দারুল উলুম দেওবন্দের নতুন শিক্ষাবর্ষের সূচনা উপলক্ষ্যে ছাত্রদের উদ্দেশে প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ নসিহত

আমিরুল হিন্দ হযরত মাওলানা সাইয়েদ আরশাদ মাদানি দা. বা.

গত ১১ মে (রবিবার ) বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দারুল উলূম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি, আমিরুল হিন্দ আওলাদে রাসূল মাওলানা সাইয়িদ আরশাদ মাদানি দা.বা. দারুল উলুম দেওবন্দের নতুন শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে উপদেশ প্রদান করেন।

মাওলানা মাদনী বলেন : দারুল উলুম দেওবন্দের দুটি বুনিয়াদি বিভাগ রয়েছে। এক- তালিমাত দুই- দারুল ইকামা। যার উদ্দেশ্য সঠিক তরবিয়ত করা, ছাত্রদের জীবনকে সঠিক ও সুন্দর পথে পরিচালনা করা।

আপনারা সারা বছর দারুল উলুম দেওবন্দে থাকবেন কিভাবে থাকবেন? জীবন কিভাবে পরিচালনা করবেন? কিভাবে শিক্ষা অর্জন করবেন? পড়া-শোনায় কিভাবে নিজেদেরকে মনোযোগী করবেন? এ সকল বিষয়ের উপর দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

মাওলানা আরশাদ মাদানি বলেন—আপনারা একটি বিষয় জানেন যে, মাদারিসে ইসলামিয়াকে একটি মহল তাদের চোখের কাটা হিসেবে দেখে। এরা ঐ লোক যারা ইসলামকে জঙ্গিবাদের ধর্ম বলে থাকে। ইসলাম সম্পর্কে এ সকল মাদরাসা গুলোতে পড়ানো হয়, মূলত মাদরাসাগুলোকে তারা জঙ্গিবাদের আস্তানা বলে থাকে।

আমি এবং আপনারা মাদরাসায় পড়াই ও পড়ি, নিজেদের জীবনকে মাদরাসায় ব্যয় করি। অথচ আমাদেরকে জঙ্গি বলা হয়! এটা কোন একটি রাষ্ট্রের কথা নয় বরং সারা পৃথিবীতে একটি মহল বা দল এ বিষয়ে ষড়যন্ত্র করে থাকে। দুনিয়াতে এমন কোন মাযহাব নেই যা পরিপূর্ণ সমৃদ্ধ? শুধুমাত্র ইসলাম ব্যতীত।

পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় যান আপনি কোথাও তাওরাত বা ইঞ্জিল অথবা যাবুরের হাফেজ পাবেন না। সারা পৃথিবীতে কোথাও মিলবে না। শুধুমাত্র কোরআন এমন কিতাব যাকে আল্লাহ তায়া’লা উম্মতে মোহাম্মদীর মাধ্যমে সংরক্ষণ বা হেফাজত করে রেখেছে। ২জন বা ৪ জন নয়, ১০ হাজার বা ২০ হাজার নয়; লক্ষাদিক নয় বরং কোটি কোটি হাফেজে কোরআন মিলবে সারা পৃথিবীতে । এই বিষটি অনেক মানুষের অন্তরে কষ্ট দেয় এটাকে সহ্য করতে পারে না একটি শ্রেণি।

মাদারিসে ইলমিয়া এই সকল হাফেজে কোরআন তৈরি করার বুনিয়াদি মারকাজ। আপনি দুনিয়ার যে স্থানে যান, যে রাষ্ট্রে যান। আপনি প্রত্যক্ষ ভাবে অথবা পরোক্ষভাবে দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্র পাবেন। যারা কোরআনের তালিম দিচ্ছেন। আমি আফ্রিকার জঙ্গলে দেখেছি, যাদের নিকট থাকার ঘর নেই কিন্তু তারা মাদরাসা করে বাচ্চাদেরকে সহি কোরআনের তালিম দিচ্ছেন। তাদের তেলাওয়াত আমাদের বাচ্চাদের থেকেও অনেক সুন্দর।
সেখানেও ১০০ বা ২০০ গজ দূরে খ্রিস্টানরা গির্জা তৈরি করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

মাওলানা মাদানি আরো বলেন— একদল লোকের চিন্তা হল ইসলাম কিভাবে চলছে? প্রচার কিভাবে লাভ করছে? জিন্দা কিভাবে আছে? এটা দুনিয়ার সামনে একটি মাসয়ালা। আমাদের দেশেও এমন লোক আছে। মাদারিসে ইলমিয়া যেগুলো কোন সরকার থেকে অনুদান নিয়ে চলেনা বরং সাধারণ জনগণের সাহায্যে চলে।
আর যদি কোন মাদরাসা সরকারের অনুদান নিয়ে থাকে, তাহলে সে সকল প্রতিষ্ঠানকে সরকার একসময় বন্ধ করে দেয়। যেমন আসামের মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র এই বুনিয়াদের উপর যে তারা সরকার থেকে অনুদান নিতেন। ইউপিতেও এসকল বিষয় চলছে আর এটা কিভাবে সম্ভব যে সরকারের অনুদান নিয়ে নিজ মাযহাবের কাজ করবেন!

