জাবিতে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি শিক্ষার্থীদের, কর্মবিরতির ডাক কর্মকর্তাদের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টায় বটতলা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন হল ঘুরে পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। এ সময় প্রশাসনিক ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

অবরোধের সময় শিক্ষার্থীরা, ‘সংস্কার না বাতিল, বাতিল বাতিল’, ‘জনে জনে খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘হলে হলে খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এ সময় ইতিহাস বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিবিড় ভূইয়া বলেন, ‘আমরা অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউই সুবিধাবঞ্চিত নয় যে তাদের কোটার আওতায় থাকতে হবে। তাই পোষ্য কোটার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অজপাড়াগাঁয়ের একজন কৃষকের সন্তান যদি মেধার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতে পারে, তাহলে একজন শিক্ষার্থী যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে বেড়ে উঠেছে, ভালো স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেছে তার কেনো কোটা লাগবে? আমরা বিশ্বাস করি কোটা একটি প্রিভিলেজ, এটি কোনো অধিকার না। তাই আমরা চাই পোষ্য কোটা চিরতরে বাতিল হোক।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেজবাহুল হক আপন বলেন, ‘আমাদের একমাত্র দাবি অযৌক্তিক পোষ্য কোটার সম্পূর্ণ বাতিল। কারণ এই কোটার ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায় না। পৈতৃক উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া কোটা ব্যবস্থা নিপাত যাক। পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা রেজিস্ট্রার বিল্ডিং ছাড়ব না।’

এদিকে বেলা ১১টার দিকে পোষ্য কোটার সুযোগ-সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি এবং কর্মচারী ইউনিয়ন। মিছিল শেষে তারা আগামীকাল (বুধবার) থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা করেন।

অফিসার সমিতির সভাপতি ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো: আব্দুর রহমান বাবুল বলেন, ‘পোষ্য কোটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধাকে ব্যাহত করে না। পোষ্য কোটা একটি প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা যেটা ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য দেয়া হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই এই সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। এটা আমাদের অধিকার।’

বাবুল আরো বলেন, ‘পোষ্য কোটার জন্য নতুন যে নিয়ম করা হয়েছে সেগুলো বাতিল করে পূর্বের সব সুযোগ-সুবিধা পুনর্বহালের জন্য আমরা সকালে প্রতিবাদ মিছিল করেছি। আমাদের দাবি মানা না হলে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘আমি একাই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এজন্য আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

সর্বশেষ ভিসি প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুল আহসানকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষার্থীরা চার ঘণ্টা সময় বেধে দিয়েছেন।

এর আগে গত সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে একমত হন। সমঝোতা অনুযায়ী, পাস নম্বর ৩৫% থেকে বাড়িয়ে ৪০% করা হবে, কোটার সুযোগ কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য সীমিত রাখা, একবারের বেশি এই সুবিধা না নেয়া এবং প্রতি সেশনে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী এই কোটার আওতায় ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *