রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের মাসুম দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। চিকিৎসকদের পরামর্শে স্বজনরা তার দুটি কিডনি ও কর্নিয়া দান করেন।
মৃত মাসুমের স্ত্রী তানিয়া বলেন, আমার হাজবেন্ডের উসিলায় যদি কেউ বেঁচে থাকে, এটা ভেবেই আমি তার অঙ্গ দান করেছি। একজন বা দুজন হোক, বাঁচুক! অরগ্যান দান করার এটাই একমাত্র উদ্দেশ্য।
মাসুমের বড় ভাই মো. মামুন বলেন, আমরা পরিবারের সবাই মিলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের পাশাপাশি যদি আরও অনেকে এরকম কিডনি দান করে, তাহলে বহু রোগী বেঁচে যাবে। ভালো থাকবে।
এরপরই অল্প সময়ের মধ্যে মাসুমের দুটি কিডনি সার্জারির মাধ্যমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় অপসারণ করেন চিকিৎসকরা। একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা তাহমিনা ইয়াসমিনের শরীরে। অন্য অপারেশনটি হয় মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশনে। দেশে মৃত মানুষের কিডনি রোগীর শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করার দ্বিতীয় নজির এটি।
কিডনি গ্রহীতা তাহমিনার মা খুরশিদা পারভীন বলেন, স্যার আজ বেলা ১২টায় ফোন দিয়েছিলেন। বললেন যে, একজন রোগীর আত্মীয়দের সাথে কথাবার্তা চলছে। তারা রাজি থাকলে আমার মেয়ের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করানো যাবে।
সার্জারিতে নেতৃত্ব দেয়া চিকিৎসক হাবিবুর রহমান জানান, সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে প্রতিস্থাপন। জটিল এই অপারেশন শেষ করতে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা। ইউরোলজি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, এটা আমাদের দ্বিতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যানটেশন। এই ট্রান্সপ্ল্যানটেশনের সাথে বিশাল বিশাল অঙ্গ জড়িত। জাতির কাছে একটিই আবেদন– তানিয়ারা যে আদর্শ দেখিয়ে গেলেন, সেটা দেখে সবাই যাতে উদ্বুদ্ধ হন। হাজার মৃতপ্রায় রোগীর সাহায্যার্থে তারাও যেন এগিয়ে আসেন।
এর আগে, গত বছরের ১৯ জানুয়ারি বিএসএমএমইউতে প্রথমবারের মতো একজন মৃত মানুষের শরীর থেকে কিডনি নিয়ে তা অন্য দুজনের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।