এছাড়া আরোও একটি বিষয়ে হল এই যে, এ বিষয়টি খুব গুরুত্ব সাথে ভাবা উচিত আপনি অথবা আপনাদের মা-বাবা আপনাকে দুনিয়াবি শিক্ষা না দিয়ে মাসরাসায় দিয়েছেন। অথচ দুনিয়াবি শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে আপনি অনেক বেশি টাকা কামাতে পারতেন। আপনাদের বাবা-মা আপনাদেরকে দুনিয়াবি সকল প্রকার ভোগ-বিলাস থেকে বিরত রেখেছে শুধুমাত্র দ্বীনকে আপনার সিনায় হেফাজত করার জন্য মাদরাসায় পাঠান। এ নেয়ামতকে সারা দুনিয়া ক্ষতির কারন মনে করে। এ নেয়ামতকে আপনারা বুঝার চেষ্টা করুন। এটা আপনার ও আপনার বাবা-মার অনেক বড় কুরবানী। শুধুমাত্র দ্বীনের হেফাজতের জন্য কোরআন ও হাদিসের ইলেমকে সংরক্ষণের জন্য যা ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়। আপনাকে দারুল উলুম দেওবন্দে পাঠিয়েছেন। আপনারা নিজেদের জিন্দেগীকে বরবাদ করবেন না। অযথা সময় নষ্ট করবেননা।

মাওলানা মাদানি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন — ছাত্রদের একটি দল আছে যারা এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না। তাদের প্রতি এই নসিহত। আপনারা নিজেদেরকে সফল বিষয় থেকে ফারেগ করে মাদরাসায় এসেছেন। তাই নিজের জীবনকে কাজে লাগান এবং পরিপূর্ণভাবে ইলেম অর্জনের জন্য নিজেকে সোপর্দ করেন। আর এ জন্য আবশ্যক হলো সব সময় ক্লাসে উপস্থিত থাকা, এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দারুল উলুম দেওবন্দ এটা চায় যে, আপনি পড়েন এবং মেহনত করেন। সকল উস্তাদ এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক ফিকির করেন যাতে করে আপনি পড়াশোনা করেন।আইন-কানুন শুধুমাত্র ছাত্রদের জন্য নয় বরং উস্তাদদের জন্যও। যাতে করে উস্তাদগন নিজেদের সময় বেশি থেকে বেশি আপনাদের তালিম শিক্ষা দেওয়ার কাজে ব্যবহার করেন।

উস্তাগন আপনাদেরকে সকাল সকাল উঠাবেন, জামাতের সাথে নামাজ আদায় করবেন, ক্লাসে উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি নিশ্চিত করবেন। যদি কোন ছাত্র আইন- কানুন অমান্য করেন তাহলে তার ব্যাপারে মাদরাসা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। আরেকটি বিষয় যদি কোন প্রকার অবৈধ কাজে জড়িত হন এবং সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার লোকরা এসে বলে অমুক ছাত্রকে আমাদের প্রয়োজন ডেকে দিন এবং গ্রেফতার হন, তাহলে মাদরাসা আপনাকে কোন প্রকার সহযোগিতা করবেনা। এজন্য সকল প্রকার অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকবেন। নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবেন না।

মাওলানা মাদানি আরো বলেন সরকারি স্কুলে শিক্ষকদেরকে বলে দেওয়া হয় স্কুলে মোবাইল নিয়ে না আসার জন্য তাহলে বলুন মাদরাসার ছাত্রদেরকে কিভাবে মোবাইল চালানোর অনুমতি দেওয়া যায়। এজন্য মাদরাসায় কোন ছাত্র মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন না আমি এবং দারুল ইকামা ও তালিমাত আপনাকে বলছি এটা আপনার ভালোর জন্য যখন ধরা খাবেন তখন আমরা কোন প্রকার কথা শুনবো না। নিজেরা নিজেদের জীবন নষ্ট করবেন না।

জামাতের সাথে নামাজ আদায় করবেন। প্রতি নামাজ জামাতের সাথে পড়বেন। ঘোরাঘুরি থেকে বিরত থাকবেন। কোন ক্লাসে অনুপস্থিত হবেননা। যদি কোন তালেবে ইলেম সারা বছর ক্লাসে উপস্থিত থাকেন তাহলে তাকে দারুল উলুম থেকে পুরস্কৃত করা হয়। এরকম শত শত ছাত্র রয়েছে যাদেরকে আমরা অতীতে পুরস্কৃত করেছি। অতএব আপনারা এ বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। আল্লাহ আপনাদেরকে সত্যিকারে তালিম ইলেম এবং সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন। সফলতার সাথে জীবন যাপন করুন। আমিন