মুসলিম ধর্মালম্বীদের সমাজিক ঐক্য বাড়াতে রমজান মাসে বিভিন্ন স্থানে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ইফতার আয়োজন করে থাকে। সম্প্রীতি আর মেলবন্ধনে আবদ্ধ হতেই এই ইফতারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে পুরো রমজান মাসেই প্রতিদিনি শত শত মানুষের জন্য এমন আয়োজন অবশ্যই ব্যতিক্রম।
এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন চোখে পড়বে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের পুরাতন অনন্তপুর বাজার জামে মসজিদে। রমজান এলেই এখানে প্রতিদিন ইফতারের সময় মসজিদে বসে রোজাদারদের ‘মিলনমেলা’। এই মসজিদে ইফতার করতে দাগারকুটি, বাবুরচর, চরগুজিমারী, চর হাতিয়াসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল আর প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ থেকে ছুটে আসেন শত শত মুসল্লি। তাদের মধ্যে রয়েছে নানা বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। শ্রেণি বৈষম্য ভুলে সকলে বসেন এক কাতারে। ইফতারের আনন্দ ভাগাভাগি করতে মসজিদের এক ছাদের নিচে বিনামূল্যে মুসল্লিদের জন্য যৌথভাবে ইফতার আয়োজন করে পুরাতন অনন্তপুর বাজার বণিক সমিতি এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি।
এই আয়োজনকে দৃঢ় করতে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে এগিয়ে আসেন স্থানীয় দানশীলরাও। মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন এবং দূর-দূরান্তের রোজাদারদের মুখে হাসি ফোটাতেই এমন উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। আর তাদের আয়োজনেও খুশি সকলেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, আসরের নামাজের পর শুরু হয় ইফতারের প্রস্তুতি। মসজিদের মুসল্লি ও পুরাতন অনন্তপুর বাজার বণিক সমিতি কমিটির সভাপতিসহ স্বেচ্ছাসেবকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন ইফতার তৈরিতে। প্লাস্টিকের বড় বড় গামলায় ইফতার সামগ্রি তৈরি করা হচ্ছে। জায়নামাজে বসে সারিবদ্ধভাবে থাকা রোজাদারদের সামনে প্লেটে করে ইফতার, পানি পৌঁছে দিচ্ছেন সেচ্ছাসেবকরা। এতে থাকে কলা, ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজি, শরবত, আঙুর, খিচুরিসহ নানা পদের খাবার।
ইফতার করতে আসা অনন্তপুরের নুর আলীর সাথে কথা হয়। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন, প্রতিদিনই এই মসজিদে ইফতার করি। সারাদিন যে আয় হয় তা থেকে কোনো রকমে সংসার চলে যায়। ইফতার কীভাবে কিনে খাব? সেজন্য বিনামূল্যে এখানে ইফতার করতে আসি।
হাতিয়া বাজার থেকে আসা রনি বলেন, তিনিও প্রায় দিনই সেখানে ইফতার করেন। শুধু তিনি নন, তার মতো অনেক পথচারী, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা এবং আশপাশের ফুটপাতের দোকানদারাও ওই মসজিদে ইফতার করতে যান। এক সাথে এত মুসল্লির সমাগম তাদেরকে বাড়তি আনন্দ দেয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পুরাতন অনন্তপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভুট্টু বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এমন আয়োজন করে আসছি।বাজারে অনেক অসহায়-দুঃস্থ মানুষ আছেন, যারা সামর্থ্য না থাকায় বাইরে ইফতার করতে চান না। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এবং সবার কথা চিন্তা করেই এমন আয়োজন করছি। তাদেরকে দেখে পরের প্রজন্মও এই ইফতার সংস্কৃতি আয়োজনের ধারা অব্যাহত রাখবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাইখুল ইসলাম নয়া বলেন, তাদের এই আয়োজন খুবই প্রশংসার দাবিদার। এখানে প্রতিদিন এক সাথে তিন শতাধিক মুসল্লি ইফতার করে থাকেন। আগামীতেও এমন আয়োজন চলমান রাখতে সকলে প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।