জাতিগত নির্মূল অভিযানের শিকার গাজা- ফিলিস্তিনের জন্য আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত- ইউকে জমিয়ত

গণবিধ্বংসী অস্ত্রের মাধ্যমে অবিরাম সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত দেশ গাজা ফিলিস্তিনের জন্য লন্ডনে অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও ঈমান দীপ্ত আলোচনা সভা এবং কান্না বিজড়িত দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২২ নভেম্বর বুধবার। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে এ হৃদয়াপ্লুত সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউকে জমিয়তের সভাপতি ডক্টর মাওলানা শুয়াইব আহমদ। সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন ইউকে জমিয়তের জেনারেল সেক্রেটারী মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ।

সভায় বক্তাগন বিগলিত হৃদয়ের অশ্রু বিসর্জন দিয়ে বাকরুদ্ধ কন্ঠে তাঁদের ঈমান দীপ্ত বক্তব্য ও মনমাতানো আলোচনা উপস্থাপন করেন। বিধ্বস্ত, রক্তাক্ত ছিন্নবভিন্ন ও অগ্নিদগ্ধ মজলুম গাজা ফিলিস্তিন বাসীদের জন্য বক্তাগন অন্তরের সকল আবেগ উজাড় করে দিয়ে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে দোয়া -মোনাজাত করেন। গাজা- ফিলিস্তিনের মজলুম মানুষের সাহায্যে আলখায়ের ফাউন্ডেশন, ইকরা টিভি ও ইমাম কাসিমের অতুলনীয় অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শায়খুল হাদীস মাওলানা মুফতি আবদুর রহমান মনোহরপূরী। প্রধান বক্তা হিসেবে ইংরেজিতে আলোচনা পেশ করেন বিখ্যাত ভারতীয় স্কলার মুফতি আবদুর রাহমান মাঙ্গেরা। সভাপতির ভাষণে মাওলানা শুয়াইব আহমদ ফিলিস্তিনের মজলুম মানবতার জন্য বিশ্ব শক্তিগুলোর নমনীয় ভূমিকা ও অমার্জনীয় নিরবতার কঠোর সমালোচনা করে এ অমানবিক আচরণের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন। সীরাতুন্নবীর আলোকে ইহুদি ষড়যন্ত্রের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মোকাবেলার গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইউকে জমিয়তের সিনিয়র সহ-সভাপতি, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুফতি আবদুল মুনতাকিম। কোরআন হাদীসের আলোকে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা পেশ করে জালিম শক্তির সহায়ক সকল পণ্য বয়কটের আহ্বান জানান বিশিষ্ট আলেম মাওলানা ইমদাদুর রাহমান আল মাদানী।
সভায় বক্তারা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেন ফিলিস্তিন-গাজা আল্লাহর অসংখ্য অগণিত নবী রাসূলের স্মৃতিতে অম্লান পুণ্য ভূমি। ভবিষ্যতেও ইসলামের অজস্র ঘটনাপ্রবাহ পবিত্র এভূমি কে কেন্দ্র করেই রচিত হবে দুনিয়ার দৃশ্যপটে। কিন্তু রাষ্ট্র ইসরাইল দীর্ঘ দেড় মাস ধরে গাজায় জাতিগত মুসলিম নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। গাজায় চৌদ্দপুরুষের বাড়িঘর হারানোর বেদনা, নির্বিচারে হাজার হাজার নারী-শিশু হত্যা, ছয় হাজারেরও বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনিকে কারাগারে নিক্ষেপ এবং পবিত্র মসজিদুল আকসাকে অপবিত্র করার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আচমকা অভিযান চালানো হয়। এর জবাবে ইসরাইলি বাহিনী ৭ অক্টোবর থেকে বিরতিহীনভাবে গাজায় বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে এসে ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে পশ্চিমা বিশ্ব ইসরাইলকে গাজায় জাতিগত নিধনে সম্পূর্ণ নৈতিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে, আরবসহ মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিনিদের শুধুই ‘লিপ সার্ভিস’ দিচ্ছে। এটি সত্যিই ৫৭টি মুসলিম দেশের প্রায় ২০০ কোটি মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত লজ্জা ও বেদনার বিষয়। মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব এখানে চরম স্বার্থপরতা ও লজ্জাকর ভীরুতার পরিচয় দিয়েছে!


