
২০০০ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয়া প্রজন্ম টাই বোধহয় সর্বশেষ প্রজন্ম যারা আবহমান বাংলার খোলামেলা পরিবেশে শৈশ ব কৈশোরের স্বাদ কিছুটা হলেও পেয়েছিল একই পাড়ার সকল ছেলেমেয়েরা যেন সবাই নিজেদেরই ভাই বোন।সকালবেলা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সারি বেঁধে চলে যেতে স্কুলে। বর্ষাকালে হঠাৎ আকাশ কালো করে দৃষ্টান্ত সবার ছাতা ছিল না কাজেই একহাতে বই খাতা আর অন্য হাতে জুতা নিয়ে দৌড়ে বৃষ্টি থেকে বাঁচার ব্যর্থ চেষ্টা করত অবশেষে কাদামাটি মেখে ঘরে ফিরত।
যখন টিনের চলে শিলাবৃষ্টি পড়তো তখন পরিবারের সবাই একসাথে প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো চেয়ে চেয়ে দেখতো একটু বৃষ্টি হতেই কুকুর খাল মিলে দেখা যেত নানা প্রজাতির মাছ সেই মাছ শিকারে ছোট বড় সকলেই আনন্দে মেতে উঠতো।
সূর্য পশ্চিম আকাশে গড়াতেই পাড়ার সকল ছেলে মাঠে উপস্থিত হতো কখনো ব্যাট বল হাতে আবার কখনো ফুটবল নিয়ে মেতে উঠতো আবার সূর্যের লালিমা শেষ হতেই সবাই হাতমুখ ধুয়ে পড়ার টেবিলে বসে যেত যথারীতি লেখাপড়া শেষ করে কালকে ফোন না করে সবাই ঘুমিয়ে যেত সময় সময়ানুবর্তিতার ফলে মেধা শরীর স্বাস্থ্য সবই সমানতালে চলতো।
হই-হুল্লোড়, পুকুরে দাপাদাপি চৈত্র দুপুরে পায়ে পায়ে ঘোরা, হাডুডু লাটিম ঘোরানো গোল্লাছুট রূপকথার আসর… এক অদ্ভুত সরলতায় জড়িয়ে ছিল সে সময়কার শৈশব কৈশোর।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে যা রূপকথার গল্প ছাড়া কিছুই না বৃষ্টি ভেজা দুপুরে ফুটবল নিয়ে কাদামাটি মাখার আনন্দ তারা কি বুঝবে?
বর্তমান সভ্যতার এ অধঃপতন অনেক আগেই হয়েছে। কালো ঘুটঘুটে এক আধার পুরো পৃথিবীকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলেছে। ডিস এন্টেনা হাই স্পিড ইন্টারনেট স্মার্টফোন প্রযুক্তির বিষাক্ত জগতে বর্তমান প্রজন্মকে কোন দিক নির্দেশনা ছাড়াই ঠেলে দেওয়া হয়েছে। শৈশব কৈশরের মৌলিক উপাদান গুলো আজ বিলুপ্তপ্রায়; খেলার মাঠ পুকুর নদী অখন্ড অবসর ভূমিদস্য কলকারখানা বয়লার ফার্ম মাছ চাষীরা কেড়ে নিয়েছে জলাভূমি শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা ও অভিভাবকদের অসুস্থ মানসিকতার ফলে আজ পাল্টে গিয়েছে সমাজের চিত্র।
যে জীবন ছিল ফরিঙ্গার প্রজাপতির পেছনে দৌড়ে বেড়ানোর আর ফাঁদ পেতে শালিক ধরার, যে জীবন ছিল অবসর সময়ে দাবি-দাদির থেকে গল্প শোনার যে জীবন ছিল গল্পের বই পড়ে মিনা রাজু সেজে অভিনয় করার।
সে জীবনে আজ নেমে এলো চতুর্মুখী অভিশাপ না চাওয়া আশা গুলো আজ বাসা বাঁধতে শুরু করল হৃদয় কোটরে সে ধ্বংসের পথ সুগম করতে এগিয়ে এলো প্রযুক্তি যার অপব্যবহারে আজ সমাজ ধ্বংসের দাঁড়প্রান্তে।
মুহাম্মদ ইমরান হোসাইন
শিক্ষার্থী: জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ।