বঙ্গবন্ধু বিরোধী দলের নেতাদের যথাযথ সম্মান দিয়ে কথা বলতেন: রাষ্ট্রপতি

রাজনীতিতে শিষ্টাচার ও পরমত সহিষ্ণুতার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও পরমত সহিষ্ণুতার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শের যত অমিলই থাকুক না কেন বঙ্গবন্ধু বিরোধী দলের নেতাদের যথাযথ সম্মান দিয়ে কথা বলতেন।

জাতীয় সংসদের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার আয়োজিত ‘বিশেষ অধিবেশনে’ ভাষণ দানকালে একথা বলেন তিনি। এটাই রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংসদে দেয়া আবদুল হামিদের শেষ ভাষণ।

বঙ্গবন্ধু সংসদ কার্যক্রমের পাশাপাশি দলীয় শৃঙ্খলাকে অগ্রাধিকার দিতেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রথম অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘আমি মাননীয় সংসদ সদস্যদের আর একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই যে, কোনো প্রস্তাব আনার আগে পার্টিতে তা আলোচনা করে তারপর উপস্থাপন করবেন। তা না হলে এর দ্বারা পার্টির শৃঙ্খলা নষ্ট হবে।’

রাষ্ট্রপতি সংসদকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হাতে হয়েছিল আমার রাজনীতির হাতেখড়ি ও প্রথম উত্থান আর ১৯৯৬তে দ্বিতীয় উত্থান ঘটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই এবং তার উদ্যোগেই।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অপার স্নেহ আর তার দূরদর্শিতার কারণেই আমি আজকে এই অবস্থানে পৌঁছেছি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে নয় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে আমি বেশি গর্ববোধ করি।’

তিনি ৫০ বছর আগে জাতীয় সংসদের প্রথম সংসদের প্রথম অধিবেশনে সংসদ নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নবনির্বাচিত স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে অভিনন্দন জানিয়ে দেয়া বক্তব্যের স্মৃতিচারণ করেন।

রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন-আপনার কর্তব্যপালনে সংসদের সদস্যবৃন্দ সবসময় আপনার সঙ্গে সহযোগিতা করবেন।’

‘আমি আশা করব, যে ট্র্যাডিশন পার্লামেন্টারি সিস্টেমে আছে, আপনি সেটার প্রতি লক্ষ্য রেখে নিরপেক্ষভাবে আপনার কার্য পরিচালনা করবেন। আমাদের কাছ থেকে আপনি সাহায্য ও সহযোগিতা পাবেন। এই সংসদের মর্যাদা যাতে রক্ষা পায়, সেদিকে আপনি খেয়াল রাখবেন, কারণ আমরা যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছি, সে ইতিহাসে যেন খুঁত না থাকে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু বললেন ‘দুনিয়ার পার্লামেন্টারি কনভেনশনে যে সব নীতিমালা আছে, সেগুলো আমরা মেনে চলতে চাই। সঙ্গে সঙ্গে যেন এমন একটি সংসদীয় পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারি, যাতে দুনিয়া আমাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এখানে কোন দল বা মতের নয়- এখানে এই দেখব যে, প্রত্যেক সদস্য যেন যাঁর যে অধিকার আছে, সে অধিকার ব্যবহার করতে পারেন। সেদিকে আপনিও খেয়াল রাখবেন বলে আমি আশা পোষণ করি।’

তিনি বলেন, ‘এ সম্পর্কে আপনি আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা পাবেন। পার্লামেন্টারি ট্রেডিশন পুরোপুরি ফলো করতে আমরা চেষ্টা করব।’

রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, গণপরিষদে কোনো বিরোধী দল না থাকলেও সংসদ অধিবেশন হতো প্রাণবন্ত। যুক্তিতর্ক ও মতামত উপস্থাপন ছিল খুবই আকর্ষণীয়।

তিনি বলেন, ন্যাপ থেকে নির্বাচিত একমাত্র গণপরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পার্লামেন্টে বক্তৃতা করার সুযোগ চাইলে সবসময়ই সুযোগ পেতেন। স্পিকার মাঝে মধ্যে তাঁকে মাইক দিতে না চাইলেও বঙ্গবন্ধু বলতেন ‘ওকে সুযোগ দেন, বিরোধী পক্ষের কথা আগে শুনতে হবে।’

সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘শুধু যে আমাদের দলীয় সদস্য থেকে কমিটি করব তা নয়, দল-মত নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে, জনগণকে যাতে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী একটা সুষ্ঠু সংবিধান দেওয়া যায়, এই উদ্দেশ্যে সকলের মতামত চাইব, এই সংবিধানে মানবিক অধিকার থাকবে, যে অধিকার মানুষ চিরজীবন ভোগ করতে পারবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শের যত অমিলই থাকুক না কেন বঙ্গবন্ধু বিরোধী দলের নেতাদের যথাযথ সম্মান দিয়ে কথা বলতেন। আসলে রাজনীতিতে শিষ্টাচার ও পরমত সহিষ্ণুতার কোনো বিকল্প নেই।