ট্রান্সজেন্ডার; সময়ের ভয়াবহতম ফিতনা

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার বন্দেগীর জন্য। সর্বপ্রথম মানব আদম আ. থেকে হাওয়া আ.। এ দু’জন থেকে পুরো মানবজাতি। এভাবে নর এবং নারীতে বিভক্ত করেছেন সকলকে। এ দুই’য়ের মিলনে জন্মায় নব প্রজন্ম। এমনই আল্লাহর মানশা।

শয়তান আল্লাহর অবাধ্যতা করেছে। তার পূজারিরাও করছে। দ্রোহ ও লঙ্ঘন করে বেড়াচ্ছে। নিত্য ফেতনার আবির্ভাব ঘটাচ্ছে। তেমনই এক শয়তানি হলো ‘সমকামিতা’। পুরুষ পুরুষে রতি, নারী নারীতে সম্ভোগ। এ কাজ আল্লাহর গজবের কারণ। কুরআন কারীম থেকে জানা যায়, এ দোষে তিনি লূত জাতিকে ভূমিসহ উল্টিয়ে দিয়েছেন। কঠোর আযাব দিয়ে ধ্বংস করেছেন।

মুসলমান সেসব জানে। তাই সাবধান থাকার চেষ্টা করে। এতোকাল পরে এসেও আল্লাহর ভয়াবহ সে আযাবকে ডরে। ফলে শয়তানের পূজারিরা সহজে আমাদের বিভ্রান্ত করতে পারে না। সরাসরি সে ফিতনায় জড়াতে পারে না। তাই তারা কৌশলের আশ্রয় নেয়। এই যেমন ট্রান্সজেন্ডার নামক একটা মুখোশ বানিয়েছে। হিজড়া ও ট্রান্স শব্দ-দু’য়ের মারপ্যাঁচে নষ্টামি ছড়াচ্ছে। দেশ ও বিশ্বকে কুরআন কারীমে বর্ণিত ভয়ানক সে আযাবে নিক্ষিপ্ত করছে।

ট্রান্স মানে রূপান্তর। উদ্দেশ্য, লিঙ্গ বদলের দাবি করা। অর্থাৎ শারীরিক পরিবর্তন না থাকলেও শুধু দাবির কারনে পুরুষ হয়ে যাবে নারী, নারী হয়ে যাবে পুরুষ। আর এদের বলা হবে ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী। ইন্টার-জেন্ডার বা হিজড়াদের বিষয়টা তেমন নয়। তাদের শারীরিক কিছু পরিবর্তন বাস্তবেই থাকে।

সুতরাং স্পষ্ট বোঝা যায়, ট্রান্সরা তৃতীয় লিঙ্গ নয়। কেননা তৃতীয় লিঙ্গ’দের শারীরিক সমস্যা থাকে। বরং ট্রান্সরা সমকামী। সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের জন্য এরা বিপরীত লিঙ্গে পরিচয় বদল করে। এদের কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে না। তারপরও এরা আমাদের সহানুভূতি পেতে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ শব্দটা ব্যবহার করে।

এদিকে এনজিওগুলো অবহেলিত হিজড়াদের সাথে ট্রান্সদের গুলিয়ে ফেলে। মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে কৌশলে তাদেরকে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছাতে চায়। যদিও অধিকারের বিষয়টি আপেক্ষিক। মানবাধিকারের ব্যাপারটাও আলোচনা-সাপেক্ষ। যেমন কেউ আত্মহত্যাকে ব্যক্তির অধিকার দাবি করলে, আইন তা সমর্থন করবে না।

আদমশুমারি অনুযায়ী দেশে প্রায় ১২ হাজার লোক হিজড়া পরিচয় বহন করে। পুলিশের ভাষ্যমতে এর ৯০% ভুয়া। সে হিসাবে সারা দেশে মাত্র ১২ শ’ লোক হিজড়া এবং বাকি ১১ হাজার স্বেচ্ছায় লিঙ্গ বিকৃতকারী। আর মনে মনে লিঙ্গ পরিবর্তনের নয়া এ নোংরামির কতোটা বিস্তার ঘটেছে, তা ভাবতেই শঙ্কিত হতে হয়।

২০১০-২০১৫ সালে সোস্যাল ওয়েলফেয়ার মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কাজ করে। একজন নারী চিকিৎসক ১২জনকে নকল হিজড়া হিসেবে শনাক্ত করে সমকামী এক্টিভিস্টদের গোমড় ফাস করে দেন। মেডিকেল টেস্টের মাধ্যমে ইন্টারসেক্স (আসল হিজড়া) শনাক্তকরণে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি টিম রাষ্ট্রকে সাপোর্ট দেয়। এতে বিশ্বমিডিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। পরে কিছু মানবাধিকার সংস্থা আসল হিজড়া (ইন্টারসেক্স) শনাক্তকরণে মেডিকেল টেস্ট বাদ দেওয়ার দাবি তোলে। যেন এ নোংরামির বিস্তারে কোন বাঁধা না থাকে।

বস্তুত বিয়ের (সঙ্গমের) ক্ষেত্রে সমকামীরা যেমন, ট্রান্সরাও তেমনই। শুধু একটা শব্দের পরিবর্তন এবং দাবির ব্যবধান। নতুবা সমকামীদের মতো নারী-দাবিকারী ট্রান্সের স্বামীও হুবহু তারই মতো অপর পুরুষ। এভাবে পুরুষ-দাবিকারী ট্রান্সের সঙ্গীও তার মতোই নারী। এদের মাধ্যমে সমাজে মরনব্যাধী ‘এইডস’ ভয়ানকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। যা সমলিঙ্গের সাথে ঘনিষ্ঠতার মতো মারাত্মক অপরাধের প্রাথমিক শাস্তি।

আজকাল পুরুষ সমকামীদের কাউকে বোরখা-হিজাব পরিহিত দেখা যাচ্ছে। এরা পর্দা-পসন্দ নারীদের সম্ভ্রম সতিত্বের জন্য হুমকি। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েদের সাথেও সহজে মিশে তাদের মাঝে ভায়রাস ছড়িয়ে দিচ্ছে।

দেশে হিজড়া-অধিকার রক্ষার আলোচনা হয়, হোক। আমরা তাতে সহমত। তবে খোদাদ্রোহী ট্রান্সদের জন্য এটুকু তো অনেক, বরং দেশের মাটিতে তাদের অস্তিত্বই জাতির লজ্জার কারন, আযাবের উপকরণ।

আধুনিক শিক্ষার পাঠ্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসাত্বক এ মতবাদের প্রচার চলছে। আইনসিদ্ধ করতে খসড়া প্রস্তাব হয়েছে। খোদায়ী আযাবই শুধু নয়, এটা আমাদের অস্তিত্বকেও সংকটে ফেলবে। তাই হুমকিতে থাকা আমাদের পরিবার ও সমাজের সদস্যদের সচেতন করা এখন সময়ের জোর দাবি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

মুহাম্মদ এহছানুল হক সন্দ্বীপী

দাঈ ও হাফেয আলেম