ডুবছে আদানির শেয়ার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি শিল্পগোষ্ঠীর শেয়ারের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। আজ শুক্রবার পর্যন্ত আদানির বাজার মূলধন অর্ধেকের কমে ১০ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমেছে। এর প্রভাবে দ্বিতীয় দিনের মতো লোকসভার অধিবেশনে হাঙ্গামা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ সম্প্রতি আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। এরপর থেকেই আদানি গ্রুপের শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। আর তার প্রভাবে তোলপাড় চলছে ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বাজারমূল্যের যথার্থতা এবং প্রতারণামূলক ব্যবসার চর্চা নিয়ে গবেষণা করে থাকে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। কোম্পানির প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি শেয়ারের উচ্চ দাম চ্যালেঞ্জ করে এবং শিগগির শেয়ারদরের ব্যাপক পতন ঘটবে—এমন পর্যবেক্ষণ নিয়ে বাজি ধরে।

হিনডেনবার্গ রিসার্চ গত সপ্তাহে আদানি গ্রুপের ঋণের মাত্রা ও ‘ট্যাক্স হ্যাভেন’ বা কর এড়াতে বিদেশে বিনিয়োগের চর্চা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর থেকে আদানি গ্রুপের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। তখন থেকেই পুঁজিবাজারে এই কোম্পানির দরপতন হতে থাকে। 

আদানির বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারসাজি ও হিসাবে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিনডেনবার্গ। ভারতের বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে গভীর তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

অপ্রকাশিত সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’ আদানি গ্রুপকে দেওয়া ঋণের বিষয়ে ব্যাংকগুলোর কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে।

আদানির প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের শেয়ার ছাড়ার ঠিক আগমুহূর্তে গত বুধবার ওই সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা ছিল গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা। তা না হলে বড় রকমের বিপর্যয়ের আশঙ্কা ছিল।

শুক্রবার এই গ্রুপের শীর্ষ কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দাম ৩৫ শতাংশের বেশি কমে ২০২১ সালের মার্চের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এর ফলে গত সপ্তাহের পর এই গ্রুপের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৬০ কোটি ডলারে; মূলধন কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। ৬০ বছর বয়সী এশিয়ার ধনীর তালিকায় শীর্ষে ওঠা গৌতম আদানি বিশ্বের তৃতীয় ধনী ছিলেন। একধাক্কায় এই কদিনে তাঁর অবস্থান সপ্তদশে (১৭তম) নেমেছে। যেখানে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ আদানির আনুমানিক ১৫ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের সম্পদ ছিল। অস্ট্রেলিয়ার কয়লাখনি থেকে ভারতের ব্যস্ততম বন্দর পর্যন্ত ভারতীয় এই ব্যবসায়ীর দখল রয়েছে।

হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আদানির বড় ভাই বিনোদ মরিশাস, সাইপ্রাস এবং বেশ কয়েকটি ক্যারিবিয়ান দ্বীপে ‘অফশোর শেল’ পরিচালনা করেন। আদানির বিরুদ্ধে অপ্রকাশিত লেনদেন ও কারসাজিরও অভিযোগ করা হয়েছে।

তবে হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন খারিজ করে বিবৃতি দিয়েছে আদানি গ্রুপ। প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জুগেশিন্দার তাতে বলেন, ‘প্রতিবেদনটি ভুল তথ্য, পুরোনো এবং ভিত্তিহীন ও ভুয়া অভিযোগের সংমিশ্রণে করা।’

আদানি গ্রুপের শেয়ারের দাম গত তিন বছরে ২০০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল, যা প্রতিষ্ঠানটির মালিক আদানির মোট সম্পদে ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি যোগ করে। একই সঙ্গে তাঁকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় নিয়ে এসেছিল।