মাওলানা আবুল আলা মওদুদি ভারত উপমহাদেশের ইসলামি ও ইলমি অঙ্গনের একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। কোনো কামেল ও দক্ষ আলেমের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী ইলমি ও দ্বীনি কাজ করার প্রয়োজনীয়তা তিনি কখনোই অনুভব করেননি; স্বীকার করেননি; বরং নিজ মেধার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ও চরম মুক্ত চিন্তার অধিকারী ছিলেন। ইসলামের নানা বিধান, দ্বীনের বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও ইলমি উত্তরাধিকার সম্পর্কে উম্মতের রাহবার ইমামগণ থেকে শুরু করে মুহাদ্দিসিনে কেরাম ও জামানার মুজাদ্দিদগণসহ অতীতের প্রায় সকল আলেম ও তাদের মূল্যায়ন তার নিকট তুচ্ছ— যা তার বিভিন্ন লেখা ও রচনার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এর পরিণতি যা হবার তাই হয়েছে। দ্বীনের মৌলিক নানা বিষয়ে তিনি ভ্রান্তির শিকার হয়েছেন। উম্মাহর সর্বজনমান্য সালাফ ও আকাবিরের পথ ও পন্থাকে অগ্রাহ্য করে নিজ চিন্তার আলোকে বিচ্ছিন্ন এক পথে চলেছেন; এক নতুন মতবাদ দাঁড় করিয়েছেন।
বিষয়টি ব্যক্তি মওদুদি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলে উলামায়ে কিরাম বিচলিত হতেন না। কিন্তু যখন তিনি নিজ মনগড়া গবেষণার ফসলগুলো ‘জামায়াতে ইসলামী’ নামে একটি দল গঠন ও নানা বই-পুস্তক রচনার মাধ্যমে উম্মতের মাঝে ছড়িয়ে দিতে লাগলেন; তখন মুত্তাকি ও সচেতন উলামায়ে কেরাম শরয়ী মূলনীতির আলোকে তার চিন্তাধারাকে যাচাই বাছাই করে উম্মতের সামনে দ্বীনের সঠিক ব্যাখ্যা পেশ করলেন। উপমহাদেশের খ্যাতনামা আলেমদের প্রায় সকলেই মওদুদি সাহেবের চিন্তাধারার মারাত্মক ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে স্পষ্টভাবে কথা বলেছেন, গ্রন্থ লিখেছেন।
মাওলানা মওদুদির ভ্রান্তি ও বিচ্যুতির ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। সবকিছু পাশে রেখে আজ কথা বলি মাওলানা মওদুদি রচিত তাফসিরগ্রন্থ ‘তাফহীমুল কুরআন’ নিয়ে। আকাবির আলেমদের চোখে প্রশ্নবিদ্ধ, বাইবেল-নির্ভর এ তাফসিরগ্রন্থটি কতটা নির্ভরযোগ্য?
কুরআনের প্রথম ব্যাখ্যাকার হলেন রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তার ব্যাখ্যাই হাদিস। রাসূলের হাদিসের আলোকে ও কুরআন নাজিলের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দ্বিতীয় ব্যাখ্যাকার হলেন সাহাবায়ে কেরাম— যে ব্যাখ্যার নাম আ-ছা-রে সাহাবা। তাদের পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় সকল জ্ঞানে সর্বোচ্চ পারদর্শী ইমাম ও তাফসিরবিদগণ হাদিস ও আছারে সাহাবার আলোকে কুরআনের তাফসির ও ইসলামি আইনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে গেছেন— যা নিশ্ছিদ্র সূত্র পরস্পরায় আজও উম্মতের নিকট অবিকল সংরক্ষিত