পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী মাওলানা সিদ্দীকুল্লাহ চৌধুরীর সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়

মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী

পয়গাম ডেস্ক:

১৬ জানুয়ারি (সোমবার) সকাল ১০টায় ঢাকার উত্তরায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের গণশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ জমিয়তের সভাপতি  মাওলানা সিদ্দীকুল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।

মতবিনিময়কালে মাওলানা সিদ্দীকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ইজতেমায় উলামায়ে কেরামের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তারা ইজতেমা সফলের লক্ষ্যে কাজ করেছেন। তাবলীগের সাথী ভাইয়েরাও কাজ করেছেন। পাশাপাশি প্রশাসনের ভাইয়েরাও ভূমিকা রেখেছেন, দায়িত্ব পালন করেছেন। জনগণের মেজাজও এর দ্বারা তৈরি হয়েছে যে, আমরা ইজতেমায় যাব,  আমলের মধ্যে থাকব।

আমরা ভারতবর্ষে স্বাধীনভাবে মাদরাসা পরিচালনা, মসজিদ পরিচালনা, তাবলীগী ভাইদের আচার-বিচরণ, এছাড়া বহু কাজ; মাহফিল, জলসা ইত্যাদি করে থাকি। বাধা প্রাপ্ত হই না। সব জায়গায়ই দুষ্টু মানুষ থাকে, তারা গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করে। যারা গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করে, তাদের সংখ্যা কম। ভালো মানুষের সংখ্যা বেশি।

আমরা ভারতবর্ষের মানুষ। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী দেশ। কোরআন হাদিসের দৃষ্টিতে প্রতিবেশীদের সাথে ভালো ব্যবহারের হুকুম রয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুকুম করেছেন। বাড়ির পাশের মানুষ যেমন প্রতিবেশী হয়, তেমনি পাশের দেশ ও প্রতিবেশী হয়। বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের ২২০০ কিলোমিটার তথা নয়টি জেলার পরোক্ষভাবে বর্ডার রয়েছে। স্বভাবতই আমাদের বর্ডারে আমরা সুরক্ষিত থাকবো। বাংলাদেশের বর্ডারে যারা থাকেন, তারা সুরক্ষিত থাকবেন। বাংলাদেশের সাথে ভারতবর্ষের সম্পর্ক সুদৃঢ়  হবে।

আমি সরকারি প্রতিনিধি হয়ে আসিনি। ইজতেমায় এসেছি। আলেম ভাইদের সাথে দেখা করতে এসেছি । আমরা চাইবো সেতুবন্ধনের কাজ করতে। সরকার নিবে কি নিবেনা এটা উভয় সরকারের কাজ, কিন্তু আমাদের ডুগডুগি আমরা বাজিয়ে যাব। আমরা মনে করি আলেমদের দায়িত্ব, অবদান, তাদের কর্তব্যবোধ যথেষ্ট রয়েছে । আমরা চেষ্টা করলে সেতুবন্ধনের কাজটি করতে পারি।

বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের সাথে আমাদের ওখানকার সাহিত্যিকদের একটা মিল বন্ধন রয়েছে। নাট্যকারদের মিলবন্ধন রয়েছে। লেখক লেখিকাদের মিলবন্ধন রয়েছে। ডাক্তারদের সুসম্পর্ক রয়েছে। আইনজীবীদের সাথে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। প্রশাসনের লোকদের থাকা তো স্বাভাবিক। এই সমস্ত মিলবন্ধনের একটা দাবি, -আমি সিদ্দিকুল্লাহ দায়িত্ব নিয়ে বলছি- এখানকার আলেম সমাজ ও ভারতের আলেমসমাজ; বিশেষ করে যারা সাহারানপুর, মুরাদাবাদ, দেওবন্দে আমাদের বুযুর্গানে দ্বীনের কাছে লেখাপড়া শিখেছেন, এদের মন-মানসিকতা প্রায় এক। আমরা উভয়ে একটা সম্মিলিত কাজ করলে, উভয় দেশের অনেক উপকার হবে । আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, আমরা বাংলাদেশের বন্ধু । কে কি বলল এটা আমাদের কাছে তুচ্ছ । আমাদের মন তো কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। মুখের ভাষায় কুলুপ লাগাতে পারবে না।

ইজতেমার ময়দান শেখ মুজিবুর রহমান রহ. দিয়েছেন। তিনি সদকায়ে জারিয়ার কাজ করে গেছেন। আমি যতটুকু শুনলাম বুঝলাম,  ইজতেমার ময়দানের সম্পূর্ণ রূপ দিতে গেলে এখানকার দলিল দস্তাবেজের প্রয়োজন রয়েছে, এখানকার প্রধানমন্ত্রী তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করুন; আমি এটা চাই। মাঠের দলিল, রেকর্ড, ম্যাপ; এগুলো হয়ে গেলে এদের হাত শক্ত হবে।  ময়দান হাতছাড়া হবে না। মানুষ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। উশৃঙ্খলতাও বাড়ছে। কেউ কারো অনুমতি ছাড়া কোনো কাজ শুরু করে দিবে। কাগজ হয়ে গেলে, নির্দিষ্টকরণ হয়ে গেলে, কাজ অনেকখানি সহজ হয়ে যাবে।

আমাদের ভারতবর্ষের দারুল উলুম দেওবন্দ ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দি সিদ্ধান্ত নিয়েছে দরসে নেযামী তথা বেসরকারি মাদরাসাসমূহে জেনারেল এডুকেশন (সাধারণ শিক্ষা) দিবে। এটা দু’মাস আগে সর্বভারতীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ আমরা এটা নিয়ে চেষ্টা করছি। প্রতিটি মাদরাসায় ছাত্র-ছাত্রীরা আছেন, জেনারেল এডুকেশন তারা নিবেন, জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। দারুল উলুমের স্বীকৃত রাবেতায়ে মাদারিসে ইসলামিয়া আরাবিয়া (মাদরাসা সমন্বয় সমিতি) রয়েছে। পশ্চিম বাংলায় আমাদের সাথে সাড়ে ১১ শত মাদরাসা রয়েছে। প্রতিটি মাদরাসায় ক্লাস এইট পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, ভূগোল, অংক পড়তে হয়। আরবি ভাষায় কোরআন হাদিস যেমন পড়বেন,  ফিকাহ আদব পড়বেন, বাংলাও পড়তে হবে। কারণ, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাঙালি সমাজ। বাংলায় যদি আমরা পারদর্শী হই, তাহলে আমাদের বক্তব্য, মেসেজ, আমাদের কথা মানুষের কাছে পৌছাবে। এটা হল আমাদের ইচ্ছা। এখানকার ভাইদেরও বলেছি, তারা একমত পোষন করেছেন। এটা আসতে ধীরে হবে, কিন্তু এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে জমিয়ত নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন স্তরের উলামায়ে কেরামও উপস্থিত ছিলেন। নেতৃবৃন্দের মধ্যে সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক, সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ তালুকদার, সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ মানিকনগর, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মাওলানা লোকমান মাযহারী, মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজীজ, মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী প্রমূখ ।