বিবর্তনবাদ ও ইতরদেরকে বানর বানানো

বিজ্ঞানের যে দাবিগুলো কোরআনের সঙ্গে মিলে যায়, তা খুব স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয়৷ বিজ্ঞান এখানে বিনাবাধায় সফলভাবে অগ্রসর হতে থাকে৷ 

আর বিজ্ঞানের যে দাবিগুলো কোরআনের সঙ্গে বিরোধ করে, তা কখনো চূড়ান্তে পৌঁছে না৷ সবসময় জটলা, প্যাঁচ এবং ভুল ধাঁধায় ঘুরতে থাকে৷ জ্ঞানীদের দরবারে মতটি ঐক্যমত লাভ করে না৷ স্রোতের ওপরের ফেনার মতো অসার লাগে৷ যখনি স্রোতের পানি ফেনার আবরণ ছেড়ে খোলা নদীতে পড়ে, তখনি সব সত্য সূর্যের আলোতে চিকচিক করে৷ আর এ কথা সত্যি যে— ভুল পথে বিজ্ঞান কেন, পৃথিবীর কোনো কিছুই বেশিদিন টিকে থাকে না৷ জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথ হতে হয় নিৰ্বিঘ্ন সরল৷ ফলে কোনো দাবিই কোরআনের সঙ্গে বিরোধ করে বেশিদূর চলতে পারে না, সকলের অখণ্ড বিশ্বাস পায় না৷

বিবর্তনবাদ নিয়ে বিজ্ঞানী Duane Gish বলেন: প্রাণী থেকে মানুষের বিবর্তন হওয়া দাৰ্শনিকের কল্পকাহিনী৷ বিজ্ঞানবিচ্ছিন্ন একটি মত৷ 

জীববিজ্ঞানের বিশিষ্ট পণ্ডিত R.B. Goldschimdt বলেন: বিবর্তনবাদে বিপক্ষের সকল সন্দেহকে ভাঙতে পারে এমন কোনো শক্তিশালী সাক্ষ খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ ফলে মতটি কেবল অন্তঃসারশূন্য ধারণাপ্রসূত৷

কিছু মানুষ আলোচনায় থাকতে চায়৷ যে কোনো বাহানায় ইসলামের বিপরীতে দাঁড়াতে চায়৷ এই হিনমানসিকতা থেকেই তারা বিবর্তনবাদের মতো খোঁড়া মত নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে৷ অথচ Jeremy Rifkin একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেন: জীববিজ্ঞান ও (Zoology) প্রাণীবিজ্ঞাননের বড়ো বড়ো পণ্ডিতরা বিবর্তনবাদের অসারতার মুখোষ উন্মোচন করেছেন৷ যেমন— C.H. Waddington, Pierre-Paul Grasse, Stephen J. Gold.

সুরা আনআমের ৩৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন: “বিচরণকারী সকল প্রাণী এবং দুডানায় ভর করে উড়া পাখিরা (কোনো কোনো গুণে) তোমাদের মতো৷” 

উক্ত আয়াত বলছে— প্রাণীরা আমাদের সাদৃশ্য৷ এদিকে Lamarck, Malthas, Mandle, Darwin, Oparin, Monod বিজ্ঞানীরাও প্রাণীদের সাথে মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্যের সাযুজ্যকে অবলম্বন করে বিবৰ্তনবাদের কথা বলছে৷ যেটা নিছক কিছু বৈশিষ্ট্যের মিল, সেটাকে অবলম্বন করে কী করে বিবর্তনের কথা বলে— এটাই অবাক লাগছে৷ আর সাদৃশ্যের দাবি তো কোরআনের৷ বিজ্ঞানীদের উদভাবনে মূলত কোরআনের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে৷ কিন্তু সাদৃশ্যের যুক্তিতে বিবর্তনবাদের মত উগড়ে দেওয়া ধৃষ্টতা৷ 

যে সব ক্ষেত্রে প্রাণীর সাথে মানুষের মিল, বিজ্ঞানীদের ভাষায় তা হচ্ছে—

(১) Biological Similarities (জীব বা প্রাণিগত সাদৃশ্য)

(২) Anatomical Similarities (গঠনগত সাদৃশ্য)

(৩) Biochemical Similarities (জৈব রাসায়নিক মিল)

(৪) Genetic Similarities (জেনেটিক সাযুজ্য)

