রাশিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের ভিন্ন মুদ্রায় লেনদেনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করে। কিন্তু ডলার-ইউরো বাদ দিয়ে অন্য মুদ্রায় লেনদেন করতে রাশিয়াকে বাধ্য করেছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রই। নিজেদের বোকামির কারণেই তারা ডলারের অবমূল্যায়ন করছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ মন্তব্য করেছেন। খবর আরটি ওয়ার্ল্ড।
রাশিয়া২৪ টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, তারা মার্কিন ডলারকে অবমূল্যায়ন করার জন্য চীনা মুদ্রা ইউয়ান ও অন্যান্য মুদ্রার ব্যবহার বাড়ায়নি। এজন্য তাদেরকে দায়ী করা উচিত হবে না। কারণ নিষেধাজ্ঞার মতো যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বোকামিপূর্ণ পদক্ষেপের কারণেই তারা ডলারের ব্যবহার কমাতে বাধ্য হয়েছিল।
পুতিন বলেন, অন্য দেশের সাথে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে, লেনদেন রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ডলার ব্যবহার করতে দেবে না। তাহলে আমরা কী করব? আমরা তাই করেছি, যা আমাদের পক্ষে করা সম্ভব হয়েছে। আমরা এমন একটি মুদ্রায় লেনদেন করেছি, যা আমাদের ব্যবসায়িক পক্ষগুলোর কাছেও সমানভাবে গ্রহণযোগ্য। আর ইউয়ান এমন একটি মুদ্রা, যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) ব্যবহৃত করে। তাই আমরা লেনদেনের ক্ষেত্রে ইউয়ানই ব্যবহার করছি।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মস্কোর ওপর অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য রাষ্ট্র। তাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় উল্লেখযোগ্য ছিল- বেশ কয়েকটি রাশিয়ান ব্যাংককে কালো তালিকাভুক্ত করা এবং সুইফট আন্তঃব্যাংক মেসেজিং সিস্টেম থেকে তাদের অপসারণ, সেইসঙ্গে রাশিয়ান আর্থিক সংস্থাগুলোর সাথে লেনদেনের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিমায়িত করা।
এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া ডলার ও ইউরো ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক লেনদেন পরিচালনা করার ক্ষমতা হারায়। ফলে তারা এই মুদ্রার ওপর আস্থা হারিয়ে ঝুঁকে পড়ে ইউয়ানের দিকে। এখন তারা শুধু চীনের সাথে নয়, বরং আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সাথেও লেনদেনে ইউয়ান ব্যবহারের চিন্তা করছে।
পুতিন বলেন, আমাদের অংশীদাররাও আমাদের সাথে ইউয়ানে লেনদেন করতে সম্মত হতে পেরে খুশি। মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো জানিয়েছে, তারাও ইউয়ানে লেনদেন করতে চায়। আমরা ইউয়ানকে নির্ভরযোগ্য মুদ্রা হিসেবে মনে করি, তাই আমরা ধীরে ধীরে এর ব্যবহার বাড়াব।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ডলারের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র বোকামি করছে। কারণ তারা যে শাখায় বসে আছে তা-ই কেটে ফেলছে। তারা নিজেরাই বিশ্বে ডলারের ব্যবহার সীমিত করে দিচ্ছে। একেতো তারা রাশিয়ার মতো বিভিন্ন দেশে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে; দ্বিতীয়ত. তারা বিভিন্ন দেশের রিজার্ভ আটকে রাখছে। ফলে রিজার্ভ রাখার ক্ষেত্রে অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র কতটা নির্ভরযোগ্য তা নিয়ে কথা উঠেছে। এতেও ডলার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ।