তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশের আর কোন নির্বাচন হবে না:মির্জা ফখরুল ইসলাম

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় বলেছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে আর কোন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। কেয়ারটেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা দেয়া ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হবে।

গুম, খুন ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির গণসমাবেশে শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। প্রায় আধা ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং অঙ্গসংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় দেখতে চায়। সময় থাকতে মানে মানে কেটে পড়ুন। না হলে এ দেশের জনগণ আপনাদের বিদায় করে দেবে।

তিনি বলেন, সরকার আবারও ২০১৪-১৮ সালের নির্বাচনের মতো নির্বাচন দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। তারপর পাতানো নির্বাচনে জিতে আবারও যেমন খুশি তেমন চুরি করবে। তারা জোর করে দু’বার নির্বাচন করেছে। ২০১৪ সালে কেউ ভোট দিতে যায়নি। ১৮-তে আগের রাতে ব্যালটবক্স ভর্তি করেছেন। তিনি (শেখ হাসিনা) নাকি আবার নির্বাচন করতে চান। ভুলে যান, এসব ভুলে যান। আপনারা ক্ষমতায় এসে যেমন খুশি তেমন চুরি করবেন। এত অত্যাচার। এদের লজ্জাও নেই, শরমও নেই। এদের চামড়া গণ্ডারের মতো মোটা হয়ে গেছে।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, আব্বাস উদ্দিনের একটি গান আছে আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না। এই গান এখন সবাই গায়। ভালোয় ভালোয় কেটে পড়ুন, নয়তো ভয়ানক পরিণতি হবে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী, স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ভোলায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক ভাই প্রাণ দিয়েছেন। তাদের খুনের বিচার, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, ৩৫ হাজার মিথ্যা মামলার প্রত্যাহারের দাবিতে এই মহাসমাবেশ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রদল নেতা নয়নকে বিনা কারণে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, তার কোনো দোষ ছিল না। নয়নের বুকে প্রতিবাদের আগুন জ্বলেছিল। তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গোটা দেশবাসী আজ মুক্তি চায়।

সভাস্থলে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে কেউ ভোট দিতে যায়নি। ২০১৮-তে আগের রাতেই ভোট চুরি করেছেন। তিনি নাকি আবার ক্ষমতায় যাবেন! যশোরে সভায় তিনি বলেছেন- আওয়ামী লীগ আসলে জনগণ শান্তি পায়। আপনারা কি শান্তি পান?

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে ফখরুল বলেন, একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, একটি সুখী বাংলাদেশ দেখার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও মানুষ আজ খাবারের জন্য দৌড়ায়।

বর্তমান সরকার ইভিএম কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় দাবি করে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে অতীতের মতো গায়েবি মামলা দেয়ারও অভিযোগ করেন দলটির মহাসচিব।

তিনি বলেন, এতে করে কি ১০ তারিখ সমাবেশ বন্ধ করতে পারবে? পারবে না। আমাদের কথা পরিষ্কার। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবো।

দেশের অর্থনীতির করুণ চিত্র তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের মানুষ গরিব হচ্ছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন ধনী হচ্ছে।

ফখরুল বলেন, রিজার্ভ খেয়ে ফেলেছে। চিবিয়ে খায়নি, গিলে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছে আগামী তিন মাস ব্যয় বহন করার মতো রিজার্ভ নাই। তারা সব খেয়ে ফেলেছে। গত ১০ বছরে তারা ৮৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। এমন কোনো দ্রব্য নাই যার দাম বাড়েনি। তাদের লোকদের টাকা বেড়েছে। শতকরা ৪২ জন লোক দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের সব অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে। নষ্ট করে দিয়েছে সব স্বপ্ন। যেদিকে তাকাবেন খালি চুরি আর চুরি। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের বিদায় দেখতে চায়।

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজ মানুষের কোনো আয় নেই। অথচ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আয় আছে। চাঁদাবাজি, দলীয়করণ করে তারা আয় করছেন। লুটপাট করে দেশের অর্থনীতিকে তারা শূন্য করে ফেলছে।

বিএনপির এ নেতা বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) জোর করে দুবার নির্বাচন করেছে। ২০১৪ সালে কেউ ভোট দিতে কেন্দ্রে যায়নি। ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৮ সালেতো আগের রাতে ভোট শেষ হয়ে গেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের উদ্দেশ্যেই আজকের এই সমাবেশ।

সমগ্র দেশে শোকের আগুনে পুড়ছে মন্তব্য করে এ বিএনপি নেতা বলেন, আজ তারা দেশের মানুষকে ভাতে মারছে, পানিতে মারছে। আজ দেশের মানুষ এই জালিম সরকারের পতন চায়। আমরা একটি সুখী, সমৃদ্ধ, প্রেমময় বাংলাদেশ দেখার জন্য এ দেশ স্বাধীন করেছিলাম। কিন্তু আজ আবার এই দেশে প্রহসন চলছে।

তিনি বলেন, সরকার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে আরেকটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে। ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দেওয়ার সেই পুরনো পথেই হাঁটছে সরকার। ঢাকার গণসমাবেশ বানচাল করতে সরকার মামলা ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। কিন্তু এগুলো দিয়ে ঢাকার সমাবেশ থামাতে পারবেন না।


তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদেরকে ’৭১ সালের মতো আরেকটি যুদ্ধ করে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।

কুমিল্লা-বাসীর ভূয়সী প্রশংসা করে ফখরুল বলেন, এই কুমিল্লা মেধার জায়গা। কুমিল্লায় বড় বড় গুণী মানুষের জন্ম হয়েছে। আমি বলতে চাই আখতার হামিদ খানের কথা। যিনি তিন ফসলের চাষ শিখিয়েছেন। আপনারা সেই ইতিহাসের সেই গৌরবময় ধারক। আমি স্মরণ করতে চাই অলি আহাদ, কাজী জাফর, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ -কে।

বক্তব্যের শেষদিকে ফখরুল বলেন, আমাদের নেতা ৮ হাজার মাইল দূর থেকে ডাক দিয়েছেন। টেক ব্যাক বাংলাদেশ।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে তিনি ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন ।