নির্বাচন নিয়ে দুই দলের অনড় অবস্থান বিপজ্জনক : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর ৯ মাস বাকি। এখনো বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। এই দুই দলের অনড় অবস্থান দেশের জন্য বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

নির্বাচন ভবনে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের (ইএমএফ) আয়োজিত বৈঠক শেষে আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

সিইসি বলেন, ‘দুই দলের এই অবস্থান খুব বিপজ্জনক দেশের জন্য। যদি নির্বাচন এই অনড় অবস্থার কারণে হয় কোনো বড়দল পার্টিসিপেশন না করে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বলব—নির্বাচনের মূল ফলাফলের ওপর একটু ঝুঁকি থাকতে পারে।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল মনে করেন, কোনো এক দল যদি নির্বাচনের ফল মেনে না নেয় তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায় এবং মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়।

সিইসি বলেন, ‘আমরা চাই না ওই ধরনের কোনো সৃষ্টি। সরকারে অধিষ্ঠিত দলের প্রতি আমার আহবান থাকবে, আপনারাও আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যান বিরোধী দলগুলোকে সঙ্গে নিতে। তারাও যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনটাকে আমরা যেন অবিতর্কিতভাবে তুলে আনতে পারি।’ 

এ সময় সিইসি জানান, নির্বাচন কমিশন সীমাবদ্ধতার জায়গা রয়েছে। ইসি সংবিধানের বাইরে যেতে পারবে না। সংবিধানের আলোকেই সংস্থাটি নির্বাচন করবে। 

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রত্যাশা জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘প্রধানতম রাজনৈতিক দলগুলো যেন অতি অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে। কারণ, নির্বাচনে এবং নির্বাচনের চেয়ে ভোটকেন্দ্রগুলোকে যদি ইফেক্টিভ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হয় প্রত্যাশিত ভারসাম্য সেটা সৃষ্টি হবে না।’ 

সিইসি আরেও আশা প্রকাশ করেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একটা রাজনৈতিক সমঝোতা হয়ে সব দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।’ 
 
এর আগে বিকেল সোয়া ৫টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠক প্রসঙ্গে সিইসি জানান, ইএমএফের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। দুপক্ষের কেউ কাউকে পরামর্শ দেয়নি। 

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের ইলেকশনটা যাতে আগামীতে সুন্দর হয়। জানতে চেয়েছেন, আমরা পর্যবেক্ষক ওয়েলকাম করি কি-না। উই আর ভেরি ওয়েলকাম পর্যবেক্ষকদের সম্পর্কে। বিষয় হচ্ছে আমরা ট্রান্সপারেন্সি (স্বচ্ছতা) চাচ্ছি।’ 

সিইসি জানান, স্বচ্ছতার স্বার্থে নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষকদের জন্য একেবারে উন্মুক্ত। আগামী নির্বাচন শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যাতে নিরপেক্ষ এবং বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে সেটা ইসি দেখাতে চায়। 

ইএমএফের সদস্য এবং নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালা নাথ খানাল জানান, ইসির সঙ্গে পারস্পরিক মতামত আদান-প্রদানের জন্য এটি তাঁদের জন্য একটি বড় সুযোগ। কীভাবে খুব পক্ষপাতহীন নির্বাচন করা যায় এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা যায়, এই দিক থেকে আমাদের অনেক কিছু করতে হবে। আমরা এই বিষয়টিও আলোচনা করেছি যে নির্বাচন খুব ব্যয়বহুল হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। কীভাবে এটি কমানো যায়, আমরা আমাদের মতামত আদান প্রদান করেছি। 

আমরা আশা করব, এই কমিশনের অধীনে আগামী নির্বাচন খুব প্রায়োগিক, শান্তিপূর্ণ এবং পক্ষপাতহীন হবে বলেও যোগ করে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। 
 
জার্মানির জিবিপি ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভলকার ইউ. ফ্রেডরিচ বলেন, ‘আমরা সিইসি কাছে থেকে সমস্যা, তা উত্তরণের উপায়, তাদের পরিকল্পনা শুনেছি। আমরা পারস্পরিক মতামত আদান-প্রদান করেছি। কোনো কিছুই পারফেক্ট নয়, এমনকি গণতন্ত্রও নয়। আমরা আাশা করব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হবে। নির্বাচনের পূর্বে আগামী কয়েক মাসে আমার আরও সহকর্মী আসবে পর্যবেক্ষণের জন্য।’ 

প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণের ওপর নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করবে বলে মনে করেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্রেডরিচ বলেন, ‘এখানে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যেকোনো একটি দলকে অংশগ্রহণ করতেই হবে। নিবন্ধিত এবং যোগ্যতা থাকলে তাদের ভোটে অংশগ্রহণ করার অধিকার আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’