রয়েছে। পরবর্তী বিদগ্ধ আলেমগণ সময় ও প্রেক্ষাপটভেদে সেই পুরনো ইলমি ভান্ডারেরই যুগোপযোগী বিশ্লেষণ করেছেন। গ্রহণযোগ্য সনদের হাদিস ও আছারে সাহাবা এবং এই উৎসদ্বয়ের আলোকে কৃত তাফসিরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো তাফসির যেমন তারা নিজেরা করেননি; তেমনি কেউ করে থাকলে তাকে বাতিল বলে বর্জন করেছেন। এটাই মূলত সঠিক ও নিরাপদ পন্থা— কুরআন-ব্যাখ্যায় এর কোনো বিকল্প পথ নেই। কোনো ব্যক্তি কুরআন ব্যাখ্যায় এই পথ ও পন্থা থেকে যেই মাত্রায় দূরে সরবে, তার তাফসির ঠিক সেই মাত্রায় পরিত্যাজ্য হবে।
হাদিস ও আছারে সাহাবার ভান্ডার উম্মাহর অসংখ্য নির্ভরযোগ্য মানুষের হাত ধরে সনদ পরম্পরায় আজও অবিকৃত। নতুন কোনোকিছু আবির্ভূত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এখন কেউ যদি সালাফে সালেহীনের সর্বসম্মত পথ ও পন্থা থেকে বিমুখ হয়ে কুরআনের কোনো তাফসির আবিষ্কার করে— সেটা হবে মনগড়া; যার পরিণতি নিশ্চিত গোমরাহি ও ভ্রষ্টতা। এমন গোমরাহি থেকে উম্মতকে বাঁচানোর জন্যই আল্লাহর রাসূল অত্যন্ত স্পষ্ট ও কঠোর ভাষার বলে গেছেন— ‘যে ব্যক্তি কুরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা করবে, সে যেন নিজ ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। (তিরমিজি ২:১২৩ ও মেশকাত শরিফ ৩৫ পৃ.)
অথচ এ কাজটিই অত্যন্ত সুনিপুণ দক্ষতায় করেছেন মাওলানা আবুল আলা মওদুদি। সালাফে সালেহীন ও উম্মাহর সর্বজনগৃহীত পথ থেকে সরে এসে রচনা করেছেন তাফহীমুল কুরআন। হাদিস ও আছারে সাহাবাকে অগ্রাহ্য করে প্রাধান্য দিয়েছেন বিকৃত বাইবেলের উদ্ধৃতি ও ইসরায়েলি বিভিন্ন বর্ণনাকে; ক্ষেত্রবিশেষ প্রাধান্য দিয়েছেন স্রেফ নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি ও ভেতরের অনুভূতিকে। বিশাল ইলমি তুরাস ও ধারাবাহিকভাবে চলে আসা ইলমি পদ্ধতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন। ফলস্বরূপ, চমৎকার ভাষানৈপুণ্য ও বর্ণনাভঙ্গি সত্ত্বেও তাফহীমুল কুরআনের অসংখ্য স্থানে চোখে পড়ে দ্বীনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মৌলিক নানা ভ্রান্তি ও বিচ্যুতি— মাওলানা মওদুদি অত্যন্ত কৌশলের সঙ্গে এ কাজ করেছেন বলে হয়তো একজন সাধারণ মুসলিমের চোখে তা ধরা পড়বে না; কিন্তু কখনোই সেসব একজন আহলে ইলম সচেতন আলেমের চোখ এড়াবে না।
আল্লামা যারকানি রহ. বলেন— ‘যে সকল তাফসির ইসরায়েলি বর্ণনা ও গাল-গল্পনির্ভর, যেসব তাফসিরের প্রধান উৎস ইহুদি বর্ণনা ও কথিত ইতিহাস, ইহুদিদের বিকৃত কিতাবাদির সঙ্গে যেসব তাফসিরের সম্পর্ক রয়েছে, যেসব তাফসির থেকে পারস্যের মুলহিদদের ধর্মহীনতার গন্ধ আসে, যেসব তাফসিরের উৎস আহলে কিতাব [ইহুদি-খ্রিস্টান]— এই সক-ল তাফসির সর্বাবস্থায় অগ্রহণযোগ্য— ভালো নিয়তে লেখা হোক বা খারাপ নিয়তে।’ (মানাহিলুল ইরফান/৪৯)
