সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্বের অনন্য নজির স্থাপন করেছেন আল জাজিরার সাংবাদিক ওয়ায়েল আল-দাহদুহ। ইসরায়েলিদের হামলায় একের পর এক পরিবারের সদস্যদের হারানোর পরও ফিরে এসেছেন নিজের কর্তব্য পালনে। তার প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি সবাই তার এই পেশাদারিত্বেরও চরম প্রশংসা করছেন। খবর আল জাজিরা।
সাংবাদিক ওয়ায়েল আল-দাহদুহর বড় ছেলে হামজা আল-দাহদুহ (২৭) রোববার (৭ জানুয়ারি) গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। ফ্রিল্যান্সার এই সাংবাদিক সহকর্মী মুস্তাফা থুরায়ার সাথে রাফাতে একটি অ্যাসাইনমেন্ট থেকে ফিরছিলেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের কাছে একটি গাড়িতে বিমান হামলা চালালে ঘটনাস্থলেই দুজন সাংবাদিক নিহত হন এবং একজন গুরুতর আহত হন।
ওই হামলা সম্পর্কে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়, একটি আইডিএফ বিমান ইসরায়েলি সৈন্যদের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত একজন সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করতে পেরে আঘাত হানে। তবে ওই হামলায় একই গাড়িতে থাকা আরও দুই সন্দেহভাজনও আহত হয়।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ওয়ায়েল আল-দাহদুহ তার ছেলের মরদেহের পাশে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তিনি তার মৃত ছেলের হাত ধরে বসে ছিলেন। ছেলের দাফন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, হামজা ছিল আমার সব। সে আমার বড় ছেলে। সে ছিল আমার আত্মা। হামজাসহ সকল শহিদের উদ্দেশ্যে বলছি, আমরা তাদের বিশ্বস্ত থাকব। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাবো। কারণ আমরা সচেতনভাবেই এই পথ বেছে নিয়েছি। আমরা অনেক কিছু দিয়েছি, অনেক রক্ত দিয়েছি। কারণ এটাই আমাদের নিয়তি। তবে আমরা আমাদের কাজ থেকে পিছপা হব না।
হামজাকে দাফনের পরদিনই আবার নিজের কর্মক্ষেত্রে ফিরে যান ওয়ায়েল আল-দাহদুহ। নিজ পেশার প্রতি তার দায়িত্ববোধ দেখে সবাই প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তাকে। রয়টার্সের ডেপুটি এডিটর-ইন-চিফ ব্যারি ম্যালোন এক্সে একটি পোস্টে তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, ওয়ায়েল দাহদুহ আবারও সম্প্রচারে ফিরে এসেছেন। তাকে বর্ণনা করার মতো ভাষা আমার নেই।
তার ছেলের মৃত্যুর আগে ২৫ অক্টোবর ইসরায়েলি বিমান হামলায় স্ত্রী, আরেক ছেলে, মেয়ে এবং নাতিকে হারিয়েছিলেন ওয়ায়েল দাহদুহ। সে সংবাদ পুরো বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। সে ঘটনার পরও তিনি কাজে ফিরে যান। এর কিছুদিন পর আরেকটি ইসরায়েলি হামলায় তিনি নিহত হন। একই ঘটনায় আরেক সাংবাদিক নিহত হয়েছিলেন।