পয়গাম ডেস্ক :
সন্ধ্যা হলে শহরের পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে। বাসার ছাদ বা গলির কোনে বাজতে থাকে ডিজে বক্স। অতিরিক্ত আওয়াজে ‘শব্দ দূষণ’ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমানও বেড়ে যায়। সচেতন নাগরিকদের কেউ কেউ তা নিয়ে সরব হন। নিজ উদ্যোগে না হলে পুলিশ-প্রশাসনের দারস্ত হন। কখনো প্রতিকার হয়। আর কখনো ভোগতে থাকেন অসহ্য যন্ত্রণায়।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে ‘শব্দ-দূষন’ মানুষের ৩০ টি রোগের কারণ হতে পারে। সমীক্ষায় জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২৬% মৃত্যু হয় পরিবেশ দূষণজনিত অসুস্থতার কারণে। যেখানে বিশ্বব্যাপী গড় মৃত্যুর হার মাত্র ১৬ শতাংশ। ডাক্তাররা বলেন, মানুষের জন্য শব্দের সহনীয় একক মাত্রা হচ্ছে ৪৫ ডেসিবেল। এর চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ ‘শব্দ দূষণ’ হিসাবে বিবেচিত – যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবেল অতিক্রম করলে তা মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অথচ উচ্চ ক্ষমতা-সম্পন্ন এসব ডিজে বক্সের শব্দ অনেক ক্ষেত্রে ১০০ ডেসিবেল অতিক্রম করে ফেলে।
এই মাত্রাতিরিক্ত শব্দ- শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রচন্ড চাপ দেয়। রক্ত-নালী সংকোচিত করে রক্ত-প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। রক্তে কোলেষ্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। মাংসপেশির সংকোচন করে এবং পরিপাকে বিঘ্ন ঘটায়। এর তীব্রতা গর্ভবতী মা ও হৃদরোগীদের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। দুর্বল স্বাস্থ্য সম্পন্ন মহীলার গর্ভপাত এবং দুর্বল হার্ট সম্পন্ন ব্যক্তির হার্ট এ্যাটাক ঘটায়। এছাড়া শ্রবণ শক্তি হ্রাস পাওয়া, বধির হওয়ার মত অবস্থার সৃষ্টি হওয়া, মাথা ব্যাথা, বদহজম, অনিদ্রা, মনোসংযোগ কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তি বোধ, এমনকি অস্বাভাবিক আচরণ করার মত মনোদৈহিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর প্রভাব সূদূর প্রসারী হতে পারে। শিশু বয়সে শব্দের অধিক মাত্রা বা তারতম্য বৃদ্ধবয়সে কানের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
নানা সুবিধার কারণে শীতে সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় তুলনামূলক বেশি। প্রায় প্রতিদিনই প্রতিটা এলাকায় বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। কোথাও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা বা সঙ্গীতের আসর বসছে। সেসবের সবগুলোতে বাজানো হচ্ছে ডিজে-বক্স। আর এসব এতই উচ্চস্বরে বাজছে যে, আশেপাশের বাসিন্দারা তো বটেই, এক কিলোমিটার পর্যন্ত মানুষ অস্বস্তি বোধ করেন। কখনো রাতভর চলা ডিজের উচ্চ আওয়াজে ঘুমানোটা দায় হয়ে দাঁড়ায়। ডিজে-বক্সের আওয়াজ শিক্ষার্থীদের পড়ারও ক্ষতি করছে।
শিক্ষিত ও সচেতন প্রত্যেক নাগরিক শব্দ দূষণের ক্ষতিকর দিক জানেন। এতে মানুষ, পশু-পাখি সবার সমস্যা হয়। তার পরেও পরিস্থিতি পাল্টায় না। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং নৈতিকতাকে টিকিয়ে রাখতে; নিজের জন্য, পরিবেশ ও পরিবারের জন্য ডিজের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা এখন সকলের জন্য আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুহাম্মদ এহসানুল হক
তরুণ আলেম, লেখক, গবেষক