ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার রয়েছে 

ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার রয়েছে 

বর্তমানে আমাদের দেশ খুবই আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে সামর্থ্যবানরাই হিমশিম খাচ্ছে।  মধ্যবিত্ত এবং নিম্নআয়ের মানুষের পরিস্থিতি নীরব কান্নায় রূপ নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের বিত্তবান মানুষদের উচিত অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। 

 আল্লাহ তাআলা মুসলিম সম্প্রদায়ের ধনীদের সম্পদে গরিবদের হক রেখেছেন। এটি গরিবের প্রতি ধনীর কৃপা প্রদর্শন নয়, বরং তাদের অধিকার।

 হযরত আলী রাজিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা মুসলমান ধনী লোকদের ধন-সম্পদ থেকে এমন পরিমাণ ব্যয় করা ফরয করে দিয়েছেন, যা তাদের গরিব ও ফকিরদের প্রয়োজন পুরণে যথেষ্ট হবে। তাই, গরিব-দুঃখীরা যে ক্ষুধাকাতর কিংবা বস্ত্রহীন থেকে কষ্ট পায়, তার মূলে রয়েছে ধনী লোকদের পুঁজিবাদী আচরণ। এ ব্যাপারে সকল মুসলিমদের সতর্কতা অবলম্বন জরুরী । 

 জেনে রেখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই শ্রেণির লোকদের খুব কঠিন হিসেবে গ্রহণ করবেন এবং তাদেরকে অতি  যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন।’ (আত তাবরানী)

এই হাদীসের মাধ্যমে  সুস্পষ্ট উপলব্ধি করা যায় যে, গরিব-দুঃখী লোকদের অভুক্ত ও বস্ত্রহীন থাকার জন্য ধনী লোকেরাই বহুলাংশে দায়ী। কারণ, ধনী লোকেরা যদি তাদের ধন সম্পদ হতে গরিব-দুঃখীদের নির্দিষ্ট প্রাপ্য অংশ দিয়ে দিত, তাহলে গরিব দুঃখীদের খাওয়া-পরার, অভাবের যাতনা এবং কোনরূপ কষ্ট-বেদনার সম্মুখীন হতে হতো না। মুসলিম সমাজের ধনী লোকেরা এই বিশেষত্বটি যতবেশী উপলব্ধি করবে, ততই মঙ্গল।

ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত মানবকল্যাণের জীবনব্যবস্থা। এ জীবনব্যবস্থা মানুষকে অন্য মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হতে উদ্বুদ্ধ করে।

ইসলাম দানের অনুপ্রেরণাকে এতটুকু পর্যন্ত প্রসারিত করেছে যে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব সম্পদই আল্লাহর পথে বিলিয়ে দেয়ার প্রতি আল কুরআনে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামকে দান খয়রাত করতে বললে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করেছিলো, আমরা কী পরিমাণ দান করব? মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:‘তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করছে যে, কী পরিমাণ তারা দান করবে? আপনি বলে দিন, প্রয়োজনাতিরিক্ত সবকিছু’ । (সূরা আল বাকারা)

দান–খয়রাত প্রকাশ্যেও করা যায়, গোপনেও করা যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা দান প্রকাশ্যে করো, তবে তা উত্তম; আর যদি তা গোপনে করো এবং অভাবীদের দাও, তবে তা তোমাদের জন্য শ্রেয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের মন্দগুলো মোচন করে দিবেন। তোমরা যা করো, আল্লাহ তা অবগত আছেন।’ (সুরা-২ আল বাকারা, আয়াত: ২৭১)

 সম্পদ আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। এ নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় হবে আল্লাহর বান্দা তথা মানুষের সেবা করার মাধ্যমে।

রব্বে কারীম যেমন জগতবাসীকে অগণিত নিয়ামত দান করে করুণায় আবৃত করেছেন, মানুষের উচিত অসহায় মানুষের প্রয়োজনে আল্লাহর দেয়া নেয়ামত-সম্পদ থেকে দান সদকার হাতকে প্রসারিত করা। তবেই তো আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন সম্ভব। 

শিক্ষার্থী 

জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ

 মিরপুর, ঢাকা।