এবার আমরা একটু মাওলানা মওদুদি কৃত তাফহীমুল কুরআনের দিকে ফিরে তাকাই। তাফহীমুল কুরআনে নানা স্থানে আমরা দেখি শুধু বাইবেল আর বাইবেল! ইহুদি বর্ণনা ও গল্পনির্ভর কুরআনের অজস্র আয়াতের ব্যাখ্যা, সহিহ হাদিসকে অগ্রাহ্যকরণ। নিজের বিবেকপ্রসূত মনগড়া ব্যাখ্যা তো আছেই। আমরা দেখতে পাই তাফহীমুল কুরআনের উৎস তালমুদ, ইউহান্না ইত্যাদি।
মাওলানা মওদুদির এতটা বাইবেলপ্রীতির রহস্য এখনো অনুদঘাটিত। তাফহীমুল কুরআন গভীর মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করলে যে কেউ আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করবেন— স্থানে স্থানে তিনি মুহাদ্দিসিনে কেরাম, সনদ, হাদিসের সম্মানিত রাবিদের যেভাবে শক্তভাষায় সমালোচনা করেছেন; নিজের বোধ-বুদ্ধির সঙ্গে না মেলায় সহিহ হাদিসকেও যেভাবে বাতিল করে দিয়েছেন— সে অর্থে বাইবেলকে তিনি অনেকটা সাদরে কোলে তুলে রেখেছেন। অবাক লাগে, তিনি ইহুদিদের বিকৃত কিতাবগুলোর দিকে সমালোচনার দৃষ্টিই দিলেন না; সেসবের স্তর-বিন্যাসের চেষ্টাও করলেন না; সেসবের রচয়িতা কারা, বর্ণনাকারী কারা একটুও খতিয়ে দেখার চেষ্টা করলেন না। সবচে মজার বিষয় হলো, তাফহীমুল কুরআনেরই বেশকিছু স্থানে তিনি বাইবেল বিকৃতির স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্য যে, বাইবেল বিকৃত জানা সত্ত্বেও তিনি কুরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বাইবেল দ্বারাই করেছেন।
প্রোটেস্ট্যান্ট বাইবেল বলি বা ক্যাথলিক বাইবেল, নিউ টেস্টামেন্ট বলি বা ওল্ড টেস্টামেন্ট— বাইবেল বিকৃত হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। উম্মাহর সকলেই এ ব্যাপারে একমত। প্রোটেস্ট্যান্টদের বাইবেলে ৬৬টি পুস্তক আর ক্যাথলিকদের বাইবেলে রয়েছে ৭৩টি পুস্তক। প্রায় ৪০ জন লেখক ১৬০০ বছর ধরে এসব লিখেছে। [উইকিপিডিয়া]
এ সকল লেখক কারা, কী তাদের পরিচয়, কতটুকু বিশ্বস্ত বা নির্ভরযোগ্য কিছুই জানা যায় না। ঈসা আ.-এর সময়কাল থেকে তাদের মাঝে রয়েছে বিশাল গ্যাপ। সময়ের বিবর্তনে খ্রিস্টধর্মের নানা সম্প্রদায়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে, ক্ষমতাধরদের প্রভাবে বাইবেলে সংযোজন-বিয়োজন চলেই এসেছে। পাশাপাশি বাইবেলের অভ্যন্তরীণ অসংখ্য ঐতিহাসিক ভুল, পারস্পরিক বৈপরীত্য এবং অবাস্তব অনেক কাহিনির উপস্থিতি স্পষ্টভাবেই এর বিকৃতির প্রমাণ বহন করে। বাইবেলের বিকৃতি বিষয়ে মাওলানা রহমাতুল্লাহ কিরানবি লিখিত ‘ইজহারুল হক’ একটি অনুপম গ্রন্থ— সেখানে বিস্তারিত দেখা যেতে পারে। এমন এমন ভুলে বাইবেলের পৃষ্ঠাগুলো পূর্ণ— দূরবর্তী কোনো ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েও যা ঠিক করা সম্ভব না।