ইসরাইলি বাহিনীর সন্ত্রাসী আক্রমণে উত্তর গাজা মাটির সাথে মিশে গেছে। এটি কোনো যুদ্ধ নয়। যুদ্ধ হয় দু’টি সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে। কিন্তু এখানে ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনী পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর গাজায় নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে। এটি সন্ত্রাসী হামলা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস! এ পর্যন্ত হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষ তারা হত্যা করেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ শিশু ও মহিলা। অসংখ্য নবজাতকও রয়েছে নিহতদের মধ্যে। ইসরাইল অনবরত বিমান হামলা চালাচ্ছে গাজার বাড়িঘর, হাসপাতাল, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যাম্বুলেন্স এমনকি বাড়িঘর ছেড়ে পলায়নরত মানুষগুলোর উপর। তারা উত্তর গাজার ১০ লাখ মানুষকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালানোর নির্দেশনা দিয়ে সেই পলায়নরত মানুষগুলোর উপর বোমা হামলা চালিয়েছে। হাসপাতালে বোমা মেরে রোগীসহ একসাথে ৫০০ মানুষকে হত্যা করেছে। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংস্থা ইসরাইলের হত্যাযজ্ঞকে যুদ্ধাপরাধ বলে সংজ্ঞায়িত করেছে। এমতাবস্থায় মুসলিম বিশ্বের অবস্থার ভয়াবহতা নিয়ে সর্বত্র গন জাগরণ সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই। তাওবা ইস্তেগফার, কায়মনোবাক্যে দোয়া মোনাজাত এবং আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো মুসলিম উম্মাহর জন্য অপ্রতিরোধ্য রাজনৈতিক শক্তি সঞ্চয় করা এবং নিজেদের কে বিশ্বের মানচিত্রে মজবুত কুটনৈতিক ফ্যক্টর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।

সভায় আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য শাখার সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা আতাউর রহমান,জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সহ-সভাপতি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ,জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সহ-সভাপতি এবং জামেয়া মাদানিয়া বিশ্বনাথ মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক হাফিজ হোসাইন আহমদ বিশ্বনাথী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের জয়েন্ট সেক্রেটারি ও টাওয়ার হ্যামলেটস শাখার সভাপতি হাফিজ মাওলানা মোঃ ইলিয়াস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের জয়েন্ট সেক্রেটারি ও আল ইহসান একাডেমী লেস্টারের পরিচালক মাওলানা হিফজুল করীম মাশুক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের ট্রেজারার হাফিজ রশিদ আহমদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সহ সেক্রেটারি মুফতি সৈয়দ রিয়াজ আহমদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান,লন্ডন ভিক্টোরিয়া মসজিদের খতিব হাফিজ মাওলানা আব্দুল হক, ওয়েস্ট লন্ডন জমিয়তের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা জুবায়ের উদ্দিন রায়হান।
আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ফয়েজ আহমদ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক মুফতি সালেহ আহমদ।এছাড়াও ইউকে জমিয়তের বিভিন্ন শাখার দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে-জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের উপদেষ্টা মাওলানা সাঈদ আলী, ইউকে জমিয়তের উপদেষ্টা আলহাজ্ব খালিছ মিয়া,ইউকে জমিয়তের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউ কে ওয়েস্ট লন্ডন শাখার সভাপতি হাফিজ মাওলানা মিজানুর রহমান, ইউকে জমিয়তের প্রচার সম্পাদক ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে ওয়েস্ট লন্ডন শাখার সেক্রেটারি মাওলানা শামসুল ইসলাম, ইউকে জমিয়তের সহ সেক্রেটারি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নিউহাম শাখার সভাপতি হাফিজ জিয়া উদ্দিন, ইউকে জমিয়তের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও নিউহাম শাখার সহ-সভাপতি মাওলানা মঈন উদ্দিন খান,ইউকে জমিয়তের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ মিফতাহুর রহমান, লন্ডন মহানগর জমিয়তের সহ-সভাপতি হাফিজ গিয়াস উদ্দিন,
ইউকে জমিয়তের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হাফিজ মাওলানা খালেদ,ইউকে জমিয়ত টাওয়ার হ্যামলেট শাখার সহ-সভাপতি সাইফুর রহমান,ইউকে জমিয়তের মিডিয়া সেক্রেটারি ও হেকনী শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ থেকে আগত জমিয়ত নেতা মাওলানা হিলাল প্রমুখ।
আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল পবিত্র কালামে পাকের তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় তেলাওয়াত করেন ইউকে জমিয়তের তাফসীরুল কোরআন বিষয়ক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মুস্তাক আহমদ।