বড় ধরনের ব্যবসায়িক ক্ষতির কথা স্বীকার করল ম্যাকডোনাল্ডস

প্রায় তিন মাস ধরে অব্যাহতভাবে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। নৃশংস এই আগ্রাসন থেকে হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জা- কোনো কিছুই বাদ যায়নি। এ হামলায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ২২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। এ হামলার শুরুতেই ইসরায়েলি সেনাদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছিল ম্যাকডোনাল্ডসের স্থানীয় শাখা। তাতেই কাল হয়েছে জনপ্রিয় বহুজাতিক ফাস্টফুড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাকডোনাল্ডসের। বিশ্বজুড়ে বয়কটের স্বীকার হয়ে হয়ে লাখ লাখ ডলারের ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছে তারা। খবর বিবিসি।

গত অক্টোবর থেকে হামাসকে নির্মূল করতে গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। সে সময় ম্যাকডোনাল্ডসের ইসরায়েলি শাখা জানায়, তারা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য বিনামূল্যে খাবার দিচ্ছে। তাদের এ ঘোষণায় ক্ষিপ্ত হয় ফিলিস্তিনিপন্থী সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে কুয়েত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে ব্র্যান্ডটির বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়।

প্রতিষ্ঠানটির শাখাগুলো দাবি করতে থাকে, ওই ঘোষণা ইসরায়েলি শাখার নিজেদের ব্যাপার। অন্য শাখাগুলো এ ঘোষণার সঙ্গে একমত নয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, জর্ডান, মিশর, ওমান, সৌদি আরব ও লেবাননের ম্যাকডোনাল্ডের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো গাজায় কিছু অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইসরায়েলি ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অস্বীকার করে বিবৃতি দেয়। তবে তাতে তেমন কাজ হয়নি। জনপ্রিয় চেইন কফিহাউস স্টারবাকসও একই পরিণতির শিকার হয়।

কোনো কোনো দেশে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে, ম্যাকডোনাল্ডসের শাখা খুলে রাখার সময় কমিয়ে দিতে হয়েছে। তারা দাবি করছে, গাজা সংঘাত নিয়ে তারা ‘ভুল তথ্যের’ শিকার। কিন্তু এতেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি। ম্যাকডোনাল্ডসের প্রধান নির্বাহী ক্রিস কেম্পজিনস্কি এক লিঙ্কডইন পোস্টে ব্যবসায়িক ক্ষতির কথা স্বীকার করে এর জন্য হামাস-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ‘ভুল তথ্যকে’ দায়ী করেছেন।

কেম্পজিনস্কি তার বার্তায় লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশসহ বাইরের কিছু বাজার সাম্প্রতিক ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের কারণে উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়িক ক্ষতি অনুভব করছে। ভুল তথ্যের কারণে ম্যাকডোনাল্ডসের মতো ব্র্যান্ডগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি মন্তব্য করেন, এটি হতাশাজনক ও ভিত্তিহীন। কারণ মুসলিম দেশগুলোসহ প্রতিটি দেশেই ম্যাকডোনাল্ডস গর্বের সঙ্গে স্থানীয় মালিক-অপারেটরদের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে।

ম্যাকডোনাল্ডস এ পরিস্থিতির জন্য ফিলিস্তিনপন্থী বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সাংকশনসের (বিডিএস) বিরুদ্ধে ১৩ লাখ ডলারের একটি মামলা দায়ের করে। তবে এরপর পরিস্থিতি আরও বিগড়েছে। কারণ আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাকডোনাল্ডসকে লক্ষ্যবস্তু না করলেও মামলা করার পর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্র্যান্ডটি বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে।

বিডিএস বলেছে, ম্যাকডোনাল্ডসের উচিত ইসরায়েলে নিজের ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা। কিন্তু এটি না করে ম্যাকডোনাল্ডস মালয়েশিয়া এবং এর সৌদি মালিক মালয়েশিয়ায় ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সংহতির কণ্ঠস্বরকে নীরব করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা এটি হতে দিতে পারি না। আসুন আমরা ম্যাকডোনাল্ডসকে দেখিয়ে দেই, তৃণমূল থেকে মানুষ বয়কট করা শুরু করলে সেটির ফল কতদূর গড়াতে পারে।

উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে ম্যাকডোনাল্ডসের ৪০ হাজারেরও বেশি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত।