বিলুপ্তির পথে যে ১৫ ভাষা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

 

পৃথিবী থেকে ভাষা বিলুপ্তি নতুন কোনো ঘটনা নয়। এর আগেও বহু ভাষা বিলুপ্ত হয়েছে। অনেক ভাষা হয়তো আমাদের জানার আগেই হারিয়ে গেছে। ভাষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীতে এখন অন্তত ১৫টি ভাষা সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে এরা। এমন কয়েকটি ভাষা সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু তথ্য জেনে নিই।

রেসিগারো
রেসিগারো একটি আমাজনীয় ভাষা। এ ভাষায় কথা বলা রোসা আন্দ্রেদ ওকাগান ২০১৬ সালে ৬৭ বছর বয়সে মারা গেছেন। এখন তাঁর ভাই পাবলো এই ভাষায় কথা বলেন। ভাষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পৃথিবীর অন্যতম বিপন্ন একটি ভাষা। 

ছুলিম
তুর্কি অঞ্চলের ভাষা ছুলিম। রাশিয়ার ২০১০ সালের আদমশুমারি থেকে জানা যায়, এ ভাষায় এখন মাত্র ৪৪ জন মানুষ কথা বলতে পারেন। তাঁদের বেশির ভাগই সাইবেরিয়ার গ্রামগুলোতে বাস করেন। ১৯৫৯ সালে এই ভাষাভাষী মানুষদের সরকার নৃগোষ্ঠীর তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল। ১৯৯৯ সালে তাঁরা আবার স্বতন্ত্র নৃগোষ্ঠীর মর্যাদা ফিরে পান। 

মুদবুরা
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীরা এ ভাষায় কথা বলেন। অস্ট্রেলিয়ার ২০০৬ সালের আদমশুমারি বলছে, ওই এলাকায় ৪৭ জন মুদবুরা ভাষায় কথা বলতে পারতেন। তবে ২০১৬ সালের আরেক জরিপ থেকে জানা যায়, সংখ্যাটি ৯২ জনে উন্নীত হয়েছে। 

পাটউইন
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার নেটিভ আমেরিকানদের কথ্য ছিল পাটউইন। ২০১১ সালের এক জরিপ থেকে জানা যায়, ওই ভাষায় কথা বলতে পারা একজন ব্যক্তি আর অবশিষ্ট রয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে ভাষাটি শেখার চেষ্টা করছেন অন্যরা। ভাষাটিকে বাঁচিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা হিসেবে, কয়েকটি বিদ্যালয়ে পাটউইন ভাষা শেখার ক্লাস চালু করা হয়েছে।

আইনু
জাপানের হোক্কাইদো দ্বীপের আদিবাসীরা এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষা ও ঐতিহ্যকে নিষিদ্ধ করার জন্য উনিশ শতকের শেষের দিকে আইন হয়েছিল। এ জন্য ওই আদিবাসীরা জাপানি সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যায়। এরপরও কেউ কেউ এ ভাষার চর্চা করতেন। ১৯৮০–এর দশকে ১৫ জনকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল যারা আইনু ভাষায় কথা বলতেন। তাঁদের কাছ থেকে অন্যরা এখন শিখছেন। ভাষাটি বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। 

চামিকুরো
পেরুতে বসবাসকারী একটি আদিবাসী গোষ্ঠীর নাম চামিকুরো। তাঁদের ভাষার নামও এটি। ২০০৪ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সেখানে মাত্র দুজন মানুষ এই ভাষায় কথা বলতে পারতেন। তবে গবেষকেরা চার বছর পরে সেখানে আরও আটজনকে খুঁজে পেয়েছিলেন যারা চামিকুরো ভাষায় কথা বলেন। 

ভোদ
এই ভাষাটির আরও কয়েকটি নাম রয়েছে। যেমন— ভোতিক, ভোত, ভোতিয়ান ও ভোতিশ। এই ভাষাভাষী মানুষদের ১৯৪৩ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) থেকে ফিনল্যান্ডে নির্বাসিত করা হয়। এখনো গুটিকয়েক মানুষ যারা এই ভাষায় কথা বলেন, তাঁরা রাশিয়া ও এস্তোনিয়া সীমান্তে বাস করেন। ২০১০ সালে ৬৮ জন স্থানীয় মানুষ ভোদ ভাষায় কথা বলতেন। পরে ২০১৭ সালে জানা যায়, সেখানে এমন আর মাত্র আট জন অবশিষ্ট রয়েছেন। গত কয়েক বছরের তাঁদের অবস্থা কী সেটি আর জানা সম্ভব হয়নি।

চেমেহুয়েভি
ইউরোপীয়রা আমেরিকায় আসার আগে ৫০০ থেকে ৮০০ নেটিভ আমেরিকান চেমেহুয়েভি ভাষায় কথা বলতেন। ধারণা করা হয়, ভাষাটির উদ্ভব যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ–পশ্চিমে মোহাভে মরুভূমিতে। এখন এই ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৪ জন। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার কলোরাডোতে তিন থেকে পাঁচজন মানুষকে পাওয়া গিয়েছিল যারা চেমেহুয়েভি ভাষায় কথা বলতেন। 

আচজ জুয়ায়
বলিভিয়ার কয়েকটি গ্রামে এখনো কিছু মানুষ পাওয়া যায় যারা আচজ জুয়ায় ভাষায় কথা বলে। সাধারণত পরিবারের সদস্যরাই পরের প্রজন্মকে এই ভাষা শেখায়। তবে ব্যাপকভাবে এই ভাষার চর্চা না থাকায় ঠিক কতজন মানুষ এখন ভাষাটি চর্চা করেন তা জানা যায় না। ভাষা বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, কমপক্ষে ২০০ মানুষ এখনো আচজ জুয়ায় কথা বলেন। 

পাওনি
যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমায় পাওনি জাতির অন্তত ৩ হাজার মানুষ বাস করেন। তাঁদের মধ্যে দশজনেরও কম মানুষ এই গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পাওনি ভাষায় কথা বলেন। স্থানীয়ভাবে পাঠ্যপুস্তকে এ ভাষা লিপিবদ্ধ করে ভাষাটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

ডান্সার
ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া দ্বীপের কিছু মানুষ এখনো বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সময় ডান্সার ভাষা ব্যবহার করেন। এটি একটি প্রাচীন ভাষা। ২০১১ সালে মাত্র তিনজন মানুষ এই ভাষায় কথা বলতে পারতেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভাষাবিদেরা এ ভাষাকে বিপন্ন ভাষা হিসেবে নথিভুক্ত করেছেন। 

নগান গিকুরুনগুয়ার
অস্ট্রেলিয়ার কিছু আদিবাসী জনগোষ্ঠী নগান গিকুরুনগুয়ার ভাষায় কথা বলেন। সংখ্যাটি এতই কম যে ভাষাবিদেরা এটিকে বিপন্ন ভাষা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন। ২০১৬ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, মাত্র ২৬ জন মানুষ এ ভাষায় কথা বলতে পারতেন।
 
পাজেহ
পাজেহ ভাষায় কথা বলতে পারা তাইওয়ানের সর্বশেষ ব্যক্তি প্যান জিন-ইউ ২০১০ সালে মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। মৃত্যুর আগে তিনি অন্তত ২০০ শিক্ষার্থীকে পাজেহ ভাষা শিখিয়েছিলেন। তাঁরাই এখন ভাষাটিকে টিকিয়ে রেখেছেন।

আলাওয়া
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীরা আলাওয়া ভাষায় কথা বলেন। ২০১৬ সালের আদমশুমারি থেকে জানা গেছে, মাত্র চারজন মানুষ এই ভাষায় কথা বলতে পারেন। তাঁরা সবাই নারী। 

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট, ইউনেসকো, উইকিপিডিয়া