বিখ্যাত দার্শনিক ও চিন্তাবিদ আলেম মাওলানা আবুল হাসান আলী নদবি রহ. বলেন— ‘যেই বাইবেল মুসলমানদের তৃতীয় বা চতুর্থ স্তরের হাদিস-সংকলনেরও স্তরে নেই— সেই বাইবেলকে ‘সিহাহ সিত্তাহ’র স্তরে রেখে কেউ যদি কুরআনের তাফসির করে, সেই তাফসির কতটুকু নির্ভরযোগ্য হবে?’ তিনি আরো বলেন— ‘যেখানে বাইবেলের লেখক ও পুস্তকসমূহ সর্বদিক দিয়েই সন্দেহপূর্ণ, সেখানে আমার বোধগম্য হয় না মাওলানা মওদুদি তাফহীমুল কুরআনে বাইবেল-নির্ভর হয়ে কী করে কুরআনের তাফসির করলেন? যেই বাতির নিজেরই আলো নেই, সে অন্য বাতিতে আলো জ্বালবে কী করে?’ [তাফহীমুল কুরআন মে আহাদিসে শরিফা সে বে-ইতেমাদি আওর বাইবেল পর ইতেমাদ-এর তাকরিয]
তাফহীমুল কুরআনে বাইবেলের উদ্ধৃতির অভাব নেই। প্রায় ১৮৩ স্থানের ওপর তিনি বাইবেলের প্রসঙ্গ টেনেছেন। অসংখ্য স্থানে তিনি বাইবেলের বর্ণনার ওপর নির্ভর করেছেন। যেমন—
• হযরত ইয়াকুব আলাহিস সালামের মিশর আগমনে ইউসুফ আ.-এর অভ্যর্থনা জানানোর পুরো ঘটনা তিনি তালমুদের ওপর নির্ভর করে লিখেছেন। [তাফহীমুল কুরআন বাংলা-৬/১২৮, আধুনিক প্রকাশনী]
• বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টের বর্ণনা অনুসারে হযরত মুসা আ.-এর বয়স ৪০ নির্ধারণ করা— যেখানে নিজেই স্বীকার করেছেন যে, কুরআন কোনো বয়স নির্ধারণ করেনি। [তাফহীমুল কুরআন বাংলা-১০/২২৯, আধুনিক প্রকাশনী]
• হযরত মুসা আ.-এর শিক্ষা ও প্রতিপালন সংক্রান্ত আলোচনায় পুরোপুরি নির্ভর করেছেন বাইবেলের কিতাবুল আমাল ও তালমুদের ওপর। [তাফহীমুল কুরআন বাংলা-১০/২২৯, আধুনিক প্রকাশনী]
• হযরত নূহ আ.-এর বয়সের ব্যাপারে কুরআনের সাথে বাইবেলের বর্ণনা সাংঘর্ষিক হওয়ার পরও তিনি বাইবেলের বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। কুরআনের সাথে বাইবেলের তুলনা কী করে হয়? [তাফহীমুল কুরআন বাংলা-১১/১৭, আধুনিক প্রকাশনী]
• হযরত ইলয়াস আ. কী শব্দে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, তা হুবহু বাইবেল অনুসারে উল্লেখ এবং ইলয়াস আ. সংক্রান্ত পুরো তাফসিরই বাইবেল নির্ভর। [তাফহীমুল কুরআন বাংলা-১৩/৬৯-৭০, আধুনিক প্রকাশনী]
• বনি ইসরাইলের বাআল-পূজা সংক্রান্ত ঘটনা হুবহু বাইবেল অনুসারে উল্লেখ। [তাফহীমুল কুরআন বাংলা-১৩/৭০, আধুনিক প্রকাশনী]
• বাইবেল অনুসারে হযরত ইবরাহিম ও সারা আ.-এর বয়স নির্ধারণ। অথচ কুরআন এ ব্যাপারে নীরব। তাহলে কুরআনের ব্যাখ্যা তার কাছে বাইবেল! [তাফহীমুল কুরআন বাংলা-১৫/১৪৬, আধুনিক প্রকাশনী]
এ ধরনের আরো অসংখ্য বিষয় তিনি বাইবেলের ওপর নির্ভর করেছেন। কেমন যেন যে বিষয়ে কুরআন চুপ, সে বিষয়ে তার একমাত্র আশ্রয় বিকৃত বাইবেল।
• তিনি তাফহীমুল কুরআনের অনেক স্থানে বিকৃত বাইবেল ও কুরআনকে এক স্তরে নামিয়ে এনেছেন। [তাফহীমুল কুরআন বাংলা-৩/৫২, ১৭/১০৯, ১৬/৫৭, আধুনিক প্রকাশনী]
