বিলকিস বানোর ধর্ষক এখন বিজেপি নেতার সঙ্গে মঞ্চে

ভারতের গুজরাট রাজ্যে ২০০২ সালে দাঙ্গার সময় দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বিলকিস বানো। তার এক ধর্ষককে ক্ষমতাসীন বিজেপির একজন সংসদ সদস্য ও বিধায়কের সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গেছে। গত শনিবার রাজ্যের দাহোদ জেলার কারমাদি গ্রামে সরকারি একটি অনুষ্ঠানে তারা অংশ নেন।
ওই ধর্ষকের নাম শৈলেশ চিমানলাল ভাট। অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, দাহোদের সংসদ সদস্য যশোবন্ত সিং ভাভোর ও তার ভাই লিমখেদার বিধায়ক শৈলেশ ভাভোরের সঙ্গে একই মঞ্চে রয়েছেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। তিনজনকে একসঙ্গে ছবির জন্য পোজ দিতে ও পূজায় অংশ নিতে দেখা যায়।
এসব ছবি ও ভিডিওর কয়েকটি নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছেন সংসদ সদস্য যশোবন্ত সিং ও বিধায়ক শৈলেশ ভাভোর। এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলেও তাঁদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
২০০২ সালে দাঙ্গার সময় বিলকিস বানোর তিন বছরের মেয়েসহ তার পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যা করা হয়। হত্যাকা- ঘটে বিলকিসের সামনেই। তখন বিলকিসের বয়স ছিল ২১। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। এ ধর্ষকদের মধ্যে একজন শৈলেশ চিমানলাল ভাট।
এদিকে তাঁকে ধর্ষণে সাজাপ্রাপ্ত ১১ আসামিকে গুজরাট সরকারের আগাম মুক্তির বিরোধিতায় সুপ্রিম কোর্ট মামলা করেছিলেন বিলকিস বানো। ওই মামলায় কেন্দ্র ও গুজরাট সরকারের জবাবদিহি চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, আসামিদের আগাম মুক্তির পদক্ষেপ ‘ভয়াবহ’ ঘটনা। ১৮ এপ্রিল এ মামলা শুনানি হবে।
বিচারপতি কে এম জোসেফ এবং বিভি নাগারতœা বেঞ্চ কেন্দ্র এবং গুজরাট সরকারকে আসামিদের আগাম মুক্তির বিষয়ক যাবতীয় নথি আদালতে উপস্থাপন করতে বলেছে। গত আগস্টে কেন্দ্রের নির্দেশে ধর্ষণ ও খুনে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে আগাম মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মোট ৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি জনস্বার্থ মামলা। বাকি একটি মামলা করেছেন খোদ বিলকিস।
গতকাল এ মামলার শুনানির জন্য বিচারপতিদের নতুন বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। এর আগে শীর্ষ আদালতের এক বিচারপতি বিলকিস মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। নতুন বিচারপতিদের বেঞ্চ মামলা গ্রহণ করেই কেন্দ্র এবং গুজরাট সরকারের কাছে আসামিদের মুক্তির বিষয়ে জবাবদিহি চেয়ে নোটিস পাঠাল।
২০০২ সালে গোধরা হিংসার সময়ে অন্ত¡সত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ ও তার পরিবারের সদস্যদের খুনের অভিযোগে ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট গুজরাট সরকারের নির্দেশে ধর্ষকদের অকাল মুক্তি দেওয়া হয়। তাদের কার্যত বীরের সম্মান দিয়ে বরণ করা হয়েছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে। এরপর দেশজুড়ে অসন্তোষের হাওয়া বইতে শুরু করে। গুজরাট সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন বিলকিস বানো।গত ডিসেম্বরে তার মামলা খারিজ হলেও এবার নতুন করে শুনানির নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।