বিএনপি কার্যালয়ে ক্ষতি ৫১ লাখ টাকার

পয়গাম ডেস্ক :

আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি আক্রমণে প্রায় ৫১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।

আজ রোববার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কথা বলেন।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলা, ভাঙচুর, দ্রব্যাদি ও অর্থ লুণ্ঠন, গ্রেপ্তার এবং কার্যালয়ের আশপাশে বেপরোয়া গুলি ও টিয়ার গ্যাস বর্ষণ, খুন, জখম ও নেতাকর্মীকে গণগ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অফিস থেকে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, হার্ডডিস্ক, নথিপত্র, ব্যাংকের কাগজপত্র, নগদ অর্থ লুট করা প্রকৃতপক্ষে একটি ডাকাতির ঘটনা।

তিনি বলেন, ‘৭ ডিসেম্বর পুলিশি হামলার পর পুলিশের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর ও মালপত্র লুটে অংশ নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় নগদ অর্থসহ ক্ষতি ও লুট হওয়া সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৫০,৮২,৫০০ (পঞ্চাশ লাখ বিরাশি হাজার পাঁচশ) টাকা।’

তিনি বলেন, কোনো অফিস বা গৃহ তল্লাশির সময় মালিকপক্ষ এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সাক্ষী হিসেবে রাখার সাধারণ আইন অগ্রাহ্য করে পুলিশ যা করেছে, তা হানাদার বাহিনীর আচরণকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনায় জড়িত পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।

নামে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়া হয়। সারা দিন জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রহসন করে বিকেলে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনার পর গত কয়েক দিনে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব ঘটনা জনগণের তীব্র ঘৃণা ও অনাস্থার শিকার পতনোন্মুখে সরকারের স্বৈরাচারী কায়দায় টিকে থাকার ব্যর্থ প্রয়াস বলেই দেশবাসী মনে করে।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এত নির্যাতন, বর্বর অত্যাচার, জেল-জুলুম সত্ত্বেও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে দুর্বল করা যায়নি, বরং তা আরও বেগবান হয়েছে। ৭ ডিসেম্বরের পরে ঢাকা বিভাগের সর্বত্র সরকারী দল ও তার পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর নানা বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণ ১০ ডিসেম্বরের জনসমাবেশ সফল করেছে। পরবর্তী প্রতিটি কর্মসূচি সফল করেছে। আমরা সংগ্রামী দেশবাসী ও সাহসী নেতাকর্মীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

পুলিশ তাদের মামলায় বলেছে, বিএনপি নেতাকর্মীরা নাকি ইট-পাথর, বাঁশের লাঠি এবং ককটেল নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করেছে। বিপুল ও মারাত্মক সব আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত কয়েক হাজার পুলিশকে ইট-পাথর, বাঁশের লাঠি ও তাদের ভাষায় ককটেল দিয়ে আক্রমণ করার মতো হাস্যকর অভিযোগ জনগণ বিশ্বাস করে না। পুলিশের এজাহারেই বলা হয়েছে, তারা ৭ ডিসেম্বর বিকেলে মোট ১৭৯টি টিয়ার গ্যাস ও ৪৬০টি শটগানের গুলি ছুড়েছে এবং ৬টি সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করেছে। প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি।

এর বিপরীতে তাদের ওপর আক্রমণকারী বিএনপি নেতাকর্মীর ব্যবহৃত অস্ত্র হিসেবে আলামত দেখানো হয়েছে ফুটপাত ও রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া ৫ বস্তা ইটের টুকরা (যা শহরের যে কোনো সড়ক থেকে যে কোনো সময় সংগ্রহ করা যায়), ৮০টি বাঁশের লাঠি (যা শহরের বহু স্থানে প্রকাশ্যে বিক্রয়ের জন্য রাখা হয়) ও লাল স্কচটেপে মোড়ানো কথিত ককটেলের ভাঙা অংশ (যা ব্যবহৃত টিয়ার গ্যাসের শেল কিংবা পথের আবর্জনারও অংশ হতে পারে)।

এমন অসম যুদ্ধের বিবরণ ছোটদের গল্প কিংবা স্বৈরাচারী শাসকদের প্রেস নোটেই শুধু দেখা যায়। তথাকথিত ক্রসফায়ারের গল্পের মতোই এসব গল্প এখন শুধুই কৌতুকের খোরাক এবং অক্ষমের আর্তনাদ।

তিনি বলেন, দলের মহাসচিবকে অফিসের নিচে বসিয়ে রেখে এবং দলের অন্যান্য নেতাকে কয়েকটি কক্ষে আটকে রেখে অসংখ্য টিয়ার গ্যাস, গুলি, সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করে গোটা এলাকাকে রণক্ষেত্র বানিয়ে পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা ও সদস্য দলীয় কর্মীর মতো প্রতিপক্ষকে হেয় ও বিপদাপন্ন করার জন্য সাদা ব্যাগে করে নিজেরাই ককটেল নিয়ে মহাসচিবের ও জাসাস কার্যালয়ের টয়লেটে মোট ১৫টি ককটেল রেখে তা উদ্ধারের যে নাটক করেছে, মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়েছে। একই সঙ্গে আমরা বিএনপির
সংগ্রামী মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাসসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীর অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও বানোয়াট মামলাসমূহ প্রত্যাহারের দাবি করছি।

তিনি আরও বলেন, ৭ ডিসেম্বরের নারকীয় ঘটনার যারা নিন্দা জানিয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন, নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং বিএনপি কার্যালয়ে এসে আমাদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন, তাদের সকলকে গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘৃণ্য ঘটনা সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে যারা জাতির সামনে তুলে ধরেছেন, তাদেরও দলের পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।