পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সন্ত্রাসকে উসকে দিচ্ছে আ.লীগ — খন্দকার মোশাররফ হোসেন

পয়গাম ডেস্ক:

বিএনপির স্থায়ীকমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে বর্তমান ফ্যাসিস্ট, বাকশালী আওয়ামী সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রাকে বানচাল করতে দলীয় সন্ত্রাসী ও কিছু সংখ্যক পুলিশকে লেলিয়ে দিয়েছিল। বিএনপি জনগণের দাবি নিয়ে যখনই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে একই স্থানে বর্তমান ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী পাল্টা কর্মসূচির মাধ্যমে সন্ত্রাসকে উসকে দিয়ে ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়।’

রোববার, ফেব্রুয়ারি ২৩ সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন খন্দকার মোশাররফ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গ্যাস, বিদ্যুৎ, চাল, ডাল, তেল, আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সার, ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে গতকাল ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে বিপুল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। যদিও গত কয়েক দিন বিএনপির নেতাকর্মীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রাখা হয়েছিল। এরপরও দেশব্যাপী প্রায় সব ইউনিয়নে গতকাল অত্যন্ত সফলভাবে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল অসাধারণ ও অভূতপূর্ব।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির পদযাত্রায় আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হামলা ও গুলিবর্ষণ করেছে। নরসিংদীর পলাশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খানের মিছিল থেকে ব্যানার ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া যশোরে ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ অমিতের ওপর ডিবি পুলিশ বর্বরোচিত হামলা চালায়। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীকে বেধড়ক লাঠিপেটা করা হয়।’

পদযাত্রা কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের লোকজন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা দেওয়া ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নির্মম হামলার ঘটনার সচিত্র গতকাল সবাই দেখেছেন। পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় ৫০ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-লুটপাট চালানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জনগণের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ ব্যয় করে পুলিশ পাহারায় শান্তি সমাবেশের নামে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানানোর সব প্রক্রিয়া চলছে। গতকাল সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের এমপিদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিএনপিসহ নিরীহ জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি, জানমালের ওপরে হামলা চালানো হয়। এর দৃশ্য আপনারা নিজেরাই অবলোকন করেছেন। যারা গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছেন, তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, ‘আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশি হামলা সত্ত্বেও গণতন্ত্রকামী জনতা দানবীয় সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজপথে এসে কর্মসূচি সফলের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে, এ সরকার জনবিচ্ছিন্ন। যুগে যুগে কোনো অত্যাচারী সরকার জুলুম-নির্যাতন করে টিকে থাকতে পারেনি, এ সরকারও পারবে না। গত ১৪ বছর ৫০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়ে এবং সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে গুম-খুন করেও বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশের গণতন্ত্রাকামী জনগণকে এ ফ্যাসিস্ট সরকার দমাতে পারেনি। তাই ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের বিদায় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

তিনি বলেন, ‘নির্যাতনের মাত্রা যত বাড়বে, সরকারের বিদায়ঘণ্টা ততই ত্বরান্বিত হবে। তাই আমি বলতে চাই, এখনো সময় আছে, জনগণের ভাষা বুঝে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে সংসদ বাতিল করে পদত্যাগ করুন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বলতে চাই, নিরীহ, নিরপরাধ জনগণের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ করুন। সব অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ করে গ্রেপ্তার হওয়া রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। আমি গ্রেপ্তার হওয়া সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করছি। এ ছাড়া আহত নেতাকর্মীর সুস্থতা কামনা করছি। অপকর্মের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আওয়ামী নামধারী প্রশাসনের কতিপয় চিহ্নিত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’