বিজ্ঞানীরা গভীর সাধনা করে যে সাদৃশ্য-সাযুজ্য খুঁজে পেয়েছে, তা কোরআন চৌদ্দশত বছর পূৰ্বে বলে দিয়েছে৷ কিন্তু এতটুকু মিলের দ্বারা কোরআন বিবর্তনবাদকে সমৰ্থন করে না৷ এবং এটা সকল বিজ্ঞানীর স্বতঃস্ফূৰ্ত মতও নয়৷ এমনকি এই ভ্রান্ত মতের পক্ষে সমৰ্থনকারী বিজ্ঞানীরাও এখন পৰ্যন্ত স্পষ্ট প্রমাণ দিতে পারেনি৷ প্রমাণ না দিতে পারার এই ব্যৰ্থতাকে Missing Links বলে৷ তারা কেবল দাবি করেছে৷ দাবির পক্ষে বাস্তব নজির দিতে পারেনি৷

বিজ্ঞানের দাবির উৎস মানবীয় বিবেক-বুদ্ধি৷ কোরআনের ভাষ্য সৰ্বজ্ঞানের একক অধিকারী মহান রবের৷ যে অভিজ্ঞতা ও বিজ্ঞতার আলোকে বিজ্ঞানী একটি মত দাঁড় করায়, পরবৰ্তীতে আরো বিরাট অভিজ্ঞতা ও বিজ্ঞতার সূত্রে তা ভুল প্রমাণিত হওয়ার সম্ভনা থাকে এবং ভুল প্রমাণিত হয়ও৷ কিন্তু কোরআনের দাবি ও মত অকাট্য-অবিকল্প৷ কখনো কোনো কালে ভুল হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা কোরআনে নেই৷

কোন মানুষ কখন কীভাবে প্রাণীর খোলস ছেড়ে নিৰ্মোক হয়েছে, তা আজও নজিরবিহীন৷ যদি বিবর্তনবাদই সত্যি হয়, তবে অন্তত একটি উদাহরণ তো থাকা চাই৷ কিন্তু মানবাতিহাসে একটিও নজির নেই৷ বিবর্তনবাদিরা বলে: প্রাণী থেকে মানুষ হতে সহস্র বছর লেগে যায়৷ তাই প্রমাণ দেওয়া অসম্ভব৷ অথচ ১৯৬৫ সালে আইসল্যান্ডের নিকটে একটি ভূমিকম্প হয়৷ তখন সমুদ্রে Surtsey নামে একটি দ্বীপ জেগে ওঠে৷ আশ্চৰ্যের বিষয় হচ্ছে, একবছরের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড়ে দ্বীপটি ছেয়ে যায়৷ এখন পৰ্যন্ত কোনো বিবৰ্তনবাদি ধরতে পারেনি, এতো অল্প সময়ের এতো পোকা সেখানে কীভাবে এলো! আরো আশ্চৰ্যের কথা— বিবর্তনে যদি যুগ যুগ লাগে, তবে একবছরে সেখানে এতো প্রাণীর বিবর্তন কীভাবে ঘটে?

ইহুদি এবং খ্রিষ্টানদের প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানীরা বিবর্তনবাদকে মানেনি৷ কিন্তু তারা এটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্থলে নীরব থাকছে৷ ষোড়শ শতাব্দির বিপৰ্যয়ে তারা এমন নিশ্চুপ ভণ্ডামিতে মেতে ওঠে৷ অথচ বিবৰ্তনবাদের অসাড়তা এবং কল্পকাহিনী দিবাসূৰ্যের ন্যায় স্পষ্ট৷ এককথায় বিজ্ঞানের নামে একজন ব্যক্তির বিচ্ছিন্ন একটি মতকে প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান দাবি করা স্পষ্ট অন্যায়৷ 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে মানুষের উৎস কী? প্রশ্নটির সরল উত্তর আছে সুরা ত্বিনের চার নম্বর আয়াতে৷ আয়াতের সারমৰ্ম—

মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অনবদ্য আঙ্গিকে৷ সম্পূৰ্ণ ভিন্ন; বিরল; সুন্দর করে৷ সৰ্বোত্তম সাঁচে৷ সুন্দর অবয়বে; সুগঠিত কাঠামোতে৷ কোনো প্রাণী থেকে মানুষকে সৃষ্টি করা হলে এটা নিশ্চই Special Creation তথা অনবদ্য সৃষ্টি হবে না৷ বরং এরূপ চিন্তা কেমন যেন ঘেন্না ঘেন্না লাগে…

পরিশেষে বলবো: ইসলাম মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান দেয়৷ বানরের মতো ইতর প্রাণীর বিবর্তনে মানুষের সৃষ্টি বলে মানুষকে অপমানিত করে না৷ উপরন্তু আল্লাহ ইতর শ্রেণীর ইহুদিদেরকে বানরে পরিবর্তন করেছিলেন৷ বানর থেকে মানুষ বানাননি৷

ফখরুল হাসান

শিক্ষক, হামিউস সুন্নাহ, মিরপুর-১১