ফেলানী হত্যা: ন্যায়বিচার মেলেনি, থামেনি সীমান্ত হত্যাও

কুড়িগ্রাম সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানীর লাশের ছবি আলোড়ন তুলেছিল দেশে-বিদেশে৷ ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল৷ কিন্তু তাদের বিশেষ আদালতে অভিযুক্ত অমিয় ঘোষ দোষ স্বীকার করলেও বেকসুর খালাস পেয়েছেন ৷ পরে ভারতীয় মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) মাধ্যমে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন৷ কয়েক দফা শুনানির দিন পিছিয়ে এখনও আদালতেই ঝুলে আছে পিটিশনটি৷ বিচারিক কাজ বিলম্বিত হলেও শেষ পর্যন্ত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রত্যাশা বিশিষ্টজনদের৷

ফেলানীর বাবা মো. নুরুল ইসলাম  বলেন, ‘‘ফেলানীকে সঙ্গে করে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় আমার চোখের সামনে বিএসএফ আমার মেয়েকে হত্যা করেছে৷ পরে আমি জেনেছি, অমিয় ঘোষ নামে একজন বিএসএফ সদস্য ফেলানীকে গুলি করার কথা স্বীকার করেছে৷ অথচ আদালত তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছে৷ আমি দুই বার ভারতে গিয়ে স্বাক্ষ্য দিয়েছি, ন্যায় বিচার চেয়েছি, অথচ তারা সঠিক বিচার করেনি৷ আমি অমিয় ঘোষের ফাঁসি চাই৷ আমি চাই ভারত সরকার যেন আমার মেয়ের সঠিক বিচারটা করে৷ কারণ আমার মেয়ে হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমি মরলেও আমার আত্মা শান্তি পাবে না৷’’

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতে দিল্লিতে৷ মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে৷ বিয়ে দিতে ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি মেয়েকে সঙ্গে করে আসেন অনন্তপুর সীমান্তে৷ ৭ জানুয়ারি ভোরে দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ী অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের ওপর মই বেয়ে নামার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ফেলানীর৷ দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে তার মরদেহ৷ আলোচিত এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি তার পরিবার৷ 

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘‘ফেলানীর ঘটনাটা মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন৷ আমাদেরও প্রত্যাশা ছিল, ন্যায় বিচার হবে৷ কিন্তু তাদের বিশেষ আদালত অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে খালাস দিয়ে দিয়েছে৷ সীমান্তে এই যে অবৈধ চোরাচালান হয়, এর জন্য তো শুধু এক পক্ষ নয়, উভয় পক্ষের দায় রয়েছে৷ কিন্তু বাংলাদেশের বিজিবি কাউকে গুলি করে মারার খরব আমরা শুনিনি৷ বাংলাদেশের সরকার তো এই হত্যাকাণ্ড বন্ধে অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করে আসছে৷ কিন্তু ভারত সরকার উদ্যোগী না হলে আসলে কিছুই হবে না৷ আমরা প্রত্যাশা করি, দ্রুতই তারা এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন৷’’

ফেলানীর ঝুলে থাকার ছবি প্রচার হওয়ার পর গণমাধ্যমসহ মানবাধিকারকর্মীদের সমালোচনায় ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের বিএসএফ’র বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়৷ ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত৷ বিজিবির আপত্তিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃবিচার শুরু হলেও সেখানে খালাস দেওয়া হয় অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে৷ এরপর ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ভারতীয় মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) মাধ্যমে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন৷ পিটিশনের ভিত্তিতে কয়েক দফায় শুনানির দিন পিছিয়ে এখনও আদালতেই ঝুলে আছে পিটিশনটি৷

ডয়চে ভেলে