাত বা সৃষ্টির সেরা। যা মানুষকে মুহূর্তেই চেঞ্জ করে ফেলতে সক্ষম। একমাত্র এটাই পারে আপনার জীবন বদলাতে। হাজার উপদেশ নসীহতনামা কোনো কাজে আসবে না যদি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আপনি নিজে না বদলান। তবে উপদেশ আপনাকে বদলাতে সাহায্য করবে, যদি আপনি চান।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
“নিশ্চয় আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে”। (সূরা রা’দ, আয়াত-১১)
এর থেকে সুস্পষ্ট যে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না করলে আমরা কোনো ক্ষেত্রেই সফল হতে পারবো না। তাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি যত উন্নত আর সুউচ্চ হবে আমরা তত উন্নতি করতে পারবো সর্ব ক্ষেত্রে। যে যত বড় সফলতা অর্জন করেছেন, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিও তত বড় ও উন্নত ছিলো। তাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত করতে ও সঠিক ভাবে চালাতে সেই বড় মনীষী ও জ্ঞানীদের অনুসরণ করতে হবে ও তাদের মত ভাবার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই সফলতা আমার পদচুম্বন করবে ইনশাআল্লাহ।
আহসানুল ইসলাম রাকিব
শিক্ষার্থী, জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