নেতৃত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা

আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

লুকমান হাকিম

নেতৃত্ব হলো: ‘মানুষকে লক্ষ্যের দিকে ধাবিত করার বা পরিচালনা করার যোগ্যতা। এই সংজ্ঞাটিকে চারটি ভাগে ভাগ করে বুঝা দরকার।
প্রথমত, নেতৃত্ব হলো ‘যোগ্যতার’ বিষয়। নেতৃত্ব কোনো বিজ্ঞান কিংবা জ্ঞানের বিষয় নয়। নেতৃত্ব নিয়ে হাজার হাজার বই পড়তে পারি, তবে বই পড়ে নেতা হওয়া সম্ভব নয়। নেতৃত্ব দিতে গেলে অবশ্যই কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। বই সহায়ক হতে পারে কিন্তু বই পড়ে নেতা হওয়া যায় না।

দ্বিতীয়ত, নেতৃত্বের ব্যাপারে যে কথাটি আসে তা হলো, ‘মানুষ পরিচালনা করা’ (moving people)। এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে মানুষকে পরিচালনা করবো?
মানুষ পরিচালনার পাঁচটি উপায় আছে।
১. মানুষকে প্রলুব্ধ করার মাধ্যমে: ব্যক্তির অবস্থান, অর্থ-সম্পদ, পরকালীন মুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে প্রলুব্ধ করা যায়।
২. ভীতি প্রদর্শন করে: মানুষকে ভয় দেখিয়ে কিংবা হুমকি দিয়ে তাদের উপর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব। যেমন, কেউ বলতে পারেন, আপনি যদি আমার নির্দেশিত কাজটি না করেন তাহলে আপনাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। এটা ঠিক, মানুষ হুমকির মুখে বাধ্য হয়ে কারো পক্ষে কাজ করে থাকে। কিন্তু…….. হৃদয়ে নেতার প্রতি ক্ষোভ থেকে যায়। এখানেই নেতার ব্যর্থতা।
৩. বক্তৃতা দেয়ার মাধ্যমে: কারো যদি আকর্ষণীয় বক্তব্য দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করার যোগ্যতা থাকে তাহলে তারা নেতৃত্ব দিতে অনেক বেশি সক্ষম।
৪. মানুষকে প্ররোচিত করার যোগ্যতা দিয়ে: নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এই যোগ্যতাটি অনেক বেশি কার্যকর এবং অনেক বেশি স্থায়ী।
৫. অনুসরণের জন্যে আদর্শ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে: মানুষের মাঝে নিজেকে অনুসরণ এবং অনুকরণের আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই পাঁচটির মধ্যে কোন পদ্ধতিটি রাসূল (সা.) ব্যবহার করেছিলেন? উত্তর হলো, তিনি এর সবকটি ব্যবহার করেছিলেন। সুতরাং নেতৃত্ব দিতে গেলে জানতে হবে কীভাবে মানুষকে কাজে লাগাতে হয়? এমনকি সেটা ভয় দেখিয়ে হলেও করতে হবে। কারণ কিছু মানুষ আছে যারা ভীতি বা হুমকি ছাড়া কাজ করতে চায় না। তবে নিতান্তই প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে বুদ্ধিমত্তার সাথে এবং ন্যায়ভাবে ভীতি প্রদর্শন করতে হবে।

তৃতীয়ত, যে বিষয়টি নেতৃত্বের সাথে জড়িত তাহলো ‘মানুষ’ (people)। তবে মানুষের চেয়ে আরো উপযুক্ত শব্দ হলো অনুসারী (followers)। অর্থাৎ নেতৃত্ব হলো নিজের অনুসারীদেরকে পরিচালনা করার যোগ্যতা। যেহেতু অনুসারী শব্দটি নেতিবাচক অর্থেও ব্যবহার করা হয়, তাই আমি অনুসারী না বলে মানুষ শব্দটি ব্যবহার করেছি।
সর্বশেষ, নেতৃত্বের সাথে গভীরভাবে জড়িত যে বিষয়টি, তাহলো ‘লক্ষ্য’(goals)। এখন প্রশ্ন ওঠতে পারে, নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে একজন নেতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ভালো হওয়া উচিত? নাকি খারাপ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়েও নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব? জবাব হচ্ছে অবশ্যই সম্ভব। অধিকাংশ নেতৃত্বই হলো ক্ষতিকর কিংবা বাজে নেতৃত্ব। তাই আমাদের বুঝতে হবে ক্ষতিকর কিংবা বাজে নেতৃত্ব বলতে কী বুঝায়; কীভাবে এই ধরনের নেতৃত্ব কাজ করে এবং কীভাবে এই ক্ষতিকর কিম্বা বাজে নেতৃত্ব থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব?
তিন ধরনের বাজে বা ক্ষতিকর নেতৃত্ব রয়েছে–
ক. যে নেতার উদ্দেশ্য খারাপ: যদি উদ্দেশ্য অসৎ হয়- তাহলে নেতৃত্ব ক্ষতিকর বা বাজে তো হবেই। হতে পারে সেই উদ্দেশ্য সাধারণভাবেই খারাপ অথবা কেউ ব্যক্তি স্বার্থে নেতৃত্বের সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছে। দুইটিই সমানভাবে ক্ষতিকর। দুঃজনকভাবে অধিকাংশ নেতারাই বর্তমানে ব্যক্তি স্বার্থে কাজ করে থাকে। আর এসব কারণে অবাধ দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো ছড়িয়ে পড়েছে।
খ. খারাপ নৈতিকতা সম্পন্ন নেতা: যাদের নীতি-নৈতিকতা এবং আচরণ ভালো নয়, নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তারা অবশ্যই ক্ষতিকর।
গ. অযোগ্য নেতা: একজন মানুষের উদ্দেশ্য অনেক বেশি সৎ হতে পারে। হতে পারে তিনি অনেক বেশি নীতিবান এবং নৈতিকতার দিক থেকে অনেক উন্নত। কিন্তু যদি তিনি অদক্ষ এবং অযোগ্য হন- তাহলে তিনি অবশ্যই ক্ষতিকর ও বাজে নেতা। তাই সততা এবং নীতি-নৈতিকতার পাশাপাশি নেতৃত্বের জন্য দক্ষতা ও যোগ্যতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।