ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই ধারা বাতিল চায় জাতিসংঘ, ‘সম্ভব না’ বললেন আইনমন্ত্রী

বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুটি ধারা (২১ ও ২৮) পুরোপুরি বাতিল এবং আটটি সংশোধনের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর)।

ওএইচসিএইচআর বলেছে, এসব ধারার বেশির ভাগ বাকস্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

এই আইনে বিষয়ে ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ওএইচসিএইচআর। কিন্তু আইনটি সংশোধনের বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। উল্টোদিকে হরহামেশাই এ আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে।

সবশেষ গত ৩১ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক আইনটি অবিলম্বে স্থগিত ও সংশোধনের আহ্বান জানান। বাংলাদেশেও আইনটি বাতিলের দাব জানানো হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।

২০১৮ সালে বিরোধিতার মুখে দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর করে সরকার। এর পর থেকে গত সাড়ে চার বছরে ভিন্নমত দমনে প্রায়ই এ আইন ব্যবহৃত হয়েছে। সরকারিভাবে কোনো হিসাব না দেওয়া হলেও বেসরকারি তথ্য বলছে, এ আইনে মামলা হয়েছে অন্তত ২ হাজার ৮০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা উহাতে মদদ প্রদান করেন’ তাহলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সাজা হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, বা তিন কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

২৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার বা উসকানি প্রদানের অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সাজা হবে অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড।

এ দুটি ধারা বাতিলের দাবি জানিয়ে ওএইচসিএইচআর বলেছে, ভাষার এত ব্যাপকতা বৈধ মতপ্রকাশকে অপরাধ বানিয়ে ফেলবে। ঐতিহাসিক তথ্য সম্পর্কে মতামত প্রকাশের প্রশ্নে শাস্তিমূলক আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে লঙ্ঘন করে। এছাড়া ২৮ নম্বর ধারাটি স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে (২৯৫ক) এই বিষয়ে যেমন স্পষ্টভাবে (ইচ্ছাকৃত এবং বিদ্বেষপূর্ণ কাজ, যা কোনো শ্রেণির ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করে ধর্মীয় অনুভূতিতে ক্ষুব্ধ করার উদ্দেশ্যে) বলা আছে, তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনুপস্থিত। যার অর্থ হলো বৈষম্য, বৈরিতা বা সহিংসতায় উসকানি হয় এমন পর্যায়ে উপনীত হলেই তা হবে অপরাধ।

এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২৫, ২৭, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারাগুলো অতি দ্রুত সংশোধনের সুপারিশ জানিয়েছে ওএইচসিএইচআর।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আইনের ধারা দুটি কোনোভাবেই বাতিল করা সম্ভব না। এটির প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজন হলে এটি সংশোধন করা যেতে পারে।

কবে নাগাদ সংশোধন করা হবে, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা ওএইচসিএইচআর’এর সুপারিশ পর্যালোচনা করছি। বিষয়টি নিয়ে নাগরিক সমাজের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে যা উঠে আসবে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।