বক্ষ বিদারণ ও রহস্য

একদিনের ঘটনা, তিনি তার দুধ ভাইদের সাথে জংগলে বকরি চরাতে গেছেন, এক পর্যায়ে দুধ ভাইয়েরা দৌড়ে এসে তাঁর সম্পর্কে খবর দিল যে, সাদা পোশাকধারী দু’ব্যক্তি আমাদের কুরাইশী ভাইকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তাঁর পেট চিরে ফেলেছে; এখন পেট সেলাই করছে। এ ঘটনা শুনে হালিমা ও তার স্বামী দিশেহারা হয়ে পড়লেন, দ্রুত উভয়ে ঘটনাস্থলে দৌড়ে গেলেন। সেখানে গিয়ে দেখলেন, শিশু মুহাম্মদ এক জায়গায় নীরবে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর পবিত্র চেহারা ফ্যাকাসে বর্ণ। হালিমা বলেন, সঙ্গে সঙ্গে আমি তাঁকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলাম। এরপর তাঁর দুধ পিতাও তাঁকে বুকে তুলে নিলেন। আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কি হয়েছিল ? তখন তিনি পুরো ঘটনা খুলে বললেন 

বক্ষ বিদারণের ঘটনা নবী মুহাম্মদ (সা)-এর জীবনে চারবার ঘটেছিল। প্রথমবার শৈশবকালে, যখন তিনি হালিমা সাদিয়ার তত্ত্বাবধানে ছিলেন। ঐ সময় তাঁর বয়স ছিল চার বছর। একদা তিনি জঙ্গলে ছিলেন, এমন সময় দু’জন ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল ও হযরত মিকাঈল (আ) সাদা পোশাকধারী মানুষের বেশে একটি বরফে ভর্তি স্বর্ণের তশতরি নিয়ে আগমন করেন এবং তাঁর পেট চিরে পবিত্র কলব বের করেন। এরপর তা ফাঁড়েন এবং এর ভেতর থেকে এক অথবা দু’ টুকরা জমাট রক্ত বের করে বললেন, এই টুকরো দু’টি শয়তান প্রভাবিত। এরপর ঐ তশতরির বরফে পেট ও কলব ধৌত করেন। পরে তা যথাস্থানে রেখে সেলাই করে দেন এবং দু’বাহুর মধ্যখানে একটি মোহর অংকিত করে দেন।

দ্বিতীয়বার বক্ষ বিদারণের ঘটনাটি রাসূল (সা)-এর দশ বছর বয়সে ঘটেছিল। 

তৃতীয়বার এ ঘটনা নবুওয়াত লাভের প্রাক্কালে সংঘটিত হয়। 

চতুর্থবার মি’রাজের সময় বক্ষ বিদারণের ঘটনাটি সংঘটিত হয়। 

বক্ষ বিদারণের রহস্য

প্রথমবারে হযরত হালিমা সাদিয়ার গৃহে অবস্থানকালীন সময়ে বক্ষ বিদারণ করে যে কৃষ্ণবর্ণের খণ্ডটি হযরতের দেহ থেকে বের করে ফেলা হয়, সেটা ছিল প্রকৃতপক্ষে পাপ ও অন্যায় প্রবণতার উৎস, যা থেকে তাঁর কলবকে পবিত্র ও মুক্ত করে দেয়া হলো। বস্তুটি বের করার পর খুব সম্ভব এ জন্যেই কলবকে ধৌত করা হয়েছিল, যাতে পাপ প্রবণতার শেষ চিহ্নমাত্র পবিত্র কলবে অবশিষ্ট না থাকে। আর বরফ দিয়ে এজন্যে ধৌত করা হয়েছে যে, পাপের প্রকৃতি উষ্ণ যেমনটি শায়খ আকবর ‘ফুতুহাত’ নামক কিতাবে লিখেছেন, পাপের মূলকে নিভিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বরফ ব্যবহার করা হয়েছে যাতে পাপরূপ উষ্ণতার নাম-নিশানাও অবশিষ্ট না থাকে।

দ্বিতীয়বার বক্ষ বিদারণ হয়েছিল দশ বছর বয়সে। ঐ বয়সে তা এজন্যে করা হয়েছিল, যাতে করে তাঁর পবিত্র কলব অপেক্ষাকৃত স্থূল কর্ম খেল-তামাশার আকর্ষণ থেকে পবিত্র থাকে। কেননা খেল-তামাশা আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করে ফেলে। তৃতীয়বারে নবৃওয়াত প্রাপ্তির প্রাক্কালে যে বক্ষ বিদারণ করা হয়েছিল, তা এজন্যে যে, পবিত্র কলব, যাতে ওহীর রহস্য ও আল্লাহর ইলম গ্রহণ ও বহনে সক্ষম হয়। 

আর চতুর্থবার মি’রাজের সময় বক্ষ বিদারণ করার উদ্দেশ্য ছিল যে, রাসূল (সা)-এর পবিত্র কলব যাতে ফেরেশতা জগতে ভ্রমণ, আল্লাহর তাজাল্লী, আল্লাহর নিদর্শন পর্যবেক্ষণ ও আল্লাহর সরাসরি নির্দেশ হৃদয়ঙ্গম করার ক্ষমতার অধিকারী। হয়। মূলত বার বার বক্ষ বিদারণ হয়েছে আর প্রত্যেক বারেরই লক্ষ্য, তাৎপর্য ও হিকমত আলাদা রয়েছে। বার বার বক্ষ বিদারণের উদ্দেশ্য এটাই ছিল।

সূত্র: সীরাতুল মুস্তফা সা.

সংকলনে: আহমাদ আল গাজী