• এছাড়া অসংখ্য আয়াত, কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে তিনি বারবার বাইবেল দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। এত বাইবেলপ্রীতি কেন! [তাফহীমুল কুরআন বাংলা-৪/৯৫, ৮/৪৯, ১২/১০২ আধুনিক প্রকাশনী]
বাইবেলের প্রতি তিনি যে কতটা আসক্ত, বাইবেলের পুস্তকসমূহের প্রতি তিনি যে কতটা অনুরক্ত— তা তাফহীমুল কুরআনের নানা স্থানে ছড়িয়ে আছে। কুরআনের অসংখ্য বিষয়কে তিনি বাইবেলের সাথে কিয়াস করে নিজের মনমতো একটা সমাধান দিয়ে দিয়েছেন। কুরআনের অসংখ্য বিষয়ের ব্যাখ্যা উম্মাহর সর্বজন অনুসৃত পন্থা অনুসারে না করে বাইবেল দ্বারা করেছেন।
• সূরা আরাফের ১৩৩ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা বাইবেল দ্বারা করেছেন ও বাইবেলের অর্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। [তাফহীমুল কুরআন বাংলা-৪/৮২, আধুনিক প্রকাশনী]
• তার মতে বাইবেলের বাইবেলের লেবীয় পুস্তক দ্বিতীয় বিবরণে উদ্ধৃত হযরত মুসা আ.-এর একটি ভাষণ সূরা মায়েদার ৬৬ নম্বর আয়াতের উৎকৃষ্ট তাফসির। [তাফহীমুল কুরআন বাংলা-৩/৬২, আধুনিক প্রকাশনী]
• কুরআনের ইঙ্গিতসমূহ বোঝার জন্য বাইবেল দেখা জরুরি। [তাফহীমুল কুরআন বাংলা-৭/৯২ আধুনিক প্রকাশনী]
খুবই অল্প কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো। তাফহীমুল কুরআনের পাতায় পাতায় তার বাইবেল-নির্ভরতার প্রমাণ মিলবে। মাওলানা মওদুদির বাইবেলপ্রীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন— তাফহীমুল কুরআন মে আহাদিসে শরিফা সে বে-ইতেমাদি আওর বাইবেল পর ইতেমাদ/মুফতি মুহাম্মদ সাজিদ কুরাইশি কাসেমি
মাওলানা মওদুদি তার তাফহীমুল কুরআনের ভূমিকার পূর্বে ‘প্রসঙ্গ কথায়’ লিখেছেন যে, আমি (তাফহীমুল কুরআনে) কুরআনের শব্দাবলিকে ভাষান্তরিত করার পরিবর্তে কুরআনের একটি বাক্য পড়ার পর তার যে অর্থ আমার মনে বাসা বেঁধেছে এবং মনের ওপর তার যে প্রভাব পড়েছে, তাকে যথাসম্ভব নির্ভুলভাবে নিজের ভাষায় লেখার চেষ্টা করেছি। [তাফহীমুল কুরআন বাংলা-১/১০, আধুনিক প্রকাশনী]
মাওলানা মওদুদির সরল স্বীকারোক্তি। এখন আপনি ভাবুন— কুরআনের আয়াত সম্পর্কে রাসূল কী বলেছেন, সাহাবাগণ কী বলেছেন, তাবেইন, তাবে-তাবেইন কী বলেছেন, এইস-ব কিছু বাদ দিয়ে— ১৩০০ বছর পরে জন্ম নেওয়া ভারতের মহারাষ্ট্রের মাওলানা মওদুদির মনে যে প্রভাব পড়েছে, মনে যা এসেছে তা দিয়ে লিখে ফেলা তাফসির কতটুকু নির্ভরযোগ্য আর আপনি তা থেকে কতটা গ্রহণ করবেন!
মাওলানা মওদুদি কৃত তাফসির তাফহীমুল কুরআন অনেক মৌলিক ভ্রান্তি ও বিচ্যুতিপূর্ণ। দ্বীন সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে না— এমন কারো জন্য এই তাফসির অধ্যয়ন অনুচিত। পাশাপাশি, সালাফে সালেহীনের সর্বজন অনুসৃত নীতি অনুসারে রচিত কোনো তাফসিরের সঙ্গে এর তুলনা করাটাও হাস্যকর; যারা তুলনা করে— এতে কেবল তাদের জ্ঞানের দৈন্যই প্রকাশিত হয়।