জাহিলী প্রথা থেকে খোদায়ী ঘৃণা ও অনীহা

নবৃওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে যদিও নবী-রাসূলগণ নবী-রাসূল অভিধায় আখ্যায়িত হন না, কিন্তু ঐ সময় ওলী ও সিদ্দীক অবশ্যই থাকেন। আর তাঁদের এ বিলায়েত এতটা পূর্ণ ও সম্পূর্ণ হয়ে থাকে যে, বড় বড় ওলী-আল্লাহ ও সিদ্দীকগণের বিলায়েত ও সত্যবাদিতাও তাঁদের বিলায়েতের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার যোগ্য তো নয়ই, বরং সমুদ্রের তুলনায় এক ফোটা পানি কিংবা সূর্যের তুলনায় একটি রশ্মির সাথে তুলনার মতই কেবল এটা তুলনীয়।

হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা)-কে প্রশ্ন করা হলো, আপনি কি কোন সময় কোন মূর্তির পূজা করেছেন ? তিনি ইরশাদ করলেন, “না। আর এটাও বলেন যে, আমি সব সময়ই এগুলোকে কুফরী মনে করতাম। যদিও সে সময় আমার কিতাব ও ঈমানের জ্ঞান ছিল না।”

‘মুসনাদে আহমদে’ হযরত উরওয়া ইবন যুবায়র (রা) থেকে বর্ণিত যে, হযরত খাদীজার একজন প্রতিবেশী বর্ণনা করেন, আমি মুহাম্মদ ( নবী করীম (সা)) কর্তৃক হযরত খাদীজাকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর কসম, আমি কখনো লাভ-এর পূজা করব না; আল্লাহর কসম, আমি কখনো উযযার পূজা করব না। হযরত যায়দ ইবন হারিসা (রা) বলেন, জাহিলী যুগে যখন মুশরিকরা কা’বা শরীফ তাওয়াফ করতো, তখন আসাফ ও নায়েলা (মূর্তি)-কে স্পর্শ করতো। একবার আমি নবী করীম (সা)-এর সাথে বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করি। যখন ঐ মূর্তিগুলোর নিকটবর্তী হলাম, তখন আমি তা স্পর্শ করলাম। নবী করীম (সা) আমাকে এগুলো ছুঁতে নিষেধ করেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, দেখি তো, ছুঁলে কি হয়। এ ভেবে আমি দ্বিতীয়বার স্পর্শ করলাম। এবারে তিনি একটু রূঢ়ভাবে নিষেধ করেন এবং বলেন, আমি কি তোমাকে এ কাজ করতে নিষেধ করিনি ? যায়দ বলেন, আল্লাহর কসম, এরপর আমি আর কোনদিন এগুলো স্পর্শ করিনি।
(সা)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, কোনদিন জাহিলিয়াতের কোন সংস্কৃতির প্রতি আমার কোন খেয়াল ছিল না। কেবল দু’বার মাত্র এ খেয়াল মনে জেগেছিল, কিন্তু হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ আল্লাহ তা’আলা আমাকে তা থেকে বাঁচিয়েছেন এবং নিরাপদ রেখেছেন। এক রাতে আমি আমার বকরী চরানোর সাথীদের বললাম, আজ রাতে তোমরা আমার বকরীগুলোকে দেখে রাখবে। আমি মক্কায় গিয়ে কিছু কিসসা-কাহিনী শুনে আসি। মক্কায় প্রবেশ করে আমি এক বাড়িতে গান-বাজনার আওয়াজ শুনতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম এখানে কি হচ্ছে ? জানা গেল, অমুকের বিবাহ হচ্ছে। আমি বসেই ছিলাম, আমার চোখে ঘুম এসে গেল। আল্লাহ আমার কর্ণদ্বয়ে মোহর লাগিয়ে দিলেন। আমি ঘুমিয়েই থাকলাম; এমন কি সকালের রোদ আমাকে জাগিয়ে দিল। ঘুম থেকে উঠে আমি আমার সঙ্গীদের কাছে ফিরে আসি। সঙ্গীগণ জিজ্ঞেস করল, কি কি দেখে এলে ? তিনি বললেন, কিছুই না। এরপর তিনি নিজের ঘুমিয়ে পড়ার ঘটনা শোনালেন।

দ্বিতীয় এক রাতে তিনি একই ইচ্ছা করলেন এবং আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে একই অবস্থার সৃষ্টি হলো। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ, এরপর আর কোনদিন আমার অন্তরে এরূপ কোন খেয়াল হয়নি। তারপর তো আল্লাহ তা’আলা আমাকে তাঁর পয়গাম্বরী দানে ভূষিত করলেন। এ হাদীস ‘মুসনাদে বাযযার’ এবং ‘মুসনাদে ইসহাক ইবন রাওয়াহ’ প্রমুখ কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। হাফিজ ইবন হাজার বলেন, এ হাদীসের সনদ মুত্তাসিল এবং হাসান। এ হাদীসের সমস্ত রাবীই নির্ভরযোগ্য। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, কা’বাগৃহ নির্মাণের সময় নবী (সা)-ও পাথর বহনের কাজ করেছেন। তাঁর চাচা হযরত আব্বাস বললেন, বেটা, লুঙ্গি খুলে ঘাড়ে দাও যাতে পাথরের আঘাত থেকে নিরাপদ থাকতে পার। তিনি চাচার হুকুম পালন করতে গিয়ে লুঙ্গি খোলার উদ্যোগ নেয়ার সাথে সাথে বেহুঁশ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। এরপর তাঁকে কখনো উলঙ্গ দেখা যায়নি। হযরত আবুত তুফায়ল (রা) থেকে বর্ণিত আছে, ঐ সময় অদৃশ্য থেকে এ আওয়াজ এলো “হে মুহাম্মদ, নিজ সত্তর সম্পর্কে সতর্ক হও।” এ গায়বী আওয়াজই তাঁর প্রতি সর্বপ্রথম আওয়াজ ছিল, যা তাঁকে শোনানো হয়।

সূত্র: সীরাতুল মুস্তফা সা.
সংকলনে: আহমাদ আল গাজী