ফসফরাস ও স্মোক বোমার বিষাক্ত পদার্থে গাজায় বেড়েছে গর্ভপাত

প্রাণ ভয়ে উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণে পালিয়ে এসেছেন ফিলিস্তিনি নারী ‘শিরিন’। নিজে বাঁচলেও বাঁচাতে পারেননি গর্ভের সন্তানকে। প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ আর বিস্ফোরণের মধ্যে বিরতিহীন হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন কয়েক কিলোমিটার পথ। গর্ভাবস্থায় মারাত্মক এই শারীরিক পরিশ্রম আর মানসিক চাপে পথেই হয়েছে গর্ভপাত।

ইসরায়েলি আগ্রাসনে গেলো চার মাসে অবরুদ্ধ গাজায় আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে গর্ভপাত। চিকিৎসকরা বলছেন, এর জন্য দায়ী ফসফরাস ও স্মোক বোমা এবং রকেট থেকে নির্গত বিষাক্ত পদার্থ। পাশাপাশি পর্যাপ্ত খাবার-চিকিৎসার অভাব আর প্রচণ্ড মানসিক চাপ তো রয়েছেই। বেড়েছে অন্তঃস্বত্ত্বা নারীর মৃত্যুর ঝুঁকি। একই সাথে টিকা, দুধ এবং ডায়াপারের মতো মৌলিক জিনিসের অভাবে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে শিশু মৃত্যুর হারও।

শিরিন বলেন, পায়ে হেঁটে উত্তর থেকে দক্ষিণে এসেছি। পুরোটি পথ পারপাশ থেকে ভেসে আসছিল গুলি আর বিস্ফোরণের শব্দ। পুরো যাত্রাটি ছিল খুব ক্লান্তিকর। একে আমি অন্তঃস্বত্ত্বা, তার ওপর কয়েকদিন আগেই পায়ে একটা অপারেশন হয়েছে। রাস্তায় এতোটাই আতঙ্কিত ছিলাম যে বুঝতেই পারিনি। পৌঁছানোর পর দেখতে পাই রক্তে ভিজে গেছি। রাস্তায়ই গর্ভপাত হয়েছে আমার।

চিকিৎসকরা বলছেন, গেলো চার মাসে উপত্যকায় আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে গর্ভপাত। গর্ভকালীন সময়ে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রয়োজন হয় বাড়তি যত্নের; যা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না সংঘাতময় এ পরিস্থিতিতে। পর্যাপ্ত খাবার-চিকিৎসার অভাব আর প্রচণ্ড মানসিক চাপই এর মূল কারণ। তাছাড়া ফসফরাস বোমা, স্মোক বোমা এবং রকেট থেকে নির্গত বিষাক্ত পদার্থও অনেকাংশেই দায়ী।

কুয়েত হাসপাতালের পরিচালক জামাল আল হামস বলেন, এই যুদ্ধ নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য এই সময়টা খুবই কঠিন। যুদ্ধে যেসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো নানাভাবে প্রভাব ফেলছে স্বাস্থ্যে। ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু পর থেকে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে গর্ভপাত। প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক গর্ভপাতের রোগী আসেন হাসপাতালে।

ইসরায়েলি আগ্রাসনে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে গাজার প্রায় সব হাসপাতাল। যে ক’টি খোলা রয়েছে তাতেও নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী। বাধ্য হয়ে চেতনানাশকসহ অন্যান্য মৌলিক উপাদান ছাড়াই চলছে সি-সেকশনের মতো গুরুতর অপারেশন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় সন্তান প্রসবের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাসপাতাল ছাড়তে হচ্ছে নারীদের। এমন পরিস্থিতিতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন মা ও শিশু উভয়ই।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় গর্ভপাতের হার বেড়েছে প্রায় ৩০০ শতাংশ। মৃত্যু ঝুঁকিতে আছেন প্রায় ৬০ হাজার গর্ভবতী নারী। টিকা, দুধ এবং ডায়াপারের মতো মৌলিক সরবরাহের অভাবে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে শিশু মৃত্যুর হারও।